\ বিপুল আশরাফ \
চুয়াডাঙ্গা, ২৮ মার্চ ২০২৫ (বাসস) : দেশ জুড়ে ঈদুল ফিতরের প্রস্ততি চলছে। আর মাত্র দুই দিন। তারপরই মিলবে কাঙ্ক্ষিত চাঁদের দেখা। তাই শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। বিপণি বিতান থেকে শুরু করে সব ধরনের দোকানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমজমাট হয়ে উঠছে জেলা শহরের কসমেটিকস থেকে শুরু করে তৈরি পোশাক-পাঞ্জাবী-টুপি ও জুতার দোকানগুলো।
ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণ করতে নিজের সাধ্যের মধ্যে পরিবারের সবার জন্য নতুন কিছু কেনার ইচ্ছে থেকেই ক্রেতারা মার্কেটে ভিড় করছেন। কেউ পোশাকের সাথে মিলিয়ে জুতা-গয়না কিনছেন। কেউ আবার শেষ মুহূর্তের উপার্জনটুকু দিয়ে পরিবারকে খুশি করতে কেনাকাটা করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা ও গ্রামগঞ্জের মার্কেট, বিপণী বিতানগুলোতেও উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের মার্কেট, শপিং মল, ফ্যাশন হাউস ও বিপণী বিতানগুলো ক্রেতা সমাগমে মুখর হয়ে ওঠে। বাহারি নতুন ডিজাইনের পোশাকের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা ক্রেতা আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। তবে দেশি পোশাকের চেয়ে এবারো ভারতীয় পোশাকের চাহিদা বেশি। এছাড়া পাকিস্তানি থ্রি-পিসেরও চাহিদা রয়েছে। তবে উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের আকৃষ্ট করে এমন নাম নিয়ে এবারো বাজারে এসেছে বিভিন্ন পোশাক। যেমন, পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান থ্রি-পিস, বুটিক থ্রি-পিস, সারারা, গারারা ও আফগান ড্রেস। শাড়ি প্রেমীদের কাছে ‘জামদানি শাড়ি, পাকিস্তানি, ভারতীয়, নতুন ফারসি, রাজগুরু, বুটিকসহ বিভিন্ন ধরনের শাড়ির চাহিদা রয়েছে।
রমজানের প্রথম দিকে গজ কাপড়ের দোকানে ক্রয়-বিক্রয় কম থাকলেও বর্তমানে ভিড় সামাল দিতে দোকানিরা হিমশিম খাচ্ছেন। ঈদ মার্কেটে ক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী। মেয়েরা যাচাই বাছাই করে তবেই তাদের পছন্দের জিনিসটি কিনছেন। কেউবা ভিড় এড়াতে আগে ভাগেই পছন্দের কাপড় কিনে রেখেছেন। পছন্দের পোশাক কিনতে ক্রেতারা এ দোকান থেকে ও দোকানে, এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে ছুটছেন।
তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর সব পণ্যের দাম বেশি বলে জানান ক্রেতারা।
জেলার নিউ মার্কেট সংলগ্ন সেঞ্চুরি টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী বাবু বাসসকে বলেন, গতবারের তুলনায় এবার চাপ বেশি। তবে প্রথম দিকে একটু কম থাকলেও শেষের দিকে বেড়েছে। চাপ বাড়ার কারণে নতুন পোশাকের অর্ডার নেওয়া বন্ধ রয়েছে। তবে গতবারের তুলনায় পোশাক তৈরির মজুরি কিছুটা বাড়িয়ে কমপ্লিট সেট ৪ হাজার টাকা, শার্ট প্যান্ট ৯৫০ টাকা এবং পাঞ্জাবি ৫৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে ।
চুয়াডাঙ্গা ইমার্জেন্সি রোডের সুমন টেইলার্সের মালিক সুমন বলেন, আমার এখানে নারীদের পোশাক তৈরি করা হয়। দাম গত বছরের মতোই নেওয়া হচ্ছে। সুতি থ্রি-পিস সেলাই ২৫০ টাকা ও জর্জেট মান ভেদে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে তার বেশিও নেওয়া হচ্ছে।
বড়বাজার নিউমার্কেটের পায়েল কালেকশনের কর্মচারী সুমন শাহ জানান, তৈরি পোশাকের উপরে চাহিদা একটু বেশি থাকে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের। তবে এবছর মেয়েদের নতুন পোশাকের মধ্যে রয়েছে ফরাসি, পাকিস্তানি ও ইন্ডিয়ান থ্রি-পিসের চাহিদা। তবে দামটা একটু বেশি।
অন্যদিকে নিউমার্কেটে সাজঘর গার্মেন্টসের কর্মচারী শুভ্র বলেন, আমাদের এখানে থ্রি-পিস ও বাচ্চাদের কালেকশন আছে। এরমধ্যে শাহজাদি ও সাহারা পোশাকের বেচাকেনা একটু বেশি। রমজানের শুরুর দিকে বেচাকেনা কম থাকলেও এখন বিক্রি বেড়েছে।
বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দাম বেশি হলেও বেচাকেনা ভালই হচ্ছে। ঈদের সময় ঘনিয়ে আশায় কসমেটিক্স ও জুতার দোকানেও ভিড় বেড়েছে। পাঞ্জাবী-টুপির দোকানেও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
দোকানিরা জানান, কাপড়চোপড় কেনার পর তার সাথে ‘ম্যাচ’ করে সাজগোজের অলঙ্কার ও কসমেটিক্স ক্রয় করেন ক্রেতারা। তা ছাড়া প্রায় সবাই জুতা স্যান্ডেল কেনেন সবার শেষে। আর চাঁদ রাত বা তার দু’একদিন আগে কেনেন পাঞ্জাবী-টুপি। সে কারণে ভিড় একটু কম থাকলেও দু’একদিনের মধ্যেই এ সব দোকানেও বেচা-কেনা জমে উঠবে। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত এরকম ভিড় থাকবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
চুয়াডাঙ্গা শহরের সমবায় নিউ মার্কেট, পুরাতন গলি, প্রিন্স প্লাজা, আব্দুল্লাহ সিটি, বিগ বাজার, রেলবাজার, কোট মোড়ের দোকানগুলোতে প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এখানে স্বল্প আয়ের মানুষের সাথে মধ্যবিত্তরাও ভিড় করছেন। তবে, খেটে খাওয়া মানুষ তুলনামূলক কম দামে পণ্য কেনার জন্য ফুটপাতমুখী হচ্ছেন। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় অনেক মধ্যবিত্তরাও ঈদের কেনাকাটা করতে ফুটপাতকে বেছে নিচ্ছেন।