শিরোনাম
যশোর, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই আইটি সেক্টরে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন মো. শাহজালাল। গড়ে তোলেন ‘টেকনোসফট বাংলাদেশ’ নামে সফটওয়্যার কোম্পানি।
তার প্রতিষ্ঠানে এখন চাকরি করছেন ২৩ জন আইটি কর্মী। অচিরেই এ কর্মীসংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে বলে জানান শাহজালাল।
শুরুটা হয় ২০১৫ সালে। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক্স প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক করাকালীন তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। একটি ই-কমার্স সাইট খুলে বিভিন্ন ধরণের পণ্য বিক্রি শুরু করেন। টেকনোসফট বাংলাদেশের যাত্রাও শুরু হয় তখন।
যশোরে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধন হলে ২০১৭ সালে নিজ জেলায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। পাশাপাশি যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে এক হাজার ১৪০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ নেন।
শাহজালাল বলেন, ঢাকার ‘টেকনোসফট বাংলাদেশ’কে যশোরে নিয়ে আসি। এ প্রতিষ্ঠানটিতে এখন পর্যন্ত ১৮ লাখ টাকা বিনেয়োগ করা হয়েছে। এখন প্রতিষ্ঠানটিতে সফটওয়্যার তৈরী, নেটওয়ার্কিং ও ডাটা নিয়ে কাজ করা হয়’। শাহজালালের প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামার হিসেবে শুরু থেকেই কাজ করছেন আজহারুল ইসলাম। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে মাস্টার্স করেছেন তিনি। আজহারুল বলেন, ‘আমি সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। এ খাতেই ক্যারিয়ার গড়তে চাই। তাই সরকারি চাকরির চেষ্টা করিনি কখনো’।
যশোরের শার্শা উপজেলার বন্দরনগরী বেনাপোলের সন্তান শাহজালাল। স্কুল শিক্ষক বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা কেউই তখন চাননি যে ছেলে ব্যবসা করুক। কিন্তু পরে সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘তরুণ-তরুণীদের উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম প্রতিবন্ধকতা আসে পরিবার থেকে। তাই একজন তরুণ উদ্যোক্তার জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ পরিবারকে কনভিন্স করা। আবার সরকারিভাবে তরুণ উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে না। পদে পদে রয়েছে নানান বাধা। একজন তরুণ উদ্যোক্তার ঠিক কোথায় কোথায় হেল্প প্রয়োজন, সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সমস্যাগুলো চিহ্নিত না করে অপরিকল্পিতভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কাজের কাজ কিছুই হবে না।
শাহজালাল বলেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ, গ্রাহক অধিগ্রহণ, দক্ষতা উন্নয়নও পরিচালনা ব্যয়ের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। তিনি বলেন, গ্লোবাল স্টার্টআপ র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তেমন ভালো না। অল্পকিছু উদাহরণ থাকলেও গ্লোবাল ভেঞ্চার ফান্ডিং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। বিগত কয়েক বছর যাবত আইডিয়া, স্টার্টআপ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ হাইকেট পার্ক অথোরিটির মাধ্যমে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম তৈরীর চেষ্টা করেছিল সরকার, যা নতুন উদ্যোক্তা তৈরীতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেক্টরগুলোও অনেক বেশি সীমাবদ্ধতা দিয়ে রেখেছে।
তিনি বলেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের লোকাল ও গ্লোবাল প্রতিটি মার্কেট প্লেসে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হয়। আইটি সেবায় উন্নত দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো সবসময় তাদের পণ্য ও পরিষেবাগুলোকে আলাদা করার উপায় খোঁজে ও বাজারে প্রতিযোগিতা করার জন্য লড়াই করে। এ অবস্থায় আমাদের দেশের নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য গ্রাহক অধিগ্রহণ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
শাহজালাল বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশের জন্য গ্লোবাল ভেঞ্চার কোম্পানিগুলো থেকে ইনভেস্টমেন্ট পেতে হলে সম্ভাব্য সকল পন্থায় কান্ট্রি ব্রান্ডিং করতে হবে। পাশাপাশি দেশেই একটি কার্যকরি স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম তৈরী করতে হবে যেন উদ্যোক্তা তার আইডিয়া বিনা সংকোচে উপস্থাপন করতে পারে এবং বেসরকারি বিনিয়োগকারীরাও আইটিতে বিনিয়োগে উৎসাহ পায়। তিনি বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করাসহ নির্দিষ্ট প্রবৃদ্ধি অর্জন পর্যন্ত ট্যাক্স, ভ্যাট অব্যাহতি রাখা দরকার। পাশাপাশি হাইটেক ও সফটওয়্যার পার্কগুলোর অপারেশনাল কস্ট কমিয়ে আনা এবং একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোক্তা ও কর্মী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।