।। এনামুল হক এনা ।।
পটুয়াখালী, ১৩ জুলাই ২০২৫ (বাসস): জেলার বাউফলের মদনপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মেহেদী হাসানের (৩০) নার্সারিতে দেশি জাতের মালটার ব্যাপক ফলন হয়েছে। তার এই বাগান থেকে উৎপাদিত মালটায় নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীর চাহিদা মেটাচ্ছেন। বাজারজাত করছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মেহেদী হাসান।
সরেজমিনে মালটার বাগানে গিয়ে কথা হয় সফল কৃষি উদ্যোক্তা মেহেদী হাসানের সাথে। তিনি বলেন, আমি বাউফল সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেছি। তারপরে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি চাকরির পিছনে দৌঁড়েছি। সব জায়গায় চাকরির জন্য ঘুষ চায়। আমি ঘুষ ঘৃণা করি। পরে পরিবারকে জানালাম আমি কৃষি কাজ করব। পরিবার আমার চাওয়াকে সমর্থন করে। আমার বাবাও একজন কৃষক ছিলেন। এটি আমার জন্য একটি বাড়তি সুবিধা।
মেহেদী বলেন, কৃষি কাজে নেমে আমি প্রথম দুই বছর অনেক কষ্ট করেছি। লোকসানের মুখোমুখিও হয়েছি। পরে আমার নার্সারিতে বিভিন্ন দেশীয় ফলজ ও বনজ গাছের চারা উৎপাদন করি। মাছের চাষ শুরু করি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । আল্লাহর রহমতে এখন আমার মাসে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হয়।
তিনি আরো বলেন, আমার দেশীয় প্রজাতির মালটায় কোনো ধরনের কেমিক্যাল নেই। বাংলাদেশের বাজারে বিদেশ থেকে যে মালটা আসে তাতে কেমিক্যাল থাকে। শুধু তাই নয়, ওইসব মালটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাই স্থানীয়রা আমার বাগান থেকে মালটা কেনে। তারা কোথাও বেড়াতে গেলেও আমার বাগান থেকে মালটা নেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমি মালটা সরবরাহ করে থাকি।
তার মালটা বাগান এবং নার্সারিতে দুইজন দিনমজুর কাজ করেন। এছাড়াও যখন কৃষিকাজের মৌসুম আসে তখন আরো অনেক দিনমজুরকে কৃষি কাজে নিয়োজিত করা হয়। এতে করে তাদের পরিবারও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেহেদীর বাগান দেখতে অসংখ্য লোকজন আসে। তারা কেউ ফুলের চারা, কেউ ফলের চারা, আবার কেউ ফল কিনতে আসে।
তিনি জানান, জেলা কৃষি অফিস এবং বাউফল উপজেলা কৃষি অফিস সার, বীজ ও কীটনাশকবিরোধী ঔষধসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে। বিশেষ করে তারা উৎপাদন বাড়াতে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেন। কৃষি অফিস থেকে মাঝেমধ্যে ভিজিটেও আসেন কর্মকর্তারা।
মেহেদী বলেন, কৃষি বিভাগের সহায়তায় আমি আজ সফল হতে পেরেছি। তাদের সহযোগিতায় আমি সন্তুষ্ট।
বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মিলন বলেন, একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান। তিনি নিজের নার্সারিতে দেশীয় বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করে থাকেন। তিনি একটি মালটার বাগান গড়ে তুলেছেন। সেখানে প্রায় ১০০-এর মতো গাছ রয়েছে। গত বছর তিনি মালটা বিক্রি করেছেন। এ বছরও তিনি মালটা চাষে সফল হয়েছেন। তিনি দেশীয় ফলের ভাণ্ডারে মালটাকে যুক্ত করেছেন। আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে সকল ধরনের পরামর্শ সহযোগিতা প্রদান করছি। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।