রোস্তম আলী মণ্ডল
দিনাজপুর, ৩০ মে ২০২৫ (বাসস): আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলার সর্ববৃহৎ পশুর হাট ঘোড়াঘাট উপজেলার রানীগঞ্জে কোরবানির পশু বিক্রি জমে উঠেছে। ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহার আর আট দিন বাকি। ঈদকে সামনে রেখে জমজমাট হয়ে উঠেছে রানীগঞ্জ পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে চলছে ব্যাপক কেনা-বেচা ।
প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রাণীগঞ্জ পশু বিক্রির হাটে পশু বিক্রি হয়। বছর জুড়ে সপ্তাহের এই দুই দিন বড় পরিসরে হাট বসে। তবে কোরবানির ঈদকে ঘিরে প্রতি বছরের মত এ বছরও জমজমাট হয়ে উঠেছে সর্ববৃহৎ এই পশুর হাট।
জেলার ঘোড়াহাট উপজেলার ৩ নং সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শত বছরের পুরোনো এই পশুর হাটে কোরবানির ঈদের আগে কয়েক কোটি টাকার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া কেনা-বেচা হয়। ঈদের শেষ দুটি হাটে বেচাকেনার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু ব্যবসায়ীরা এই হাটে আসেন গরু কেনা-বেচা করতে।
ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩নং সিংড়া ইউনিয়নের দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন রানীগঞ্জ বাজারে অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ এই পশুর হাট কয়েক যুগ ধরে সারাদেশে পরিচিত। তবে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তিন বছর আগে হাটটি প্রায় ৬০০ মিটার দূরে স্থানান্তরিত করেছে হাট কর্তৃপক্ষ। হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পও নির্মাণ করা হয়েছে।
হাটের দিন সকাল থেকেই পুলিশ সদস্যরা সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার হাট ঘুরে দেখা যায়, বিস্তৃত ফসলের মাঠে সাড়ে পাঁচ একর জায়গা জুড়ে হাট বসেছে। হাটের চারপাশে স্থায়ী খাবারের দোকান ও হাট অফিস নির্মাণ করা হয়েছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে হাটের দিন সকাল থেকে ট্রাক, পিকআপ ও নসিমনে দেশিবিদেশি বিভিন্ন জাতের গরু হাটে নিয়ে আসা হয়। গরু, মহিষ ও ছাগল লালনপালনকারি খামারি ও বাড়িতে পালন করা পশুর মালিকেরা তাদের পশু নিয়ে হাটে আসেন । পুরো হাটকে ৪ টি ভাগে ভাগ করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছে হাট কর্তৃপক্ষ। সাইনবোর্ড অনুযায়ী এসব জায়গায় বিভিন্ন আকৃতির ষাঁড়, গাভি, বকনা ও ছাগল সুশৃঙ্খলভাবে বেচাকেনা হচ্ছে। হাটে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার পশু উঠেছে। পছন্দ অনুযায়ী দর কষাকষিতে ব্যস্ত ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ভ্যাটসহ ছাগল প্রতি ১৮০ টাকা এবং গরু প্রতি ৫০০ টাকা হাটের ইজারা আদায় করছেন হাট ইজারা কর্তৃপক্ষ।
এই ঐতিহ্যবাহী হাটে ঢাকা থেকে কোরবানির পশু কিনতে এসেছিলেন, পশু ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ ও জুলফিকার রহমান। তারা বলেন, গত দুই বছর আমরা এই হাট থেকে কোরবানির পশু কিনে নিয়ে গেছি। তুলনামূলক সাশ্রয়ের মধ্যে কম দামে ভালো মানের গরু এখানে পাওয়া যায়।
সাজেদুর রহমান নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমি নেত্রকোণা থেকে এই হাটে পশু কিনতে এসেছি। বিভিন্ন সাইজের ২০ থেকে ৩০টি গরু কেনার টার্গেট আছে। এখান থেকে গরু কিনে নিয়ে গিয়ে ঢাকায় বিক্রি করবো। তিনি বলেন, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে এই হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে গিয়ে বাড়তি লাভ হয়। সেজন্যই কোরবানির ঈদের প্রথম হাটে গরু কিনতে এসেছি।
আমজাদ আলী নামের এক খামারি বলেন, আমি পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে গরু বিক্রি করতে এসেছি। গত তিন বছর ধরে নতুন জায়গায় পশুর হাটটি স্থানান্তর করা হয়েছে। বিশাল এলাকা জুড়ে হাটের জায়গা। নতুন অনেক সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে এই হাটে। পাশাপাশি স্থায়ীভাবে পুলিশ ক্যাম্প থাকায় আমাদের টাকা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না।
হাটের ইজারাদার হাফিজুল ইসলাম বলেন, পুরাতন হাটের পাশে একটি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ অবস্থিত। হাটের দিন শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হওয়ায় গত তিন বছর আগে হাট বর্তমান স্থানে আনা হয়। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আমরা ক্রেতাবিক্রেতাদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি ।
ঘোড়াঘাট থানার ওসি পরিদর্শক মো. নাজমুল হক বলেন, বৃহৎ এই হাটে কোটি কোটি টাকার কারবার হয়। তাই ক্রেতা-বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা হাটে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করেছি। হাটে আসা সকলেই নিরাপত্তার সাথে হাট থেকে ফিরে যেতে পারবেন। এজন্য হাটের দিন পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এই হাটটি পশু বেচাকেনার জন্য সুনাম অর্জন করেছে এবং জেলার সর্ববৃহৎ পশুর হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
ঘোড়াঘাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বাসসকে বলেন, এই হাট থেকে পশু কিনে নিয়ে যাওয়া পশুর চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য হাট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ক্রেতাদের সচেতন করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রয়োজনে ক্রেতাদের হাট কমিটির পক্ষ থেকে লবণ উপহার দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।