রংপুরে ধান ক্ষেতে সমন্বিত চাষে বদলে গেল কৃষকের ভাগ্য

বাসস
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১৫:২৬
ছবি : বাসস

রংপুর, ১৮ মে, ২০২৫ (বাসস) : এক সময় সংসার চলত টানাটানিতে। বছরের দুই মৌসুমে ধান চাষ করেও পেছনে থাকতো ঋণের বোঝা। সেই বাস্তবতা বদলে গেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার রহিমাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিমের (৩২)। ধানক্ষেতে হাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ করে এখন বছরে আয় করছেন প্রায় আট লাখ টাকা।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে আব্দুর রহিমের বাড়ি। সেখানে ১১ বছর ধরে তিনি গড়ে তুলেছেন এক অভিনব সমন্বিত খামার— যেখানে ধানের পাশাপাশি একসঙ্গে চাষ হচ্ছে মাছ ও হাঁস। 
খেতের পোকামাকড় খেয়ে ফেলে হাঁস আর হাঁসের বিষ্ঠা মাছের খাবার হয়ে যায়, আবার মাছের নাড়াচাড়ায় জমির নিচের মাটি নরম থাকে, ধানের উৎপাদনও বেড়ে যায়। এই চক্রেই গড়ে উঠেছে টেকসই লাভের এক দৃষ্টান্ত।

আব্দুর রহিমের বাবা মজিবর রহমানও ছিলেন একজন চাষী। তার তিন একর জমিতে ধান চাষ করে কোনো রকমে সংসার চলত। সঞ্চয় বলতে কিছুই ছিল না, বরং সময় মতো ধারদেনায় চলত চিকিৎসা কিংবা অন্যান্য জরুরি খরচ। এসব ভাবতেই কষ্ট হতো ছেলে রহিমের। তাই আলিম পাস করার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন— চাকরির পেছনে ছোটার চেয়ে কৃষিতেই কিছু করে দেখাবেন।

২০১৩ সালে আব্দুর রহিম পুরোপুরি কৃষিতে মনোযোগী হন। ধানের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের রাস্তা কী হতে পারে— তা নিয়ে ভাবতে থাকেন তিনি। 
এরই ধারাবাহিকতায়, ২০১৪ সালে গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা থেকে তিনি ৫ হাজার টাকায় ২শ’টি হাঁসের বাচ্চা কিনে আনেন এবং জমির পাশে খাল খুঁড়ে তৈরি করেন হাঁসের ঘর। 
আব্দুর রহিম ১০৭ দিন পরে হাঁস বিক্রি করে পান ৭৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে তার লাভ হয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।

এই সফলতা তাকে আরও সাহসী ও উদ্যোমী করে তোলে। পরের বছর তিনি এক একর জমিতে বাঁধ দিয়ে শুরু করেন সমন্বিত খামার। এখান থেকে ধান, হাঁস ও মাছ— তিনটির সঠিক ভারসাম্যে প্রথম বছরেই আয় করেন এক লাখ টাকা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি আব্দুর রহিমের।

বর্তমানে তার বার্ষিক আয় আট লাখ টাকার বেশি। তার খামারে উৎপাদন হয় ধান, মাছ আর হাঁস। এলাকার মানুষ এই সফল চাষীকে এখন সমন্বিত চাষের ‘গুরু’ হিসেবে চেনেন। অনেকেই তার পরামর্শে শুরু করেছেন একই ধরনের চাষ। 

রহিমাপুর গ্রামের কৃষক এমদাদুল হক, আশরাফুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান, আবু তালেব, সফি উল্লাহ, বাদশা আলম ও মোস্তফা কামাল এখন ধানখেতে হাঁস-মাছ চাষ করে পরিবারে এনেছেন সচ্ছলতা। পাশের বিষ্ণপুর ও জয় বাংলা গ্রামের অনেক কৃষকও যুক্ত হয়েছেন এই পথে। 
আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ধান এখন ফাও আবাদ। হাঁস-মাছের খরচে ধান চাষ হয়। ৪০ শতক জমিতে সমন্বিত হাঁস ও মাছ চাষে ধানের পাশাপাশি দেড় লাখ আয় হয়।’ 

সাত বছর ধরে চাষ করছেন কৃষক আবু তালেব। প্রথমে লোকসান হলেও পরবর্তীকালে আব্দুর রহিমের পরামর্শ নিয়ে সফলতা পান। 
তিনি বলেন, ‘ধানের চেয়ে বাড়তি আয় পাই হাঁস ও মাছ থেকে। বছর গেলে মোটা টাকা সঞ্চয় হয়।’ 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীবা রানী রায় বলেন, ‘সমন্বিত চাষে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ কম হয়, ফলে পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে। ধান, মাছ ও হাঁস— তিনটিই হয় নিরাপদ। রহিমের দেখানো পথ ধরেই এখন অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।’ 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘আব্দুর রহিমের খামার এখন এলাকার অনুপ্রেরণা। তার এই মডেল ছড়িয়ে দিলে আরও অনেক কৃষক উপকৃত হবেন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
সাতক্ষীরায় ৩ হাজার বস্তা ভেজাল মৎস্য খাবার জব্দ
মিছিল থেকে আওয়ামী লীগের ১১ নেতাকর্মী আটক
বন্দর কর্মকর্তা বরখাস্তের বিষয়ে আংশিক তথ্য প্রচার শনাক্ত: বাংলাফ্যাক্ট
নিয়োগে অনিয়মসহ নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে দুদকের অভিযান
চট্টগ্রামে দুই ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার, স্বর্ণ ও টাকা উদ্ধার
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে দুদকের অভিযান
দূষণের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মোবাইল কোর্ট অভিযান: জরিমানা ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন
২০২৫-২৬ অর্থবছরের ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন 
রাশিয়া রেকর্ড সংখ্যক ড্রোন হামলা চালিয়েছে : ইউক্রেন
নিজের রেকর্ড ভেঙে এভারেস্টে ১৯তম বার উঠলেন ব্রিটিশ পর্বতারোহী
১০