খাগড়াছড়িতে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের 

বাসস
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৫

খাগড়াছড়ি, ৪ জানুয়ারি, ২০২৫(বাসস) : জেলার প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। মধ্যবর্তী ফসল, উৎপাদন খরচ স্বল্প এবং ভোজ্যতেল হিসেবে ভোক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরিষা চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

যার ফলে পাহাড়ী এ জেলায় সরিষার চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। আবাদি-অনাবাদি জমিতে কৃষকরা এখন সরিষা চাষ করছেন। কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর উৎপাদনও বেশি হবে বিগত বছরগুলোর চেয়ে। তবে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি এবং প্রশিক্ষণ না থাকায় এ জেলার চাষিরা সরিষা ক্ষেত থেকে সরিষার পাশাপাশি মধু উৎপাদন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ বলছে এ ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা রয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলায় এ বছর সরিষা চাষে সাফল্য অর্জন করেছেন কৃষকেরা। তাদের অভিমত, ধানের তুলনায় সরিষায় লাভ বেশি। বিগত বছরগুলো থেকে চলতি মৌসুমে বেড়েছে সরিষার আবাদ। এ সময়ে খাগড়াছড়ির  বেশ কিছু এলাকার দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। যতদূর চোখ যায় দু-একটি বাড়ি বাকি হলুদ আর হলুদ-এ যেন হলুদের রাজ্য। প্রতিটি সরিষা ক্ষেতে পৌষের কনকনে হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। সূর্যের কিরণ প্রতিফলিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই সরিষা ফুলের সমারোহে হেসে ওঠে চারদিক। যেন হলুদ শাড়ি বিছিয়ে নতুন করে সেজেছে ফসলের মাঠ। তাই ফলন এবং লাভের আশায় বুক বেঁধেছে এ অঞ্চলের চাষীরা। অন্যদিকে এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে অনেকে। কৃষককেরা জানিয়েছেন যারা বৃষ্টির আগে চারা রোপণ করেছেন তাদের ফলন তেমন ভালো হয়নি, আর যারা বৃষ্টির পরে রোপণ করেছেন তাদের গুলো ভালো হয়েছে। তবে গত বছর থেকে এ বছর অনেকের ভালো ফলন ভালো হয়েছে। তারা বলেছেন কৃষি বিভাগ থেকে যদি সহযোগিতা পাওয়া যায় তা হলে কৃষককেরা সরিষা চাষে আরো বেশী আগ্রহী হবেন এবং ব্যাপক ভাবে সরিষা চাষ হবে খাগড়াছড়িতে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, জেলায় এবার  ৫শ ৫০ হেক্টর  জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। যার লক্ষ্য মাত্রাও ছিলো ৫শ ৫০ হেক্টর। এর মধ্যে বারি-১৪, বারি-১৮ এবং বিনা সরিষা-৯ জাতের সরিষার চাষ আবাদ হয়েছে। তবে আগামী বছর সঠিক সময়ে বীজ সর্বরাহ করতে পারলে এ লক্ষ্য মাত্রা এক হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে খাগড়াছড়িতে এবার প্রতি হেক্টর থেকে ১ দশমিক ৬০ টন হারে এ বছর মোট সরিষা উৎপাদিত হয়েছে ৮ হাজার ৮ শত ৮০ টন সরিষা। এ ছাড়া-আগামী ২০২৫-২৬ মৌসুমের মধ্যে জেলায় ৫০ ভাগ অধিক জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এর উপ-পরিচালক, মোহাম্মদ  বাছিরুল আলম, জানান সরিষা চাষ শুরুর সময় (অক্টোবর-নভেম্বর) বৃষ্টি থাকায় চাষাবাদে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করা গেলে সরিষার তেলের চাহিদা পূরণে আমরা আরও বেশি ভূমিকা পালন করতে পারবো। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ বছর সরিষা আবাদে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ১০০ বিঘা জমিতে। কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাজস্ব বিভাগের প্রকল্পে প্রদর্শনী প্লট করা হয় ১০০ বিঘা। এছাড়া বিগত বছরে যারা প্রদর্শনী প্লট করেছে তারা এবার ফলোআপ আবাদ করেছে দুই শত বিঘা। মোহাম্মদ  বাছিরুল আলম আরো বলেন, ভবিষ্যতে আরও বেশি জমিতে চাষীরা সরিষা চাষ করতে পারলে অচিরেই সরিষার জমিতে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে পরাগায়নের মাধ্যমে ফলন বাড়ানো যাবে এবং মধু আহরণ করা যাবে। জমিতে সরিষার চাষ করলে সরিষার ফুল ও সরিষা ঝরে পড়ে মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এটি পরবর্তীতে রোরো আবাদে অধিক ফলন পেতে সার হিসেবে সাহায্য করে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুক্তা চাকমা বলেন, সদর উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে ৪৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চাষাবাদ বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেড়েছে। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকার সারিষা ক্ষেতগুলো ফুলে ফুলে হলুদ প্রান্তরে পরিণত হয়েছে। কৃষি বিভাগের প্রণোদনা এবং বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে চলতি মৌসুমে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন।তিনি আরো বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা সরিষার আবাদে ঝুঁকেছেন। ফলে বেড়েছে আবাদ, বাড়বে উৎপাদন।

এদিকে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন তোলার পরপরই বপন করা হয়েছে সরিষা। ফুলের হলুদ চাদরে এখন ঢাকা পড়েছে জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ। কম খরচে বেশি ফলন হওয়ায় সরিষা চাষে তাদের আগ্রহ বেড়েছে।

জেলা সদরের কমলছড়ি এলাকার কৃষক অসিত বরন চাকমা বলেন, ইরি-বোরো চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বোরো আবাদে আগে খরচ পোষাতেই সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এখানকার কৃষকরা। নতুন জাতের বারি সরিষা-১৪ রোপণে উৎসাহিত করায় কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। প্রতি হেক্টরে প্রায় দুই টন ফলন হয় এ সরিষায়। ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সরিষা আবাদ করে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সরিষা ঘরে তোলা যায়।

জেলার মানিকছড়ি উপজেলার বড় পিলাক এলাকার চাষী আফসার হোসেন জানান, এক একর জমিতে বোরো চাষে বীজ, সেচ, সার, কীটনাশকসহ খরচ পড়ে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা, আর ফলন পাওয়া যায় ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকার। একই জমিতে সরিষা চাষে বীজ ও সামান্য সেচ খরচসহ খরচ পড়ে মাত্র ৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে একর প্রতি কৃষকদের লাভ থাকে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। জমিতে এক কেজি সরিষার বীজ বপন করে তিন কেজি সরিষা পাওয়া যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
নীলফামারীতে ১২ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান
তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রে দু’টি গভীর অনুসন্ধান কূপ খননের উদ্যোগ
ইতালির নাগরিকত্ব পাচ্ছেন জনপ্রিয় মার্কিন লেখক ফ্রান্সেস মায়েস
কিশোরগঞ্জে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের চারলাখ টাকা জরিমানা
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘বিশ্ব হিমোফিলিয়া’ দিবস পালিত
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধের পর বিমানের কার্গো সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে বাংলাদেশ
রাজশাহীতে মেয়েকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যা : মামলার দুই আসামী আটক
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট পরিসংখ্যান
শেখ মুজিবের ছবি সরিয়ে বহিষ্কার ৮ শিক্ষার্থী, প্রত্যাহারের দাবি ছাত্রদলের
১০