ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ড. ইউনূসের মধ্যে জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি দেখছি।’
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শনিবার ‘এনআরবি কানেক্ট ডে: এমপাওয়ারিং গ্লোবাল বাংলাদেশি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মির্জা ফখরুল যখন এ বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, ‘ড. ইউনূস দূরদৃষ্টি সম্পন্ন। দুনিয়াজোড়া তার সুনাম। তিনি দেশকে একটি কাঙ্ক্ষিত মানে দেখতে চান। এটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানেরও চাওয়া ছিল। আমি ড. ইউনূসের মধ্যে আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত পরশু, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সভা হচ্ছিল। সেখানে সকলের সম্মানিত, বিশ্বের সম্মানিত প্রফেসর ইউনূস যখন কথা বলছিলেন, আমার বারবার মনে হচ্ছিল, আমি এ দেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথা শুনছি। যে স্বপ্ন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেখেছিলেন, বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশে পরিণত করবেন, তার সকল কথা সেই সময় প্রফেসর ইউনূসের কথায় বেরিয়ে আসছিল।’
বক্তব্যের শুরুতে ফখরুল বলেন, ‘আমাকে সবচেয়ে মুরুব্বি বলে পরিচিত করিয়ে দেওয়া হলো। আমি নিজে কিন্তু এখনো আখতারদের (এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন) সঙ্গী মনে করি। কারণ আজীবন লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি এবং এখনো লড়াই করেই চলেছি। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম, লড়াই এটা তাদের মজ্জাগত। যে কোনো বিপদে, যে কোনো দুঃসময়ে সবাই এক হয়ে লড়াই করতে জানে, তার প্রমাণ জুলাই দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু প্রতিবার লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে। যেদিন থেকে একটা দুঃসহ, একটা দানবীয় শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের ওপর চেপে বসেছে, সেদিন থেকেই বাংলাদেশের মানুষ লড়াই শুরু করেছে। প্রত্যেকটি মানুষ এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। যেমন করেছে আপনার সেই তেঁতুলিয়ার গ্রামের মানুষ, ঠিক তেমনি আপনারা এখানে এই প্রবাসে থেকেও লড়াই করে যাচ্ছেন।’
তরুণদের ওপর নিজের আস্থার কথা তুলে ধরে ৭৭ বছর বয়সী ফখরুল বলেন, ‘আমি একটা কথা খুব স্পষ্ট করে, দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে আমরা যারা বয়োজ্যেষ্ঠ আছি, আমরা অনেকগুলো লড়াই করেছি। আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি, পরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে স্বপ্ন দেখতে হবে। আর সবচেয়ে বেশি দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার। আমি শুধু আপনাদের এ কথা বলতে চাই যে আমরা আধুনিক চিন্তা করি। আমাদের পরবর্তী জেনারেশন, আমাদের সামনের ছেলেরা, আমাদের মেয়েরা, তারা নিঃসন্দেহে অনেক বেশি আধুনিক চিন্তা করে। সেটাকে ধারণ করার মতো মানসিকতা আমাদের আছে এবং সেটাকে প্রমোট করার মতো সংগঠন আমাদের করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের যাদের কথা এখানে শুনলাম তাতে আমি আরও আশাবাদী যে এই নতুন জেনারেশন তারা নিঃসন্দেহে দেশের নতুন সংগ্রামে, নতুন লড়াইয়ে, নতুন স্বপ্নের মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আর পাঁচ মাস পর দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই সরকার গঠন করবে, তারাও এভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে বলে আশা করি।’
অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ড. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নিউইয়র্ক সফরে রয়েছেন দেশের ছয়জন রাজনৈতিক নেতা। তাদের মধ্যে মির্জা ফখরুলও আছেন। এ প্রতিনিধিদলে আরও রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামী সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জামায়াত নেতা মোহাম্মদ নকিবুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির আখতার হোসেন এবং ডা. তাসনিম জারা।