ঢাকা, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ঢাকায় আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশ্লেষকরা বলেছেন, তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক পর্যায়ে সরকারি পর্যায়ের পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শ (এফওসি) এর পরবর্তী অগ্রগতির জন্য অপেক্ষা করবেন। কারণ, আলোচনায় ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং সম্পদ ভাগাভাগির বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বৈদেশিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাসসকে বলেছেন, ‘বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ ১৫ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব এফওসি’তে তার সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।’
তিনি বলেছেন, এফওসি’তে যখন উত্থাপিত বিষয়গুলোর কিছু ফলাফল আসতে পারে এবং পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এই মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফরের কথা রয়েছে।
বেসরকারি বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) থিঙ্ক ট্যাঙ্ক পরিচালনাকারী কবির বলেছেন,যেহেতু আলোচনায় পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে এবং যদি ক্ষমা চাওয়াতে একটি পুরনো ক্ষত দূর করতে পারে, তাহলে ঢাকার সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য ইসলামাবাদের তাতে কোনো আপত্তি থাকা উচিত নয়।
তিনি বলেছেন, ‘এটা করার জন্য এখনই তাদের উপযুক্ত সময়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, যদিও ফ্রান্স এবং জাপানের মতো অনেক দেশ অন্যান্য দেশে তাদের নৃশংসতার জন্য ক্ষমা চেয়েছে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে।
কিন্তু,অজ্ঞাত কারণে পাকিস্তান এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি।
তিনি বলেছেন, ‘সম্পদের ভাগাভাগি’ ও একটি বড় বিষয়, যদিও আর্থিক হিসাবের দিক থেকে ঢাকার দাবির চেয়ে এটা যথেষ্ঠ নয় এবং ‘এই সমস্যাগুলো সমাধান হওয়ার সাথে সাথে সম্পর্ক আরও দ্রুত গতিতে বিকশিত হতে পারে।’
আহমেদ বলেছেন, ‘এটিও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলো তৃতীয় কোনো দেশের সাথে দু’টি সংশ্লিষ্ট দেশের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত নয়।’
তিনি বলেছেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেবল দুই দেশের জনগণ এবং অর্থনীতির স্বার্থে হওয়া উচিত এবং ‘আমাদের ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের স্বার্থ।’
তবে, তিনি বলেছেন, পারস্পরিকভাবে উপকারী অর্থনৈতিক সম্পর্ক কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। যদিও ঘটনাক্রমে বাংলাদেশ বর্তমানে পাকিস্তানের তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
ইমতিয়াজ বলেছেন, এটি মূলত পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে, তারা বাংলাদেশি পণ্যের জন্য তাদের বাজার কতটুকু উন্মুক্ত করবে। কারণ, কেবল ভালো রাজনৈতিক ইঙ্গিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে খুব বেশি এগিয়ে নিতে পারে না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেছেন, দৃশ্যত পাকিস্তান এফওসি আয়োজন করতে আগ্রহী ছিল, যা ১৫ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এতে ৫৪ বছর আগে উদ্ভূত সমস্যাগুলো উত্থাপিত হয়েছে।
তিনি বলেছেন, এফওসি পর্যায়ে আলোচনার ফলোআপ রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনায় দিকনির্দেশনা পেতে পারে।
যখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দার এই মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফর করবেন।
মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা আজ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং পরবর্তীতে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যে আলোচনা হয়েছে তার ফলোআপ দেখতে পাবো বলে আশা করছি।’ রহমান একসময় ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।