রোস্তম আলী মন্ডল
দিনাজপুর, ১৫ মে ২০২৫(বাসস): জেলার বিরল উপজেলার ধর্মপুর এলাকায় বন বিভাগের শাল বাগানে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খুদি খেজুর গাছের সন্ধান মিলেছে। ধর্মপুর শাল বাগানের বন বিট কর্মকর্তা মো. মহসীন আলী শাল বাগানের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খুদি খেজুর গাছ ও ফল দেখিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, খুদি খেজুর গাছ এখন বিলুপ্ত প্রায় বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ। যা বিরল উপজেলার ধর্মপুর শালবনে পাওয়া গিয়েছে। গাছটি যথাযথ গুরুত্ব সহকারে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ।
সরেজমিনে ধর্মপুর শালবাগানে দেখা যায়, গাছটির পাতা আর কাঁটা দেখতে সাধারণ খেজুর গাছের মতো। গাছটির আকার আর ফল দেখে কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়তে হবে।
প্রায় কাণ্ডবিহীন এ গাছে সাধারণ খেজুর গাছের মত সব বৈশিষ্ট্য থাকলেও এটি বন খেজুর বা খুদি খেজুর নামে পরিচিত।
ধর্মপুর শালবাগানের প্রহরী আনতাজ আলী বলেন, আমি গত ২৮ বছর ধরে বনবিভাগের চাকরি সূত্রে বনের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের দেখাশুনা করে আসছি। খুদি খেজুর বা বন খেজুর ছোট অবস্থায় সবুজ রঙের হয়। আর একটু বড় হলে লালচে এবং পরিপক্ব অবস্থায় জামের মতো কালচে রঙের হয়। অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু খুদি খেজুর গাছের গোড়ায় ফল ধরে। দেশি জাতের খেজুরের মতো ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার আকৃতির খুদি খেজুর হয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে এই খেজুর পাকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে এই খেজুর খেলেও গাছটি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা ছিল না। সম্প্রতি বনবিভাগের কর্মকর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্তা ও উদ্ভিদ গবেষকরা দেখার পর গাছটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ছোট বেলায় শাল বনের মধ্যে চলাফেরা ও খেলাধুলা করার সময় এই গাছ অনেকবার দেখেছি। খুদি খেজুর গাছ থেকে ফল তুলে খেয়েছি। সাধারণত এ খেজুরটাকে কুঁজি খেজুর নামে ডাকা হতো। কিন্তু আমরা এ গাছের গুরুত্ব জানতাম না। যখন বনবিভাগ ও ঢাকা থেকে লোকজন এলো এবং বলল এটা বিপন্ন প্রজাতির একটা গাছ, তখন আমরা এর গুরুত্ব বুঝতে পারলাম।
তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা গাছটি সংরক্ষণের জন্য জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। কেউ যাতে গাছটি না ছিঁড়ে বা গরু-ছাগলে খেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, সে বিষয়টি আমরা সকলেই গুরুত্বের সাথে খেয়াল রাখবো।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন আহমেদ বলেন, এই খেজুর খাওয়ার কথা আমার বাবা-দাদার কাছে শুনেছি। আমি নিজেও অনেকবার এই খেজুর খেয়েছি। খেতে সুস্বাদু। এখন খেজুর পাকার সময়। কিন্তু এ গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতাম না। এখনতো অনেকে এ গাছ দেখতে আসছেন। বনবিভাগ বলেছে, এ গাছটা দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে।
আমাদের এলাকার শালবনে একটি বিরল প্রজাতির গাছ পাওয়া গেছে জেনে আনন্দ হচ্ছে। আমরা চাই গাছটি যেন হারিয়ে না যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রিয়াজুল ইসলাম বলেন, গাছটি সম্পর্কে জানার পর থেকে গাছটি রক্ষায় আমরা জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছি। যাতে কেউ গাছটি ছিঁড়তে বা এবং গরু-ছাগল দিয়ে খাইয়ে ফেলতে না পারে। এটি একটি মূল্যবান গাছ। সারা দেশের মধ্যে শুধু আমাদের এলাকায় রয়েছে। এ গাছের জন্য আমাদের এলাকার নাম এখন অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। এটি আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জেলার বিরল উপজেলার ধর্মপুর বন বিভাগের শাল বাগানে প্রাপ্ত বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খুদি খেজুর গাছটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একে খুদি খেজুর বা বন খেজুরও বলে। ভারত, পাকিস্তান, ভুটান ও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর চারটি দেশ এ খেজুর গাছের আদি নিবাস। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্য কোথাও এ খেজুর গাছটি নেই’।
তিনি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক মো. মোশাররফ হোসেনসহ বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত ১৩ মে গাছটি দেখতে আসেন এবং গাছটি শনাক্ত করেন। তারা গাছ দেখে বলেন, বর্তমানে এটি বিলুপ্তির পথে। এটি যেন আর বিলুপ্ত না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি এ গাছের ফল থেকে পাওয়া বীজ বপন করে বন বিভাগের নার্সারিতে চারা উৎপাদন করার পরামর্শ দেন।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জানান, ধর্মপুর শালবনে দেড় শতাধিক খুদি খেজুর বা বন খেজুর গাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকগুলোতে ফল ধরেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এই ক্ষুদি খেজুর গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিরল উপজেলার ২১টি মৌজায় ২ হাজার ৮৩৬ একর জমির উপর শালবনে শাল, সেগুন, মেহগনি, কড়াইসহ শতাধিক প্রজাতির গাছ রয়েছে।
এর সাথে নতুন করে শনাক্ত হলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু খুদি খেজুর গাছ। বনবিভাগের উদ্যোগে এবং বিশেষভাবে সংরক্ষণে এ গাছগুলো বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে খুদি খেজুর গাছ ও ফল ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।