শিরোনাম
ঢাকা, ২০ আগস্ট, ২০২৪ (বাসস) : ‘ছাত্র-জনতার’ আন্দোলনে নিহতদের হুকুমদাতা হিসেবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ হুকুম দাতাদের বিচার দেখে মরতে চান নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
তারা বলেন, ‘২০২৪ সালের আন্দোলনে খুনি হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আমার সন্তানদের হত্যা করা হয়। আমরা এই হত্যার বিচার চাই, হত্যাকারিদের বিচার হোক। আমরা আমাদের জীবদ্দশায় এই বিচার দেখে যেতে চাই।’
আজ মঙ্গলাবর বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র জনতার জুলাই অভ্যুত্থান এবং ১৫ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাতে নিহত শহীদদের স্মরণে আয়োজিত সভায় এই দাবী জানান নিহতদের পরিবারবর্গ।
‘যাদের প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরাচার মুক্ত হলো বাংলাদেশ, আমরা তোমাদের ভুলবো না’ শীর্ষক ব্যানারে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের শ্রদ্ধা জনাতে ছাত্র শিক্ষক লেখক সাংবাদিক ও শিল্পী সমাজ এই স্মরণ সভার আয়োজন করে।
সভার শুরুতে ছাত্র জনতার জুলাই আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়। পরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর আন্দোলনে নিহতের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
স্মরণ সভার শুরুতেই বক্তব্য রাখেন শহীদ ইয়ামিনের পিতা মো. মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমার সাথে যা হয়েছে, যে ভাবে আমার ছেলকে হত্যা করা হয়েছে, কোন সভ্য সমাজে এমন হতে পারে না। তাকে যারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তাদের বিচারের মাধ্যমে কঠিন শাস্তি চাই।’
মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমি আমার জীবন দশায় সেই বিচার দেখে যেতে চাই। আমি আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। তারা যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জীবন দিয়েছে তা যেন সফল হয়- আমি সেই প্রত্যাশা করি।’
শহীদ বাহাদুর হোসেন মনিরের পিতা আবু জাফর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি সন্তান হারিয়েছি তাতে কোন সমস্যা নেই, আমি চাই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। দেশের মানুষ যদি শান্তিতে থাকে তবেই আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।’
আরেক শহীদ দীন ইসলামের পিতা শাহ আলম ব্যাপারী বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদে মিনারের স্মরণ সভা এলাকায় এক আবেক ঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকারিদের বিচার হোক, আমি আমার জীবন দশায় ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।’
স্মরণ সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, সেলিমা রহমান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জমান দুদু ও ড. আসাদুজ্জমান রিপন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব উপস্থিত ছিলেন।
স্মরণ সভায় ‘সব মনে রাখা হবে’ কবিতা আবৃত্তি করেন দিপক গোস্বামী। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ড. জাহিদুর রহমান, প্রকাশক ও লেখক সাঈদ বারী, গীতি কবি রফিকুল ইসলাম, শহীদ রেজাউল করিমের পিতা আলমগীর মীর, লিটন উদ্দিনের ভাই রিপন উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেন সাঈদের ভাই রবিউল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের বিগত ১৫ বছরে শাসনামলে সারাদেশে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৩ জন স্মরণ সভায় কান্না জড়িত কন্ঠে তাদের স্বজন হারানোর কথা বর্ণনা করেন এবং খুনি হাসিনার বিচার চান। এদের মধ্য রয়েছেন গুম হওয়া বিএনপি নেতা ও ঢাকা সিটির সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলমের মেয়ে মাহফুজা চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম সুমনের বোন তুলি ও ওমর ফারুকের ছেলে ইমন ওমর ফারুক।
মাহফুজা চৌধুরী বলেন, ‘আমি ১৪ বছর আগে আমার বাবাকে হারিয়েছি, এখন আমার বাবাকে ফেরত চাই, খুনি হাসিনার বিচার চাই।’
এই স্মরণ সভা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনসহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিগত ১৫ বছরের বিভিন্ন সময় নিহত ও গুম হওয়া ব্যাক্তিদের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন লাগানো হয়।