কক্সবাজারে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদনে জেলাবাসীর আনন্দ-উচ্ছ্বাস

বাসস
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ২০:৫২
ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজার, ২০ মে, ২০২৫ (বাসস) : কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় ক্রয় কমিটি। এই খবরে জেলাবাসীর মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির ২০তম সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। 

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সোহেল বকস বলেন, আমাদের কাছে খবর এসেছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি। এখনো অফিসিয়ালপত্র হাতে আসেনি, হয়তো আগামীকাল চলে আসতে পারে।

উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সোহেল বকস বলেন, আশা করছি, দ্রুতই নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যাবে। নির্মাণ ব্যয় কতো এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ও কাগজ হাতে এলে বলতে পারবো। 

২০০৮ সালে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের পাশে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শুরু হয় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম। এরপর দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৭ সালে ঝিলংজায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে শুরু হয় শ্রেণি কার্যক্রম। কিন্তু হাসপাতাল না থাকায় শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস করতে যেতে হয় ১০ কিলোমিটার দূরে জেলা সদর হাসপাতালে।

জানা যায়,  দেশের প্রধান পর্যটন জেলা কক্সবাজার। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এখানে নিত্যনতুন আধুনিক ও বিলাসবহুল অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে, বাড়ছে শিল্পায়নও। এসব কারণে বাড়ছে জেলায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা। এখানে অস্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কয়েক বছর ধরে এ জেলায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৩-১৪ লাখ মানুষ বাস করছে। পর্যটনে চকচকে অবকাঠামোর বিপরীতে জেলার চিকিৎসা পরিষেবা পড়ে আছে সেই মান্ধাতা আমলে, রুগ্ন দশায়। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ জেলার সাধারণ মানুষসহ দেশী-বিদেশী পর্যটক।

সরকারি হিসাবে কক্সবাজার জেলায় মোট জনসংখ্যা ২৭ লাখ ৯০ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ পর্যটক, কয়েক লাখ অস্থায়ী বাসিন্দার পাশাপাশি ১৩-১৪ লাখ রোহিঙ্গাসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার কর্মী মিলিয়ে কক্সবাজারে বসবাসকারীর সংখ্যা ৪৫ লাখের বেশি। কিন্তু এ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি হিসাবে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা মাত্র ৫৮৬। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ২৫০ শয্যাই মূল শহরের বাসিন্দাদের চিকিৎসাপ্রাপ্তির প্রধান ভরসা। হাসপাতালটিতে ৩২৮টি পদের মধ্যে ৭৬টি শূন্য রয়েছে। জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫শতাধিক রোগী সেবা নিতে আসে। মাত্র তিনজন চিকিৎসক তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে জটিল কিংবা সাধারণ রোগেও কক্সবাজারবাসীকে চিকিৎসা নিতে ছুটতে হয় চট্টগ্রামে শহরে, কক্সবাজার মূল শহর থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। 

কক্সবাজারে স্বাস্থ্য বিভাগে এতো সংকটের মধ্যে মঙ্গলবার নতুন করে সরকার ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ায় জেলা জুড়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদেরও চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। এ ছাড়াও এখানে সমাগম হয় লাখ-লাখ পর্যটকের। সবমিলিয়ে ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল খুবই অপ্রতুল। যেখানে নির্ধারিত আসনের চেয়ে তিন থেকে চারগুণ বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাই কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের অনুমোদন এই অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকবে। 

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নুরুল আলম বলেন, কক্সবাজার জেলা দেশের সর্বদক্ষিণে হলেও বিভিন্ন কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসাসেবা পেতে এখানকার মানুষের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মূল ভরসা। বিশেষ করে এখানে আসা সাধারণ ও ভিআইপি পর্যটক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিদেশি কর্মীরাও এ হাসপাতালের ওপর নির্ভর করেন। অপ্রতুল সুবিধা সত্ত্বেও আমরা এ হাসপাতালের মাধ্যমে সবধরনের রোগীকে চিকিৎসা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। এরমধ্যে নতুন করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের চূড়ান্ত অনুমোদনের কথা শুনে খুবই ভালো লাগছে। এটি শুধু কলেজের জন্য নয়, পুরো জেলাবাসীর জন্য বর্তমান সরকারের একটি বিশেষ উপহার।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের সাঁড়াশি অভিযান ৬৫ জন গ্রেফতার
আওয়ামী লীগ নেতা রানার অপহরণের বিবরণ ভিত্তিহীন : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
বিশেষ অভিযানে ১৯ জন গ্রেফতার 
ভোলাগঞ্জে পাথর লুটপাটে জড়িত ১৪ জনের কারাদণ্ড
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে ৩ ব্যক্তির মৃত্যু
সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় ৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ
নির্বাচন কমিশনের সামনে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশ কাল
টিএনজেড ও মাহমুদ গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হবে : শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা
৪৩তম বিসিএসে ১৬২ জনকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি  
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত নরওয়ের
১০