কম খরচে মাছের খাবার তৈরিতে সফল কৃষি উদ্যোক্তা মারজান

বাসস
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ২০:১০
কম খরচে পুষ্টিগুণসম্পন্ন মাছের খাবার তৈরিতে সফল কৃষি উদ্যোক্তা মারজান। ছবি: বাসস

|| বাবুল আখতার রানা ||

নওগাঁ, ২৭ জুন, ২০২৫ (বাসস) : কম খরচে পুষ্টিগুণসম্পন্ন মৎস্য খাদ্য তৈরি করে জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন আবদুল্লাহ ইবনে আজিজ মারজান (৪৫)। তিনি জেলার বদলগাছী উপজেলার জিয়ল গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় মৎস্যচাষি মারজান নিজের খামারের মাছের জন্য কম খরচে পুষ্টিগুণসম্পন্ন মাছের খাবার তৈরির পাশাপাশি প্রতিদিন আরো অন্তত ১০ জন মৎস্য চাষিকে মৎস্য খাদ্য সরবরাহ করেন। 

যে খাবার বাজারে ৮০ টাকা কেজি, সেই খাবারই তিনি নিজে তৈরি করছেন ৫০ টাকায়। মারজানের তৈরি মৎস্য খাদ্য অন্য চাষিরাও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। 

পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমী। জেলায় প্রথম এই কৃষি উদ্যোক্তা কম খরচে মাছের খাদ্য তৈরি করায় উপজেলার ১০জন মৎস্য চাষি প্রতিদিন সেই খাদ্য ব্যবহার করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। তাদের মতে, ‘মারজানের তৈরি খাবারে খরচ কম লাভ বেশি’।

বাসসের সাথে আলাপকালে আবদুল্লাহ ইবনে আজিজ মারজান জানান, মাছের খাবারের দাম বেশি হওয়ায় খাদ্য কিনতেই তার লাভের টাকা চলে যায়। তিনি লাভের মুখ দেখতে না পেরে ২০২৪ সালের প্রথম দিকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমীর কৃষি অফিসার শাহারিয়া হোসেনের সাথে দেখা করেন। তার পরামর্শে তিনি সেখান থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মৌসুমী কৃষি ইউনিটের তত্ত্বাবধানে একটি ফিস ফিড তৈরির মেশিন কেনেন। পাশাপাশি মৌসুমী থেকে খাদ্য তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে বাজার থেকে খাদ্য তৈরির উপকরণগুলো কিনে এনে নিজেই খাদ্য তৈরি করেন। শুরু হয় তার জীবনের সফলতার নতুন যাত্রা।

তিনি বলেন, ‘খাদ্যের উপাদান সঠিক ও টাটকা হওয়ায় অল্পদিনেই মাছের গ্রোথ ভালো হয়। বাজারের খাদ্যের দামের তুলনায় এই খাদ্যের দাম প্রতি কেজিতে ২০-২৫ টাকা কম। এ কাজ শুরুর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে পাঁচ বিঘা আয়তনের পুকুর থেকে ২ লাখ টাকা আয় হয়েছে।’ 

বর্তমানে মারজান ৩টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন। যা আগামীতে আরো বড় পরিসরে করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।।

মাছ চাষি আব্দুস ছালাম ও ওবায়দুল হক বলেন, বাজারে যেখানে প্রতি কেজির দাম ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। সেখানে মারজান দিচ্ছেন মাত্র ৫০ টাকা কেজি। আর এখানকার খাদ্য টাটকা। প্রতিদিনের খাদ্য প্রতিদিন তৈরি করে বিক্রি করে। কিন্তু বাজার থেকে যে খাদ্য আমরা নিয়ে আসি সেগুলো ১-২ মাস আগে তৈরি করায় গুণগত মান অনেক কমে যায়। মাছের গ্রোথ হয় না। লাভ কম হয়। আর এখানকার খাদ্য টাটকা হওয়ায় প্রতিদিন নিয়ে গিয়ে পুকুরে দিলে মাছ দ্রুত বড় হয় এবং প্রজননও ভালো হয়। অল্প সময়ের মধ্যে বাজারে বিক্রি করলে বেশি লাভ পাওয়া যায়।
মৌসুমীর মৎস্য কর্মকর্তা শাহারিয়া হোসেন বলেন, পিকেএসএফ-এর সহযোগিতায় মারজানকে আমরা ফিস ফিড তৈরির মেশিন দিয়েছি। বাজারে যে ফিস ফিড পাওয়া যায় সেগুলোতে কি পরিমাণ প্রোটিন ও ভিটামিন দেয়া আছে তা আমরা জানি না। আর বাজারের খাবার তৈরির কয়েক মাস পরেও বাজারে আসে। এতে করে অনেক খাদ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা  থাকে। 

তিনি বলেন, মারজানের মেশিনে তৈরি করা মৎস্যখাদ্যে যতটুকু ভিটামিন এবং প্রোটিন দরকার সে পরিমাণ দেয়া হয়। আর প্রতিদিন তৈরি করে প্রতিদিন মাছকে খাওয়ানো হয়। এতে করে খাদ্যের গুণগত মান ভালো থাকে। খরচ কম হয়। চাষিরাও লাভবান হয়।

তিনি আরো বলেন, পিকেএসএফ এর সহায়তায় জেলায় প্রথমবারের মতো মৌসুমী এই প্রকল্পটি চালু করায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। যার মাধ্যমে নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা মাছ চাষ করে বাড়তি আয় করতে পারবেন। আর এভাবে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হলে দেশের বেকারত্ব কমে আসবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বরিশালে বিএনপি নেতা আফসার হোসেন আলমের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া-মাহফিল
রাজশাহীতে ধর্ষণ মামলার তিন আসামি গ্রেপ্তার
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বাগেরহাটে সাহিত্য সভা
চট্টগ্রামে জলদস্যুর আস্তানায় মিলল শটগান ও কার্তুজ
যুক্তরাজ্যে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন বিক্ষোভে ৪শ’ জনের বেশি গ্রেফতার 
বদরুদ্দীন উমর আর নেই
নওগাঁয় সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক নিহত
ইউক্রেন জুড়ে রাশিয়ার বিমান হামলায় নিহত অন্তত ২ 
ঈদে মিলাদুন্নবীতে বাগেরহাটে বন্দিদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন
মানিকগঞ্জে বিএনপির ৩১ দফা প্রচারে লিফলেট বিতরণ
১০