খুলনা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী আমীর এজাজ, জামায়াতের কৃষ্ণ নন্দী

বাসস
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৫০
খুলনা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী আমীর এজাজ ও জামায়াতের কৃষ্ণ নন্দী। ছবি: বাসস

।। মুহাম্মদ নূরুজ্জামান ।। 

খুলনা, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। আজ বিকেলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্যান্য আসনের প্রার্থীদের সাথে খুলনা-১ আসনে আমীর এজাজ খানের নাম ঘোষণা করেন। 

অপরদিকে, এ আসনের প্রার্থী মনোনয়নে বড় চমক দেখিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। প্রাথমিক পর্যায়ের মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করে সংগঠনটির হিন্দু শাখার নেতা কৃষ্ণ নন্দীকে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনা জেলা জামায়াতের আমির মওলানা এমরান হোসাইন বুধবার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এর আগে গতকাল বুধবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে খুলনা মহানগর জামায়াত কার্যালয়ে জেলার কর্মী সমাবেশে তাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি জেনারেল ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। নিজের প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কৃষ্ণ নন্দীও। জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাসে এবারই প্রথম অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তিকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলো। যা স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর আগে খুলনা-১ আসনে মওলানা মো. আবু ইউসুফকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল জামায়াত।

গত এক মাস ধরে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কৃষ্ণ নন্দীর নাম রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনে তাকে প্রার্থী করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী কৃষ্ণ নন্দীর গ্রামের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায়। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু সংগঠন ‘জামায়াতে ইসলাম সনাতনী’ শাখার সভাপতি। এ উপজেলা ও ফুলতলা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। গত প্রায় এক বছর ধরে গোলাম পরওয়ারের ডুমুরিয়া ও ফুলতলায় বিভিন্ন সমাবেশে কৃষ্ণ নন্দীর সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেছে। তার নেতৃত্বে হিন্দু নারী-পুরুষের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো।

মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, ‘আমাকে কেন্দ্রে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে জামায়াতের আমিরসহ উচ্চপর্যায়ের নেতারা ছিলেন। তারা আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। আমি তাদের নির্দেশনা পেয়েছি। এলাকায় গিয়ে কাজ শুরু করব। ’

এর আগে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন মওলানা আবু ইউসুফ। তাকে নিয়ে প্রশ্ন করলে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, বুধবার জামায়াতের আমির আমাদের দুজনকে বুকে বুক মিলিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই আমার জন্য প্রচারণায় নেমেছেন। তা ছাড়া জামায়াতের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’

জানা গেছে, ডুমুরিয়ার চুকনগর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণ নন্দী ২০০৫ সালে জামায়াতে ইসলামে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি এবং স্থানীয় সনাতন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কঠোরভাবে আদর্শভিত্তিক জামায়াত হলো ন্যায়-সততার দল। এখানে দুর্নীতি নেই, চাঁদাবাজি নেই, মাদক নেই। শান্তি-সমৃদ্ধি আনার দল বলে আমি জামায়াতকে বেছে নিয়েছি। ২০০৫ সাল থেকে এই দল করছি। হঠাৎ করে যুক্ত হইনি।’ 

আগের সরকারের আমলে কোণঠাসা ছিলেন বলে অভিযোগ করেন কৃষ্ণ নন্দী। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দাপটে থাকা এই এলাকায় তিনি জামায়াত করার কারণে বিভিন্নভাবে চাপের মুখে ছিলেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

কৃষ্ণ নন্দী জানান, 'গত ১ ডিসেম্বর জামায়াত ইসলামীর আমির ড. শফিকুর রহমান খুলনায় এলে তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তাকে ও আগের প্রার্থী মওলানা ইউসুফকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমাকে প্রার্থী হিসেবে কাজ করতে বলা হয়। মওলানা ইউসুফও আমার সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।'।

খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুন্সী মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। বাবু কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী করা হয়েছে। দলের সিদ্ধান্তে সবাই ঐকমত্যে দাড়িপাল্লার হয়ে কাজ করবেন।’

সাবেক প্রার্থী মওলানা আবু ইউসুফ বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমাকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে। আমি কৃষ্ণ নন্দীর বিজয়ের জন্য সর্বাত্মক কাজ করব। তার পক্ষে আমি প্রচারণা শুরু করেছি। যেহেতু আমাকেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে, সেহেতু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি যথাসম্ভব কাজ করব, ইনশাল্লাহ।’

অপরদিকে, খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেলেন খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান। এর আগে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতা জিয়াউর রহমান পাপুল সক্রিয়ভাবে জনসংযোগ চালালেও দল শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মী, স্থানীয় বাসিন্দা আমির এজাজ খানের ওপরই আস্থা রেখেছে।

২০০১ সালে প্রথমবার খুলনা-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান আমির এজাজ খান। সে নির্বাচনে তিনি পান ৪৭ হাজার ৫২৩ ভোট। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার ভোট সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৮ হাজার ৪২০। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ২৮ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়েছিলেন।

দীর্ঘ প্রায় তিন দশকের রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি দাকোপ-বটিয়াঘাটা এলাকায় কাটিয়েছেন। মামলা-হামলার ভীতিকে উপেক্ষা করে সবসময় মাঠে থাকার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে আমির এজাজ খান বলেন, আমি সব সময় মাঠেই ছিলাম, এখনো আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। ধানের শিষ নিয়ে লড়তে প্রস্তুত। দাকোপ একটি ভাঙনকবলিত এলাকা। এখানে উন্নয়ন হয়নি, বটিয়াঘাটায় নামেমাত্র উন্নয়ন হয়েছে। সুযোগ পেলে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
হাদিকে গুলির ঘটনা নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত : ইসলামী আন্দোলন
ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারে কাজ করছে ডিএমপি
আবদুল মোমেন খান দেশে সর্ব প্রথম দারিদ্র্য ও খাদ্য সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটান : মঈন খান
অতীতের যে কোনো সময় থেকে সবচেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : তারেক রহমান
শিল্পকলায় আগামীকাল মঞ্চস্থ হবে যাত্রাপালা ‘কাশেম মালার প্রেম’
ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় বাংলাদেশ ন্যাপের উদ্বেগ ও নিন্দা
ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলায় গণঅধিকার পরিষদের তীব্র নিন্দা
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে হেইমটেক্সটিল ২০২৬ -এ অংশ নিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
কুমিল্লায় বিএনপি’র ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ 
আকাশ-জারিফের নৈপুণ্যে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দল
১০