সিলেট, ২৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : ঈদ উৎসব রাঙাতে সিলেটে শপিংয়ের ব্যস্ততা বেড়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিরাপদ শপিং নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দিন-রাত দায়িত্ব পালন করছেন।
গতকাল বুধবার দিনগত রাত একটা থেকে আড়াইটায় নগরের জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, নয়াসড়ক, কুমারপাড়াসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক সদস্যরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ রমজানের পর থেকে বাজারে ক্রেতাদের আগমন বাড়ছে। দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত বেচাকেনা জমে ওঠে। বিশেষ করে তারাবিহ নামাজ শেষে রাত সাড়ে ৯টা থেকে একটা পর্যন্ত ব্যস্ততা বেশি থাকে।
ক্রেতারা বলছেন, রোজা রেখে ভিড় ঠেলে শপিং করার চেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটার জন্য রাত বেছে নিচ্ছেন তারা। এখন রাতেও ভিড় বেড়েছে। হাটার ফুসরত নেই। এ কারণে নির্ধারিত কোনো এক মার্কেটেই ঈদের কেনাকাটা সারতে চাচ্ছেন অনেকে।
শেষ সময়ে পাঞ্জাবি, শাড়ি, জামা, শার্ট-পেন্টের পাশাপাশি চাপ বেড়েছে কসমেটিকস-গহনার দোকানেও। কেনাকাটায় বাবা-মার হাত ধরে এসেছে শিশুরাও।
নগরের শাহপরান এলাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে কেনাকাটা করতে এসেছেন হেপি আক্তার। তিনি জানান, ঈদে আত্মীয়-পরিজন সবার জন্যই কেনাকাটা করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় প্রয়োজন। দিনে রোজা ও অন্যান্য কাজের জন্য তেমন সময় পাওয়া যান না। তাই সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটায় সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।
নয়াসড়কে মাহা ফ্যাশনে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন নগরের আম্বরখানার সেজুতি বেগম। তিনি নিজেও একজন ব্যবসায়ী। পরিবারের সব সদস্যের জন্য তিনি একদিনে শপিং করতে চান এবং সবাইকে এক জায়গা থেকে জামাকাপড় কিনে দিতে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি বেছে নিয়েছেন বলে জানান। সেজুতি বলেন, যে হারে যানজট সারা শহর ঘুরে কেনাকাটা করতে গেলে অনেক সময় প্রয়োজন। নয়াসড়কে এক জায়গা থেকে সবার জন্য কেনা সম্ভব তাই এখানে এসেছি।
নগরের জিন্দাবাজারস্থ শুকরিয়া মার্কেটে পাঞ্জাবি কিনতে এসেছেন রায়হানুল ইসলাম। তিনি জানান, বটেশ্বর থেকে তিনি কেনাকাটা করতে এসেছেন। দিনের ঝামেলা এড়াতে রাতে এসে দেখেন আরও বেশি ভিড়।
রাতে বাইরে কেনাকাটা করতে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন, ঝুঁকি সবসময় আছে। তবে সম্প্রতি যেভাবে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রচার পেয়েছে নগর ঘুরে সে রকম তার কাছে মনে হয়নি। কোথাও কোথাও ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনলেও নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা সব জায়গায় তিনি লক্ষ্য করেছেন।
বিক্রেতারা বলছেন, প্রথম দিকে তেমন বেচাকেনা ছিল না। মাঝামাঝি সময়ে টুকটাক বেচাকেনা হলেও, সময় যত ঘনিয়ে আসছে, তত চাপ বাড়ছে। দিনে চেয়ে রাতে চাপ বেশি। গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। ২৭ রোজার পর থেকে দিনরাতের পার্থক্য বোঝা মুশকিল হবে।
জিন্দাবাজারের আল হামরা শপিং মলের তৃতীয় তলায় বাচ্চাদের কাপড়ের দোকান তানজিনা সপ। দোকানের মালিক খোকন আরাফাত জানান, রমজানের প্রথম দিকে কিছুটা মন্দাভাব চিল। বেচাকেনা নিয়ে একটা শঙ্কা কাজ করছিল। মাঝামাঝি সময় থেকে ক্রেতা উপস্থিতি আশানুরূপ হয়েছে। এবারের ঈদে সবধরনের কাপড় চাহিদা আছে। তবে বাচ্চাদের জন্য কিনতে কেউ কার্পণ্য করে না।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন বলেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, বাজার তত জমে উঠছে। ইফতার শেষে দোকান ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতার ভিড় বেশি থাকে। নিরাপত্তা নিয়ে আমরা কিছুটা শঙ্কিত ছিলাম। তবে, মার্কেট থেকে শুরু করে নগরজুড়ে যেভাবে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট।
নির্বিঘ্ন ঈদ শপিং নিশ্চিত করতে শপিংমল, বিপণীবিতান থেকে সড়ক ও পাড়া-মহল্লায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপরতা জোরদারের কথা জানিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। এই জন্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। চুরি-ছিনতাই রোধ এবং যানজট নিরসনসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ঈদের কেনাকেটা শেষে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে এসএমপি।