ঢাকা, ২৮ আগস্ট, ২০২৫ (বাসস) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের আগে অতিগুরুত্বপূর্ণ ২৪টি কাজ তুলে ধরে বিস্তারিত এই কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন।
২৪ দফা এই কর্মপরিকল্পনায় ভোটার তালিকা প্রণয়ন, অংশীজনের সাথে সংলাপ, নির্বাচনী আইন-বিধি সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন-বিধিমালার সংশোধনী একীভূতকরণ এবং ম্যানুয়েল-নির্দেশিকার প্রণয়ন, ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, পোস্টার, পরিচয়পত্র ইত্যাদি মুদ্রণ; প্রশিক্ষণ, নির্বাচনী দ্রব্যাদি সংগ্রহ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও নির্বাচনী দ্রব্যাদি ব্যবহার উপযোগীকরণ, নির্বাচনী বাজেট প্রস্তুত ও বাজেট বরাদ্দ সংক্রন্ত কার্যক্রম, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নির্বাচনের জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম, আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ ও সভা বিষয়ক কার্যক্রম, আইসিটি সহায়তা সংক্রান্ত, রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারণা, প্রচার, উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সুসংহতকরণ, ফলাফল প্রদর্শন, প্রচার ও প্রকাশ বিষয়ক ব্যবস্থা গ্রহণ, পোস্টাল ভোটিং এবং বিবিধ বিষয়।
অংশীজনের সাথে সংলাপ: কর্মপরিকল্পনায় নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজ ও নারী সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম সম্পাদক ও সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের সাথে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরু করে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সংলাপ করার কথা বলা হয়েছে।
ভোটার তালিকা প্রণয়ন: ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে জন্মগ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে ১০ আগস্ট খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং দাবি, আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এছাড়া আর ৩১ অক্টোবরের সম্পূরক তালিকা শেষে ৩০ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ।
নির্বাচনী আইন-বিধি: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২, সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০২৫ আগামী ৩১ আগস্ট আইনমন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। নির্বাচন পরিচালনা (সংশোধন) আইন ২০২৫; নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ সংশোধনের কাজ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠারো হয়েছে, যা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার আশা করছে ইসি।
কর্মপরিকল্পনায় নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন কার্যক্রম ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজও ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে।
ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, পোস্টার, পরিচয়পত্র ইত্যাদি মুদ্রণ: নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকার ম্যানুয়েল ও নির্দেশিকা মুদ্রণের জন্য প্রস্তুতকরণ, নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা মুদ্রণের জন্য প্রস্তুতকরণ, বিভিন্ন প্রকার পরিচয়পত্র, পোস্টার ইত্যাদি প্রণয়ন, বিভিন্ন প্রকার ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা, পোস্টার, পরিচয়পত্র মুদ্রণাদেশ প্রদান, প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা চূড়ান্ত করে মুদ্রণাদেশ প্রদান এবং ম্যানুয়েল মুদ্রণ সম্পন্ন করে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট প্রেরণের কার্যক্রম ১৫ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ভোটগ্রহণের তারিখের ২৫ দিন পূর্বে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচনে জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা: ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও পরিচালনার জন্য জনবলের সংখ্যা নিরূপণ এবং পদায়ন/সংযুক্তির জন্য আদেশ প্রদান। নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট জনপ্রশাসন ও পুলিশ বিভাগে কোন পদ শূন্য থাকলে উক্ত পদ পূরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও নিরূপণ মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রমাণ করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কার্যক্রম: স্বরাষ্ট্র এক সপ্তাহ আগে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপসচিব (নিকষ), পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার ও ভিডিপি (উপসচিব/পুলিশ সুপার/ পরিচালক/উপপরিচালক পদমর্যাদার), সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর (মেজর/ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার) সদস্য এবং ডাক অধিদপ্তর, সিভিল অ্যাভিয়েশন, ন্যাশনাল টাস্কফোর্স, সাইবার সিকিউরিটি টাস্কফোর্স, সাইবার রেসপন্স টিম, এনটিএমসি ও অপরাপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল গঠন।
নির্বাচনের পূর্বের দিন ভোটকেন্দ্রের নির্বাচনি মালামাল বিতরণের পূর্বে ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের সংশ্লিষ্ট এলাকার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসার, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিসার, উপজেলা নির্বাচন অফিসার কর্তৃক ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত ব্রিফিং।
আইসিটি সহায়তা সংক্রান্ত: নির্বাচন সংক্রান্ত সব আপডেট সফটওয়্যার ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আইসিটি অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করবেন।
পোস্টাল ভোটিং ও ব্যালট: প্রকল্প অনুমোদন, সফটওয়্যার চূড়ান্ত, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, নিবন্ধন ও প্রাকটিসিং মডিউল, প্রচারের কাজ অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে।
রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারণা: জাতীয় সংসদের নির্বাচনি আসন ভিত্তিক রিটার্নিং অফিসারের তত্ত্বাবধানে একই প্ল্যাটফর্মে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে ভোটার ও অংশীজনের উপস্থিতিতে নির্বাচনি ইশতেহার/ঘোষণাপত্র। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তনুসারে বিটিভি এবং বাংলাদেশ বেতারের সম্প্রচার। অন্যান্য চ্যানেল ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়াও প্রচার করতে পারবে।
এছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দুই মাস পূর্বে হেলিকপ্টার সহায়তার প্রয়োজন হবে এমন ভোটকেন্দ্র বাছাই করে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র, কক্ষ সংখ্যা, নিকটবর্তী হেলিসর্টি, যাত্রা শুরু ও শেষ এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য তথ্য জানানোর জন্য জেলা নির্বাচন অফিসার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়িকে নির্দেশনা প্রদান করা হবে।