সাম্য ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামকে যেভাবে লালন করছেন ভোলাবাসী

বাসস
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৩:০৫
নজরুল স্মৃতি সংঘ। ছবি : বাসস

 ।। আল-আমিন শাহরিয়ার।।

ভোলা, ২৭ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : গাহি সাম্যের গান,মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান। সাম্য, বিদ্রোহী ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এমন হৃদয় নিংড়ানো মূল্যবোধকে লালন করে যুগ যুগ ধরে তাকে স্মরণ করে আসছেন দ্বীপ জেলা ভোলাবাসী। এখানকার শিল্প, সাহিত্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতির সাথে কবি কাজী নজরুল ইসলাম নামটি মানুষের মনের গহীনে সর্বদাই উচ্চারিত হচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের দু:খু মিয়া নামের এ মানুষটির বর্ণাঢ্য জীবনের নানা দিকগুলো দেশের যতগুলো অঞ্চলে শ্রেণি পেশার মানুষ ধারন করছেন, ভোলা তার মধ্যে অন্যতম। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহর ভোলার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকের উল্টো পার্শ্বেই অবস্থিত কবির স্মৃতি লালনের কেন্দ্র "নজরুল স্মৃতি সংঘ" নামক সামাজিক এ প্রতিষ্ঠানটি। স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাসের টিফিনের ফাঁকে নজরুল স্মৃতি সংঘে গিয়ে কবির জীবনগাথা কবিতা ও কাব্যসমগ্র অধ্যয়ন করার সুযোগ নিয়ে থাকেন। 

তথ্য অনুযায়ী, নজরুল স্মৃতি সংঘটি ভোলার সমাজ সেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন একটি নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এটির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭৮ সালে। সমাজ সেবা অধিদপ্তরে এর রেজিস্ট্রেশন নম্বর হলো-২৩৬/৭৮। 

সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় সামাজিক এ সংগঠনের তত্ত্বাবধায়ক আলহাজ্ব মো. রাইসুল আলমের সাথে। তিনি বাসসকে বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নীতিনৈতিকতা ও স্মৃতিবিজড়িত জীবনকে অনুকরণ ও অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরা যেনো তা ধারণ এবং লালন করতে পারেন, সে লক্ষ্যেই ১৯৭৮ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের ছাত্র জনতাকে উজ্জীবিত করতে ভোলার একঝাঁক তরুন সমাজের ঐকান্তিক প্রচেস্টায় নজরুলের জীবনকে ধারন করতেই মূলত: নজরুল স্মৃতি সংঘের আবির্ভাব ঘটে। সেই থেকে অদ্যবধি নজরুল স্মৃতি সংঘ মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনালেখ্যকে ধারণ করে আসছেন। এ সংঠনটি নজরুলের লেখা কাব্য, উপন্যাস, ছড়া এবং ছোট গল্পের অসংখ্য বইপত্রের সমাহারে সমৃদ্ধ করে রেখেছেন তাদের "নজরুল স্মৃতি সংঘ"র সংগ্রহশালায়। 

তিনি আরও বলেন, স্মৃতিময় এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সবসময়ই অবদান রাখছে। বৃক্ষ রোপন অভিযান ও সবুজ বনায়নের পাশাপাশি সংগঠনের কবি প্রেমীরা সমাজের সকল ভালো কাজের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখছেন। তাছাড়া প্রতিবছর নজরুল স্মৃতি সংঘ জেলার ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাট মিন্টন, ভলিবল ও দাবা খেলাসহ জাতীয় ও আন্ত:জেলা টুর্নামেন্টগুলোতে অংশ নিয়ে অসংখ্য পুরস্কার অর্জনসহ সুনামের পাল্লা ভারি করেছেন। প্রতিবছর শীত মৌসুমে "নজরুল স্মৃতি সংঘ জেলায় ডে-নাইট ক্রিকেট" খেলারও আয়োজন করে থাকে বলে জানান সংগঠনটির তত্ত্বাবধায়ক রাইসুল আলম। 

ভোলার ঐতিহ্যবাহী বনেদি ধনাঢ্য তালুকদার পরিবারের গর্বিত সন্তান জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হক। মরহুম এই কবির অসংখ্য কবিতার সারথী ছিলেন-জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবি মোজাম্মেল হকের দৌহিত্র ভোলা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু বাসসকে জানান, ভোলার কৃতিপুরুষ জাতীয় মঙ্গলের কবি মোজাম্মেল হকের সাথে ছিল কবি কাজী নজরুল ইসলামের সুনিবিড় সম্পর্ক। সেই সম্পর্কের গভীরতা কতটুকু ছিলো, নতুন প্রজম্মের কাছে তা অজানা। 

তথ্য অনুযায়ী, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি, আর তাঁর আবির্ভাবের পথ তৈরি করেছিলেন কবি মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। মোজাম্মেল হক ছিলেন, একাধারে সাংবাদিক, সংগঠক ও সাহিত্যিক, যিনি নজরুল ইসলামের প্রথম কবিতা 'মুক্তি' ও গল্প 'হেনা' নিজের সম্পাদিত পত্রিকা 'মোসলেম ভারত' ও 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায়' প্রকাশ করেন। তিনি শুধু নজরুলকে কলকাতা আসার আমন্ত্রণ জানাননি, তাকে একজন গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষক ও প্রেরণা হিসেবেও সহায়তা করেছিলেন। তিনি তার লেখা কবিতা, উপন্যাস নিয়ে কবি নজরুল ইসলামের সাথে বসে প্রায়শই পর্যালোচনা করতেন। দুই কবির মৃত্যুর পর মোজাম্মেল হকের পাশাপাশি কবি কাজী নজরুল ইসলামের অর্থবহ জীবনকীর্তি মুসলিম জাগরণের হাতিয়ার হিসেবে প্রচার করতেই কার্যত ভোলার একঝাঁক মুসলিম তরুন নজরুল স্মৃতি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন।

ভোলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভাষা শহীদ স্মৃতি কলেজের অধ্যক্ষ মো. জসিমউদ্দিন বলেন, ছোটবেলায় নজরুল ম্মৃতি সংঘে গিয়েই কবির কবিতা ও জীবনী পড়তাম। বন্ধুরাও আমার সাথে সেখানে যেতা। আমি সেখান থেকেই কবি নজরুল ইসলামের জীবন সম্পর্কে জেনেছি। কবিকে ধারণ ও লালন করছি। 

ভোলা প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক মো. উমর ফারুক বলেন, সরকারের দৃশ্যমান কার্যকর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে "নজরুল স্মৃতি সংঘ" কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে একটি রিচার্স সেন্টার গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তরুন প্রজম্ম কবির জীবনসংগ্রামের অজানা ইতিহাস জেনে নিজেদের জীবনধারা পাল্টাতে পারবে।

ভোলার বহুল প্রচারিত গণমাধ্যম "দৈনিক ভোলারবাণী" পত্রিকার সম্পাদক মাকসুদুর রহমান বাসসকে বলেন, বিগত সরকারের জমানায় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে জেলার একমাত্র গবেষণাগার খ্যাত নজরুল স্মৃতি সংঘটি ছিলো একেবারেই অবহেলিত। তাই নজরুল সম্পর্কে নতুন প্রজম্মের ধারণাকে আরো উজ্জীবিত ও সমৃদ্ধ করতে ভোলার নজরুল স্মৃতি সংঘকে একটি অর্থবহ পূর্নাঙ্গ নজরুল গবেষণাগার করে গড়ে তুলতে তিান সরকারের প্রতি জোড় দাবি জানান। 

নজরুল স্মৃতি সংঘের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয়, ভোলা সদর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, ভোলায় নিবন্ধিত কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে গড়া নজরুল স্মৃতি সংঘটিকে আধুনিক উন্নয়ন অগ্রগতি সাধন করা এখন সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবসহ চাহিদাপত্র পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। 

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বাসসকে জানান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে ভোলায় নজরুল স্মৃতি সংঘের এই ধারাবাহিকতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। নইলে নতুন প্রজম্মের কাছে নজরুলের নীতি, আদর্শ আর মানবতার মূল্যবোধের সংগ্রামের ইতিহাস হারিয়ে যাবে। জেলায় নজরুল স্মৃতি সংঘকে আরো আধুনিকীকরনে যা যা প্রয়োজন সবই করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসনের এই শীর্ষকর্তা। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
পরিদর্শকরা 'ইরানে ফিরে গেছেন' : জাতিসংঘ পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান
সন্দ্বীপের বিভিন্ন হাটে বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ
জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ অনুমোদন
রাকসু নির্বাচন পেছালো, ভোটগ্রহণ ২৮ সেপ্টেম্বর
টাঙ্গাইলে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৭ সদস্য গ্রেফতার
নির্বাচন বানচালের জন্য নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে : ফখরুল
বাঁশখালীতে সরকারি চাল বিতরণে ওজনে কম, জরিমানা
ফেনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে অর্থ সহায়তা এবং শিক্ষাবৃত্তি প্রদান
ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনায় চিঠি : ফেমার কর্মীদের বরখাস্ত
চাদে শরণার্থী শিবিরে কলেরা প্রাদুর্ভাবে ৬৮ জনের মৃত্যু
১০