\ মামুন ইসলাম ও রেজাউল করিম মানিক \
রংপুর ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ এই কর্মসূচির পর উজ্জীবিত দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা বিএনপি।
তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে গত সোম ও মঙ্গলবার দেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তাপাড়ে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
আয়োজক সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন বিএনপি’র রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
তিনি বলেন, এটি বিএনপির নয়, গণমানুষের আন্দোলন।
দুদিনের এই কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
ভার্চুয়ালি এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিস্তাপাড়ে গিয়ে সরাসরি আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন দলটির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বসহ দলটির নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি সত্ত্বেও কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে লাখো মানুষকে।
একে এই জনপদে বিএনপি’র রাজনীতির পালে নতুন হাওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত মঙ্গলবার লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি কর্মসূচিতে যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তিস্তার পানির হিস্যা আদায়ে ভারতের প্রতি কঠোর মনোভাবের বিষয়টি স্পষ্ট করেন। দাবি আদায়ে আন্তর্জাতিক মহলে যোগাযোগ ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাগাদা দেন তিনি। পাশাপাশি ক্ষমতায় গেলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সবরকম উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
আন্দোলনে যোগ দেওয়া সাধারণ মানুষ বলছে, তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনে বিএনপি এগিয়ে আসায় তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। আগামী দিনে সরকার গঠন করলে বিএনপি তাদের দাবি পূরণে কাজ করবে বলেও আশা তাদের।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার রুদ্রেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা শাহিনুর রহমান বলেন, তিস্তা নদী এখন তাদের দুঃখ। প্রতি বছর বন্যা ও নদী ভাঙনে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়, তাতে এ এলাকার মানুষ সারা বছর অভাবে থাকে। এবার বিএনপি আন্দোলনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে পুরো নদী এলাকার মানুষ তাদের সঙ্গে আছে।
৪৮ ঘণ্টার এ কর্মসূচিতে যোগ দেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছের বাসিন্দা জহির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের পাশে থাকবে, আমরাও তাদের পাশে থাকব। আমাদের দুঃখের সময় যাদের আমরা পাশে পাব ও যারা আমাদের দাবি নিয়ে কথা বলবে, আমরা তো স্বাভাবিকভাবে তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ব।’
এদিকে এই কর্মসূচিকে ঘিরে চাঙা হয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
তারা বলছেন, এত বড় জমায়েতের পর উত্তরের রাজনীতিতে বিএনপি আগামী দিনে ভালো কিছু করবে বলে আশা তাদের।
এ কর্মসূচিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন রংপুর মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু।
তিনি বলেন, ‘মানুষের স্বার্থে যে কোনো আন্দোলন করলে, সে দলের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসে। তিস্তাপাড়ের মানুষের সমস্যা সমাধানে এ রকম আন্দোলন আর হয়নি। এ কর্মসূচির কারণে তিস্তাপাড়ের মানুষ অনেক সজাগ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তারা আমাদের সঙ্গে থাকবে।’
জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদা হাসান বলেন, ‘এ আন্দোলনের জন্য সাংগঠনিকভাবে আমরা অনেকটাই চাঙা। আগামীতে নির্বাচন যেহেতু সামনে আছে, এ জন্য সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। এটাও এ আন্দোলনের একটা বার্তা ছিল ।’
কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই- বাংলাদেশের মানুষদের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাহলে তিস্তার পানি দেন, সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করেন। বড় দাদার মতো আচরণ বন্ধ করেন। আমরা আমাদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব তবে সম্মানের সঙ্গে, আমার যে পাওনা সেটি বুঝে নেওয়ার সম্পর্ক।’
এর আগেও তিস্তা ইস্যুতে আন্দোলন করেছে বিএনপি। ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল ঢাকা থেকে তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ করেছিল দলটি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় সংস্কার ও নির্বাচন আয়োজন যখন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, তখন বিএনপি’র এ কর্মসূচির কয়েকটি কারণ রয়েছে।
এর মধ্যে অন্যতম হলো- নির্বাচন ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের আস্থা অর্জন, তিস্তার পানিচুক্তি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন তৈরি করা এবং আগামী দিনে সরকারে এলে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে- তা স্পষ্ট করা।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের এ আন্দোলন কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের নয়। এ নদীর জন্য মানুষ ছিন্নমূল ও ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী যতটুকু পানির ভাগ পাব ততটুকু যেন দেওয়া হয়। দুই কোটি মানুষের জীবনরেখা হলো তিস্তা নদী। এ নদীকে রক্ষা না করে, আমরা আন্দোলন থেকে সরে যাব না।’