বাসস
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:২৫

আসন্ন গ্রীষ্মে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার

।। সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ।।

ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : আসন্ন গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর চাপ বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এপ্রিল-মে মাসে বিদ্যুতের চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বিদ্যুৎ খাত জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা তৈরি করেছে।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পূর্বাভাস দিয়েছে যে এপ্রিল ও মে মাসে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৮,০০০ মেগাওয়াট হবে, যেখানে সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে ১৭,২৬০ মেগাওয়াট উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

বাসসের সাথে আলাপকালে বিপিডিবির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রেজাউল করিম বলেন, রমজান মাসে লোডশেডিং শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য তারা কাজ করছেন। এ মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ১৫,৭০০ মেগাওয়াট হতে পারে।

তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালে দেশে কমপক্ষে ৭৪০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হতে পারে। এ সময় ১৭,২৬০ মেগাওয়াট উৎপাদনের বিপরীতে চাহিদা ১৮,০০০ মেগাওয়াট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চেয়ারম্যান বলেন, ২০২৪ সালে সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৭,৮০০ মেগাওয়াট এবং সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১৬,৪৭৭ মেগাওয়াট।

এর আগে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন যে তারা রমজান মাসে লোডশেডিং শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন এবং গ্রীষ্মকালে লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। রমজান মাসে গ্যাস সরবরাহ ১,২০০ এমএমসিএফডিতে বৃদ্ধি করা হবে। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রমজান মাসে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ১৫,৭০০ মেগাওয়াট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আমরা পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।

বিপিডিবির পরিকল্পনা অনুসারে, গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ ১,২০০ এমএমসিএফডিতে বৃদ্ধি করা হবে।

বিপিডিবির পরিকল্পনা অনুসারে, এপ্রিল ও মে মাসে দেশের গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ৬,২০০ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫,১০০ মেগাওয়াট, ভারী জ্বালানি তেল (এইচএফও) ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৩,৫০০ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ উৎস থেকে ৪০ মেগাওয়াট, সৌর ও বায়ু উৎস থেকে ২০ মেগাওয়াট, আমদানি (এইচভিডিসি এবং ত্রিপুরা) থেকে ১,০০০ মেগাওয়াট এবং আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ৫,১০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের মধ্যে পায়রা ১,২০০ মেগাওয়াট, রামপাল ১,০০০ মেগাওয়াট, এসএস পাওয়ার ১,২০০ মেগাওয়াট, মাতারবাড়ি ১,১৫০ মেগাওয়াট, বরিশাল ৩০০ মেগাওয়াট এবং বড়পুকুরিয়া ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন করবে।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার একটি নথি অনুসারে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গড় গ্যাস সরবরাহ ছিল ১,২০৩ এমএমসিএফডি। কিন্তু ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে গ্যাস সরবরাহ ছিল ৮৩৯ এমএমসিএফডি।

উপদেষ্টা বলেন, গ্রীষ্মকালে এয়ার কুলারগুলো মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রায় ৬,০০০ মেগাওয়াট ব্যবহার করে। কুলিং লোড কমানো গেলে বিদ্যুতের চাহিদা আরও ২,০০০ থেকে ৩,০০০ মেগাওয়াট কমানো সম্ভব হবে।

ফাওজুল কবির বলেন, গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার জন্য সম্প্রতি বিপিডিবি অর্থ বিভাগ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে এবং অর্থ বিভাগ এই অর্থ প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।