দিনাজপুর,২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার ১৩টি উপজেলার লিচু ও আমের বাগানে মুকুলে ছেয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মৌয়ালরা লিচু বাগানে মধু সংগ্রহের ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দিনাজপুর পুলহাট বিসিক মাঠ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমানের সঙ্গে কথা হয় মধুর চাষের বিষয় নিয়ে। তিনি জানান, এবার এ জেলায় লিচু ও আমের থোকায়-থোকায় মুকুলে ভরে গেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌয়ালদের মধুর সংগ্রহের বাক্স বাগানে সারিবদ্ধ ভাবে বসিয়ে মধু সংগ্রহের কাজ চলছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে দু'টি লিচু বাগানে মধুর চাষীদের মধু আহরণের এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। নাটোর সদর উপজেলা থেকে সিরাজুল ইসলামের পুত্র মো. রাশেদ হোসেন মৌয়াল সারিবদ্ধ বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করছেন। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মধু সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রায় সাড়ে ৪'শত মধু বাক্স নিয়ে এসেছেন দিনাজপুর সদর ও বিরল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে লিচু বাগানে। মধু বাক্স গুলো বসিয়েছেন এ দু'টি এলাকার লিচু বাগানে । এবার মুকুলের সংখ্যা অনেক বেশি তাই মধু সংগ্রহের পরিমাণ ও বৃদ্ধি পাবে এমন আশীবাদ ব্যক্ত করেন ।
একই জেলার মৌয়াল আমজাদ হোসেন এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য দিনাজপুর বিরল উপজেলার বাধববাটি গ্রামে। প্রায় ২৫০ টি মধু বাক্স বসিয়েছেন লিচু বাগান গুলোতে। গাছে-গাছে মুকুলের সমারোহ দেখে বেশ উৎফুল্ল এ মৌয়াল। জানালেন- এ মৌসুমে লিচু বাগান থেকে উল্লেখ যোগ্য মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এবার প্রতি মণ মধু মাঠে বিক্রি হচ্ছে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে গত বছরে অনেক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা।
সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা থেকে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করে দিনাজপুরে এসেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে মৌয়াল মফিদুল ইসলাম। তিনি মৌ বাক্স নিয়ে এসেছেন প্রায় ৫০০ শতাধিক। জানালেন- এবার সাতক্ষীরা জেলায় মধু সংগ্রহ খুব একটা সন্তোষ জনক ছিল না। দিনাজপুরে এসে তার চোখ যেন উৎফুল্ল হয়ে গেছে। মুকুলে-মুকুলে ভরে গেছে লিচু গাছ । যে পরিমাণ মৌমাছি নিয়ে মধু সংগ্রহের জন্য তিনি এসেছেন। এ সংখ্যক মৌ বাক্স দিয়ে তিনি সামাল দিতে পারছেন না। এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে আরো অধিক মধু সংগ্রহের আশাবাদ করছেন তিনি। এদিকে এ মৌসুমে মধুর বাজার দর বেশ ভালো।
তাই ভালো লাভের আশায় স্বপ্ন দেখছেন এ মৌয়াল।
বিরল উপজেলার মাধববাটি গ্রামের লিচু চাষী মো. আব্দুস সামাদ বলেন, আগে আমাদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা ছিল। আমরা বাগানে মৌ-বাক্স বসাতে দিতাম না। কিন্তু স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে আমাদের সে ধারণা বদলে গেছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মৌয়ালদের আমরা বিভিন্নভাবে সহায়তা করছি। এতে করে ফলের পাশাপাশি আমরা মধুও পাচ্ছি। যা আমাদের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. আনিসুজ্জামান বলেন, দিনাজপুর জেলার ১৩ টি উপজেলায় চলতি বছর ১০ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে বিভিন্ন জাতের লিচু চাষ করা হয়েছে। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জেলা মৌয়ালরা সাড়ে ৬ হাজার থেকেই ৭ হাজারের অধিক মৌ বাক্স নিয়ে মধু সংগ্রহ করতে আসে এ জেলায়। মৌয়ালদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ কৃষকদের মধু চাষে উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সদা তৎপর। অনেক সময় কৃষকরা মনে করে মধু সংগ্রহ করলে উৎপাদন কমে যায়, কিন্তু তাদের এ ধারণা ভ্রান্ত, আমরা এ বিষয়টি কৃষকদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে এ বিষয়ে অনেক কৃষক ইতিবাচক। তারাও বুঝতে পেরেছে মৌমাছি যখন এ গাছ থেকে অন্য গাছে মধু আহরনের জন্য যায়, এক্ষেত্রে পরাগায়ন ঘটে যার ফলে বৃদ্ধি পায় ফলের উৎপাদন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার দিনাজপুর অফিসের উপ-মহাস্থাপক মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুর সদর উপজেলায় মৌয়াল রয়েছে ৩০ জন। এছাড়াও জেলা ১৩ টি উপজেলায় রয়েছে বেশ কিছু স্থানীয় মৌয়াল। এদেরকে আমরা সদর থানার হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বাঁশেরহাট এলাকায় মধু চাষ বিষয়ে আমাদের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এখান থেকে আমরা প্রতিনিয়ত মধু চাষীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকি।
এছাড়া মধু চাষে উদ্যোক্তা তৈরিতে আমরা বিভিন্ন প্রদর্শনী করে থাকি। প্রদর্শনী গুলোতে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা মধু চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব তরুণ উদ্যোক্তাদের আমরা প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। প্রতি বছর দিনাজপুরে বৃদ্ধি পাচ্ছে মধু উৎপাদনের পরিমাণ। বর্তমানে মধুর যে বাজার চলছে তাতে মৌয়ালরা লাভবান বলে তিনি ব্যক্ত করেন।