কক্সবাজার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে গত দুইদিন অনুষ্ঠিত হয়েছে চাকমা, মারমা, ম্রো, বাঙালিসহ ২১টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে 'বিচ ফেস্টিভ্যাল’। যেখানে একুশের গান এবং দেশের গান থেকে শুরু করে ‘মারমা পাখা নৃত্য’, ‘বম জীবন ধারা নৃত্য’সহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে এ অনুষ্ঠানে।
একুশে ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বৈচিত্র্যময় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সৈকতের লাবণী পয়েন্টস্থ জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় ও শনিবার রাত ১১টায় এ বিচ ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়। বিচ ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজার সৈকতে ২১টি জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পরিবেশিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরাই মূল লক্ষ্য।
আয়োজক সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, উৎসবে অংশ নিয়েছে চাকমা, মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, লুসাই, খুমি, বম, খেয়াং, চাক, পাংখোয়া, তঞ্চঙ্গ্যা, মনিপুরী, সাঁওতাল, মাহালী, ওরাওঁ, মালপাহাড়িয়া, গারো, হাজং, কোচ, রাখাইন সম্প্রদায়ের শিল্পীরা। এছাড়া কক্সবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমি, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের বাঙালি শিল্পীরাও উৎসবে যোগ দিয়েছেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভিন্ন ভাষায় ‘একুশের গান’ পরিবেশন করেন শিল্পীরা। সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটি। এরপর ‘মারমা পাখা নৃত্য’, ‘বম জীবন ধারা নৃত্য’ এবং ‘সংগীত’ পরিবেশিত হয়। এছাড়া ‘খুমি মাছ ধরা নৃত্য’, ‘ময়ূর নৃত্য’, ‘চাকমা গান’, ‘তঞ্চঙ্গা নৃত্য’, ‘ম্রো জুম নৃত্য’, ‘ত্রিপুরা গান’ ‘চাকমা প্রদীপ নৃত্য’, ‘লুসাই বাঁশ নৃত্য’, ‘সংগীত ও সম্প্রীতি নৃত্য পরিবেশিত হয়।
'দেশাত্ববোধক গান’ (মাহালী সাওতালী পাহাড়িয়া) পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সমতলের শিল্পীদের পরিবেশনা শুরু হয়। তারপর ‘দাসাই নৃত্য’ (সাওতালী), ‘পাহাড়িয়া নৃত্য’ এবং ‘কমেডি’ পরিবেশিত হয়।
এছাড়া শিল্পীরা পরিবেশন করে ‘ওরাও নৃত্য’ ও ‘মাহালী নৃত্য’। সবশেষে ‘মণিপুরী মৃদঙ্গ নৃত্য’ ও ‘মণিপুরী রাস নৃত্য’। একইভাবে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিল্পীদের পরিবেশনায় নৃত্য ও গানের মধ্যদিয়ে শনিবার রাতে শেষ হয় দুই দিনের এ বিচ ফেস্টিভ্যাল।
কক্সবাজারে ঘুরতে আসা ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বেসরকারি চাকরীজীবী ফাহমিদা আকতার বলেন, কক্সবাজার সৈকতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে এরকম একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে স্বার্থক হয়েছে এবারের কক্সবাজার ভ্রমণ। কারণ কক্সবাজারে শুধু সমুদ্র সৈকত ছাড়া দেখার মতো আর কোনকিছু নেই। তাই এ ফেস্টিভ্যাল পর্যটকদের অনেক আনন্দ দিয়েছে।