বাসস
  ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:০৬

পুলিশের কনস্টেবল হত্যার প্রধান আসামি আমান উল্লাহ আমান গ্রেফতার

ঢাকা, ৭ নভেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) শাখা গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকালে পুলিশের উপর বর্বরোচিত হামলায় পুলিশের কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মো. আমান উল্লাহ আমানকে গ্রেফতার করেছে।
সিটিটিসি’র একটি টিম সোমবার বিকেলে রাজধানীর  মহাখালী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তার উপর হতে তাকে গ্রেফতার করে।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এসব কথা বলেন।
সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রাজধানীর নয়া পল্টনে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল, পুলিশের ওপর হামলা করে পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে। প্রয়োজনে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিল তারা। তারা চেয়েছিল যেন একটি নতুন ইস্যু সৃষ্টি হয়। এরই ভিত্তিতে সেদিন নয়া পল্টনে সংঘর্ষে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজকে হত্যা করা হয়।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘২৮ অক্টোবর বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে আমান তার অনুসারীদের নিয়ে নয়া পল্টনে সমাবেশের মঞ্চের পাশে অবস্থান নেয়। মঞ্চে অবস্থিত বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল, পুলিশের ওপর হামলার মাধ্যমে পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়া।’
কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা পেয়ে হামলা করা হয় দাবি করে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘কাকরাইল মোড়ে বিএনপির কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করলে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা পুলিশের ওপর হামলার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ পেয়ে নয়া পল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের পাশে ভিক্টরি হোটেলের পাশের গলি দিয়ে ছাত্রদলের একটি বড় অংশ নিয়ে পুলিশের ওপরে হামলা করার জন্য অগ্রসর হয় আমান। সমাবেশ কেন্দ্রিক দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে আগে থেকেই তাদের জানা ছিল। সে দলবল নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘পল্টন টাওয়ারের সামনে এসে দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকের দিকে যায়। অপর অংশ আমানের নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের আগের প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয়। বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পর ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। ওই পুলিশ সদস্যদের সাহায্য করার জন্য আগের প্রান্তে পুলিশ সদস্যরা বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিকে আসে। এ সময় আমানের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় পশ্চিম দিকে আসা পুলিশ দলটির ওপর হামলা করা হয়।
জানমাল রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পুলিশ অস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকে এবং সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের এই অংশটি আমানের নেতৃত্বে পুলিশদের ওপরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদলের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে।’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের একটি বড় অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব দিকে অবস্থিত ডিআর টাওয়ার ও আশেপাশের স্থাপনায় অবস্থান নেয়। এ অবস্থায় আমানের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা পুলিশ সদস্যদের হামলা করার জন্য ক্রমাগত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। বিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে পারভেজ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। এ সময় হত্যার উদ্দেশে লাঠি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করা হয় তাকে।’
পারভেজের নিথর দেহের ওপর আঘাত করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তার নিথর দেহ রাস্তায় পড়ে থাকে। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। বিক্ষোভকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার নিথর দেহের ওপর বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর আমান তার অনুসারীদের নিয়ে বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিক দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।’