ঢাকা, ২০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, জাপানের মূল মুদ্রাস্ফীতির হার মে মাসে ৩ দশমিক ৭ শতাংশে বেড়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিসংখ্যান আগামী জুলাইয়ের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার নেতৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
টোকিও থেকে এএফপি জানিয়েছে, সরকার জরুরি মজুত থেকে চাল সরবরাহ করলেও গত বছরের তুলনায় চালের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এই মূল্যস্ফীতির কারণে জনরোষ সৃষ্টি হয়েছে। যা আগামী মাসে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ইশিবার নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) জন্য একটি বড় ধাক্কা হয়ে উঠতে পারে।
শুক্রবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় এপ্রিল মাসে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির এই হারটি বাজারের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। তাজা খাবার ছাড়া অন্যান্য পণ্যেও মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে কফি, চকলেটসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য।
বিদ্যুতের বিল ১১ দশমিক ৩ শতাংশ ও গ্যাসের দাম ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামলাতে ও নির্বাচনের আগে জনগণের মন জয় করতে ইশিবা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, প্রত্যেক নাগরিককে ২০ হাজার ইয়েন (প্রায় ১৩৯ ডলার) করে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ দ্বিগুণ করা হবে।
অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইশিবার সরকার জনসমর্থনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। যার পেছনে চালের দাম বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির ঢেউ অন্যতম কারণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সরবরাহ ব্যবস্থার জটিলতার কারণে সৃষ্ট চালের ঘাটতির ফলে মে মাসে চালের দাম ১০১ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে এপ্রিল মাসে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৯৮ শতাংশ।
সরকার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দাম কমাতে মজুত চাল বাজারে ছাড়ে। যা সাধারণত কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ই করা হয়ে থাকে।
চাল সংকটের পেছনে রয়েছে নানা ধরনের কারণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো দুই বছর আগের তীব্র গরম ও শুষ্ক গ্রীষ্ম, যা সারা দেশে ধান কাটায় ব্যাপক ক্ষতি করেছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরপর থেকে কিছু ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে চাল মজুত করে রাখছেন, যাতে পরে বেশি দামে বিক্রি করে লাভ করা যায়।
গত বছর সরকারের সম্ভাব্য ‘ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্প’ নিয়ে সতর্কতার পর মানুষ আতঙ্কিত হয়ে চাল কিনে মজুত করতে শুরু করে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে।
এদিকে সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির চাপ জাপানের ব্যবসায় পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা আগাম মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছেন।
ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে জ্বালানির দাম বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা জাপানের অর্থনীতির ওপর নতুন করে চাপ তৈরি করছে।
সপ্তাহের শুরুতে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার ঘোষণা দেয়। একইসঙ্গে তারা জানায়, সরকারি বন্ড কেনার হার ধীরে ধীরে কমাবে। বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য অনিশ্চয়তা, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এই উদ্বেগ থেকে ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।