ঢাকা, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আজ মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ঢাকা অঞ্চলের দাবি ও আপত্তির ওপর শুনানি শুরু হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ- ১, ২, ৩, মুন্সিগঞ্জ- ১, ২, ৩, গাজীপুর- ২ ও ৬, নরসিংদী- ৩, ৪ ও ৫, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪, ৫ আসনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
শুনানিতে মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের চারটি আসন পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
অপরদিকে গাজীপুরের একটি আসন বৃদ্ধি করায় শুনানিতে ইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
এছাড়া ভোটার সংখ্যা বেশি হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের একটি আসন বৃদ্ধি করার দাবি জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনজীবীরা। তারা নারায়ণগঞ্জের তিনটি আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি পেশ করেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই শুনানি শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের আসনগুলোর ওপর দাবি ও আপত্তি নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুনানিতে অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের সচিব অংশ নিয়েছেন।
শুনানিতে সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে দাবি ও আপত্তি নিয়ে আবেদনকারী ও আইনজীবীরা শুনানি করেন। দাবি ও আপত্তি বিষয়ে ইসি উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনছেন এবং আইন ও বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন।
এদিকে আজ দুপুর আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ১০, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮ ও ১৯ আসনের ওপর ইসিতে শুনানি চলবে।
মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের চারটি আসন পুনর্বহালের দাবি: মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের চারটি আসন পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন দুইটি জেলার প্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে সংসদীয় আসনের শুনানিতে তারা এ দাবি জানান।
মানিকগঞ্জের প্রতিনিধি ব্যারিস্টার খাইরুল আলম চৌধুরী বলেন, ২০০১ সাল পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলায় ৪টি সংসদীয় আসন ছিল। ২০০৮ সালে মানিকগঞ্জে একটি আসন কমিয়ে তিনটি করা হয়। এতে করে সংসদে মানিকগঞ্জের জনগণের প্রতিনিধিত্ব কমেছে। চারটি আসন থাকায় মানিকগঞ্জে যে বরাদ্দ ছিল, তা কমে গেছে। আমরা চারটি আসনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা বলেন, আমি এখানে এসেছি মানিকগঞ্জের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে। ২০০১ সালের ন্যায় মানিকগঞ্জে চারটি আসনের দাবি মানিকগঞ্জের সকল স্তরের মানুষের দাবি।
ইসি’র প্রশংসা গাজীপুর বিএনপি’র: গাজীপুরবাসীর একটি আসন বাড়ানোয় শুনানিতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ইসিকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে গাজীপুরের প্রতিনিধিরা দাবি-আপত্তির শুনানিতে এসে ছোটখাটো অভিযোগ করলেও একটি আসন বৃদ্ধি করায় তারা ইসি’র প্রশংসা করেছেন।
শুনানিতে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক একেএম ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল গাজীপুরে আসন বাড়ানোর। সিইসি ও অন্য যে নির্বাচন কমিশনার বর্তমানে রয়েছেন, তারা অতীতের যে কোনো সময়ে চেয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় এক নম্বরে রয়েছেন। বেশি প্রশংসা করবো না। আপনারা গাজীপুরবাসীর প্রতি যে বদান্যতা দেখিয়েছেন, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। আপনারা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
শুনানি থেকে বেরিয়ে বিএনপি নেতা একেএম ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘এবার গাজীপুরে ৫টি থেকে ৬টি আসন করেছে; আমরা ইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছি, কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আমাদের ছোটখাটো কিছু দাবি ছিল, অত্যন্ত শালীনতার সাথে তা তুলে ধরা হয়েছে। দুয়েকটি বিষয়ে ইসি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা আমরা মেনে নেবো।’
আগামীকাল চতুর্থ দিনে ২৭ আগস্ট রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও সিলেট অঞ্চলের দাবি আপত্তির ওপর শুনানি হবে। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পঞ্চগড়-১, ২, রংপুর-১, কুড়িগ্রাম-৪, সিরাজগঞ্জ-২, ৫, ৬, পাবনা-১; আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৬, জামালপুর-২, কিশোরগঞ্জ-১, সিলেট-১, ফরিদপুর- ১, ৪, মাদারীপুর-২, ৩, শরীয়তপুর-২ ও ৩ আসনের শুনানি হবে।
এর আগে, গত রোববার প্রথম দিনে কুমিল্লা অঞ্চলের ৬টি জেলার ১৮টি সংসদীয় আসনের পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে দাবি ও আপত্তি নিষ্পত্তি করেছে ইসি।
ওই দিন ইসি’র পুনঃনির্ধারিত সীমানার বিষয়ে ৪২৯টি আপত্তি ও ৩৮২টি পরামর্শসহ মোট ৮১১টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
অপর দিকে গতকাল সোমবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ২০টি আসনের সীমানা নিয়ে দাবি আপত্তির ওপর শুনানি গ্রহণ করেছে ইসি।
ওই দিন ৯ জেলার সীমানা নিয়ে ৫১৩টি আবেদন নিষ্পত্তি করেছে ইসি।
গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮৩টি আসনের সীমানা নিয়ে ১ হাজার ৭৬০টি দাবি আপত্তি জমা পড়ে ইসিতে। এগুলো নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে ইসি।