\মো. আয়নাল হক \
রাজশাহী, ২৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত বগুড়া-সিরাজগঞ্জ সরাসরি রেলপথ নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
প্রকল্পে ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।
‘কন্সট্রাকশন অব ডুয়েলগেজ রেললাইন ফ্রম বগুড়া টু শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ অব বাংলাদেশ রেলওয়ে’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল বিভাগ। যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৭৯.৭০ কোটি টাকা। পশ্চিমাঞ্চল বিভাগের সদর দপ্তর রাজশাহীতে অবস্থিত।
প্রকল্প পরিচালক ও রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজ বাসস’কে বলেন, গত ১৬ জুন সরকার ১৯শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই অর্থ দিয়ে মোট ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। যার মধ্যে ৪৭৯.১৫ একর বগুড়ায় এবং ৪৮০ একর সিরাজগঞ্জে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অধিগ্রহণ সফলভাবে শেষ হলে ৯৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের জন্য জমি প্রস্তুত করা হবে। এরপর দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে নির্মাণকাজ শুরু হবে।
প্রকল্পের আওতায় বগুড়ার ছোট বেলাইল থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭৩ কিলোমিটার এবং কাহালু থেকে রানীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
শেরপুর, আড়িয়া বাজার, ছোনকা, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ এবং কৃষ্ণদিয়ায় মোট ছয়টি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি দু’টি নতুন জংশন স্থাপন করা হবে রানীরহাট ও সিরাজগঞ্জে।
প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, রেললাইন ছাড়াও নতুন স্টেশন, সেতু, প্রশাসনিক ভবন, বিদ্যুৎ ও সিগনাল সিস্টেম, ওভারহেড সাইন স্ট্রাকচার এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
লাইনটি হবে ডুয়েল গেজ। এতে ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ উভয় ট্রেন চলাচল করতে পারবে, যা এই জেলাগুলির সঙ্গে ঢাকার ভ্রমণের সময় ও দূরত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনবে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে, পরে সেটির সঙ্গে ডুয়েল লাইন যুক্ত করা হবে। এছাড়াও প্রকল্পের আওতায় করতোয়া ও ইছামতি নদীর উপর দুটি সেতু এবং ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। এতে আধুনিক সংকেত ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও থাকবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার মধ্য দিয়ে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগ স্থাপন সহজ হবে।
বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের প্রকৃত দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার হওয়া সত্ত্বেও দুই জেলার মধ্যে বর্তমানে সরাসরি কোন রেলপথ নেই।
তাই এই অঞ্চলের ট্রেনগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছাতে পাবনা, সান্তাহার, নাটোর ও ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।
বর্তমানে বগুড়া থেকে ঢাকায় ট্রেনে যেতে ১১ ঘন্টারও বেশি সময় লাগে, যেখানে সড়কপথে সময় লাগে মাত্র ছয় ঘন্টা।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় কমবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত।
প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ে প্রকল্পটি উত্তরাঞ্চলে ব্যবসা, বাণিজ্য ও যোগাযোগে গতিশীলতা আনবে। ছোট ও মাঝারি শিল্পের পণ্য কম খরচে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে কৃষি পণ্য সবই আরো সাশ্রয়ী মূল্যে ঢাকায় পরিবহন করা সম্ভব হবে।
সামগ্রিকভাবে প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
রাজশাহী চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগের ফলে এই অঞ্চলের কমপক্ষে আটটি জেলার বাসিন্দারা উপকৃত হবেন।
এই প্রকল্প জয়পুরহাট ও নওগাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি আনবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাসুদুর রহমান রিংকু আরো বলেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেল প্রকল্প এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।