নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টিতে বন্যার আশঙ্কা, বিচ্ছিন্ন পাঁচ উপজেলা

বাসস
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০৩
নোয়াখালীতে গত দুই দিনের টানা বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে জেলা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা। ছবি: বাসস

।। এ.এস.এম.নাসিম ।।

নোয়াখালী, ৯ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : টানা বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার অধিকাংশ সড়ক। বৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জেলা সদর, সুবর্ণচর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও বেগমগঞ্জ উপজেলার সাথে গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগের সড়কগুলো ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে ডুবে গেছে বিভিন্ন অফিস আদালত ও বিদ্যালয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, নোয়াখালীতে গত দুই দিনের টানা বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে জেলা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। কাঁচা ও আধাপাকা সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারী ও যানবাহনের চালকরা। কোথাও হাঁটুসমান, কোথাও আবার কোমর পানি জমে জনজীবনে সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা। 

নোয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাসসকে জানান,  দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও বন্যার কারণে আক্রান্ত পাঁচ উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম এবং আজ (৯ জুলাই) ও আগামীকালের (১০ জুলাই) পরীক্ষা  স্থগিত করা হয়েছে। 

শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, নোয়াখালী সদর, সুবর্ণচর, সেনবাগ, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান এবং চলমান অর্ধবার্ষিক ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাসমূহ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বাকি চার উপজেলার পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জেলার সদর উপজেলার মাইজদী হাউজিং এলাকার বাসিন্দা সিয়াম বলেন, টানা বৃষ্টিতে পুরো জেলার বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এবং বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হতে পারছে না। সারাদিনের বৃষ্টিতে শহরবাসী অনেকটা গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় পানি জমায় অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন।

নোয়াখালী সদর উপজেলার আন্ডারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে খাল ভরাট ও বসতবাড়ি নির্মাণ, রাস্তাঘাটের করুণ অবস্থা এবং পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষার পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী, কৃষক, দিনমজুর, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলের সড়কগুলো অধিকাংশই পানির নিচে ডুবে গেছে। অনেকের আবার বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। পানিবন্দী এসব মানুষ অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে।

মাইজদীর গোদার মসজিদ এলাকার বাসিন্দা মাহাবুবুল হাসান চৌধুরী রাসেল জানান, গত বছর বন্যা হওয়ার পরও নোয়াখালীর প্রশাসন তা থেকে কোন শিক্ষা নেয়নি। এক বছর হাতে সময় পেয়েও তা কেউ কাজে লাগায়নি। এই এক বছরে যদি নোয়াখালীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা যেত, ড্রেনের সিস্টেমগুলো যদি সচল করা যেতো তাহলে এত অল্প সময়ের মধ্যে আবারো বন্যার মুখোমুখি আমাদের হতে হতো না। গত বছর বন্যায় নোয়াখালী শহরের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বছর না ফিরতেই আবারো তারা ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এতে স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এর জবাবে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা বন্যা থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি। অনেকগুলো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু অবৈধ স্থাপনাগুলো আমরা উচ্ছেদ করে আসার পরপরই আবারো স্থানীয়রা সেগুলো দখলে নিয়ে যায়। এক একটি অবৈধ স্থাপনা একাধিকবার উচ্ছেদ করেও কার্যত কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত স্থানীয়রা সচেতন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসন যত উচ্ছেদ অভিযানই করুক এর সুফল আসবেনা। আমরা চাই স্থানীয় জনগণ আমাদের সহযোগিতা করুক। 

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা গতকাল দিনভর বিভিন্ন উপজেলাতে খবর নিয়ে দেখেছি, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরেও পানি ঢুকে গেছে। শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়েই যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে, সেগুলোর দাপ্তরিক কার্যক্রম ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্থগিত পরীক্ষাসমূহের নতুন সময়সূচি জানানো হবে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে নোয়াখালীতে আরও বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য বন্যার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান জানান, আসন্ন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। এতে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, এক বছর না ফিরতেই আবারও বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে নোয়াখালীর মানুষ। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা বন্যা থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি। বন্যার যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
ফেনীতে বন্যার্তদের মাঝে বিজিবির খাদ্যসামগ্রী বিতরণ
দর্শনার ঝাঝাডাঙ্গায় বিএসএফের গুলিতে নিহতের বাড়িতে নাহিদসহ এনসিপির নেতৃবৃন্দ
ভারতে সেতু ধসে প্রাণহানিতে প্রধান উপদেষ্টার শোক
সীমান্তে পাখির মতো বাংলাদেশিদের হত্যা করছে বিএসএফ: নাহিদ ইসলাম
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু ফাহিমা’র চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান
বাংলাদেশের আকাশে আজ কালো মেঘের ঘনঘটা : হাসনাত আব্দুল্লাহ
কুমিল্লা বোর্ডের ১০ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত
সাত মাসে ৪০ কোটি ডলারের চীনা বিনিয়োগ পেয়েছে বাংলাদেশ: চীনা রাষ্ট্রদূত
সব ধরনের অপরাধ থেকে সুন্দরবনকে মুক্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশ
বনানীতে রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার ভাঙচুর : প্রধান আসামি মনিরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
১০