বগুড়ায় কেঁচো সারে ভাগ্য বদলে গেল সুমি ও শামিমার

বাসস
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:০০ আপডেট: : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৪১
দুই বোনের ভাগ্য বদলে দিলো কেঁচো সার। ছবি : বাসস

। কালাম আজাদ । 

বগুড়া, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): জেলায় কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করে ভাগ্য খুলেছে রাজিয়া সুলতানা সুমি (৩০) ও তার বড় বোন শামিমা আকতারের (৩৭)। কেঁচো সার উৎপাদনে তাদের  মাসিক আয় হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সারের উপকারিতা বেশি হওয়ায় কৃষকের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন।

জেলার শিবগঞ্জের কিচক ইউনিয়নের গড়িয়ার পাড়ার সেকেন্দার আলীর মেয়ে রাজিয়া সুলতানা সুমি। ২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। এছাড়া তার বড় বোন শামিমা আকতার তার ছোট বোনের সাথে হাল ধরেছেন নিজ সংসারের।

জানা গেছে, সুমির ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল পড়াশুনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। ২০১৯ সালে ঢাবি থেকে পড়াশুনা শেষ করার পর করোনা মহামারীর কারণে ঢাকা থেকে শিবগঞ্জে ফিরে আসেন। আসার দেড় মাস পরেই নিজের বাড়িতেই শুরু করেন কেঁচো কম্পোস্ট তৈরির প্রজেক্ট। সাথে সহযোগিতা করেন তার বড় বোন শামীমা। তারা দুজন মিলে তাদের গ্রামে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে গড়ে তোলেন শামীমা অ্যাগ্রো ফার্ম ও চেতনায়ন সংঘ। এখানে তাদের পাশাপাশি আরও ১৬জন নারী কাজ করে সাবলম্বী হয়েছেন।

রাজিয়া সুলতানা সুমি বলেন, 'নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের প্রচেষ্টায় ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি শুরু করি। নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি গ্রামীণ নারীদেরও এই কাজে যুক্ত করতে পেরেছি। প্রথমে ২০১৯ সালের মে মাসে ২৫টি স্যানিটারী রিং বসিয়ে শেরপুর থেকে কেঁচো কিনে প্রজেক্ট শুরু করি। বড় বোন শামীমা আগে থেকেই গরু পালন করায় গোবরের জন্য চিন্তা করতে হয়নি। পরে ধীরে ধীরে সার তৈরী করে বিক্রি শুরু করি।'

ঢাবিতে পড়াশুনা করেও কেঁচো নিয়ে কাজ করার জন্য সমাজে অনেক বাঁধা অতিক্রম করার বিষয়ে সুমি বলেন, প্রথম দিকে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতাম৷ এই কাজ করার কারণের গ্রামের মানুষেরা অনেক সমালোচনা করেছেন।

এমনকি কেউ কেউ খামারে এসে থুতু ফেলে চলে যেত। কিন্তু আমরা মানসিক স্থিরতা নিয়েই কাজ শুরু করেছি। আমরা সমালোচনার সম্মুখীন হবো জেনেই এই প্রজেক্ট শুরু করার সাহস দেখিয়েছি। এখন আর কারও কথা গায়ে লাগাইনা। তবে মানুষ এখন কেঁচো সারের উপকারিতার ব্যাপারে জেনেছে এটাই আমাদের কাজের সার্থকতা।

কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরীর বিষয়ে সুমি বলেন, আমরা চেতনায়ন মহিলা সংঘ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি।

এখানে আমরা দুই বোন বাদেও ১১৬জন নারী নিয়মিত কাজ করছেন। আমরা তাদেরকে প্রথমে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। পরে আমরা ঢাবি এলামনাই থেকে অনুদান পেয়ে একটি ফান্ড গঠন করেছি। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে আমরা স্বল্প সুদে ঋণ পাই যা আমাদের কাজের গতি আরও বাড়িয়ে দেয়। পরে ধীরে ধীরে সবাই এখন সার বিক্রি করে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ জৈব সার কৃষি কাজে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে বলে মনে করেন সুমি।

গড়িয়ার পাড়া গ্রামের নারী উদ্যোক্তা ও চেতনায়ন সংঘের সদস্য সালমা খাতুন বলেন, 'কেঁচো সার বিক্রি করে প্রতি মাসে নিজেই উপার্জন করছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে আরও সহযোগিতা পেলে আমাদের প্রজেক্ট প্রসারিত করা যাবে।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, 'কেঁচো সার প্রজেক্টে সুমিদের প্রথম থেকেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদান করা অব্যাহত রয়েছে। তাদের সার মানসম্মত। তাই তাদের কেঁচো সারের মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও আমরা সহযোগিতা করে আসছি। এছাড়া তারা যেন তাদের প্রজেক্ট আরও প্রসারিত করতে পারে এজন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। একাজে সরকারি পৃষ্ঠোপোষকতা লাগলে তা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
মাতৃভাষায় সাংবাদিকতা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে সার্ক দেশগুলোর প্রতি আহ্বান
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের এআই জেনারেটেড ডিপফেক ভিডিও এড়িয়ে চলার অনুরোধ
মোস্তফা মোহসীন মন্টু’র দাফন সম্পন্ন : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন
সারা দেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১৬৩৬ জন
বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান তদারকিতে ১১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন
৫৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কেউ কাজ করেনি : এ টি এম মাসুম
গুমের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
বিএনপি'র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে মনোনয়ন
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সাথে ডব্লিউজিইআইডি’র প্রতিনিধি দলের বৈঠক
গুমের ঘটনায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুস্পষ্ট যোগসূত্র দেখেছে কমিশন
১০