ইফতারির একাল সেকাল

বাসস
প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৫, ১৩:৪৭ আপডেট: : ১০ মার্চ ২০২৫, ১৪:২৯
প্রতীকী ছবি

।। দিলরুবা খাতুন।।

মেহেরপুর, ১০ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : রোজার মাস জুড়ে ইফতার এখন এক ধরনের সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে। রোজার মাস জুড়ে যে কেবল রোজাদাররাই ইফতার করেন এমন নয়। ইফতার করেন বেরোজাদারও। অন্য ধর্মের মানুষও আয়োজন করে ইফতার করতে ভালোবাসেন। রোজার দিনে প্রতিবেশীদের ধর্ম পালনের ব্যাপারেও সংবেদনশীল থাকেন অন্য ধর্মের লোকেরা। 

ইফতার যেমন রোজার এক অপরিহার্য অংশ, তেমনি বাঙালী জীবনে ইফতার এক অনিবার্য সংস্কৃতি। রোজার মাসে ইফতারের সংস্কৃতি দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। ৫০ বা ৬০ বছর আগে যে আয়োজনে ইফতার হতো, এখন তা অনেকটাই বদলেছে। আবার প্রতিবছরই ইফতারের সংস্কৃতিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অনুষঙ্গ।   

‘স্বাধীনতাপূর্বে আমাদের বাড়িতে মা দাদিরা চাল-পানি, মুড়ি-মুড়কি, চিড়া-দই, কলা, আতপ চালের ক্ষির, সেমাই, হালুয়া আর বাড়ির আঙ্গিনার গাছের টাটকা শসা ও গুড়ের শরবত দিয়ে ইফতার করতাম। তখন বিরানী, পেঁয়াজু, খেজুর, চপ, বেগুনি  এসব ছিলনা,’জেলা শহরের মুখার্জি পাড়ার বয়োবৃদ্ধ রহিমা খাতুন তার কৈশরের রমজান মাসের স্মৃতিচারণ করলেন এভাবেই। 

চলছে পবিত্র রমজান মাস। এই মাস মুসলিম উম্মাহর সিয়াম সাধনার মাস। এই মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিনভর রোজা থাকার পর সূর্যাস্তের সময় রোজা ভেঙ্গে ইফতার করেন নানান ধরণের খাবার দিয়ে। ইফতারে এই অঞ্চলের ঐতিহ্য ও রীতি অনুযায়ী খাদ্য সামগ্রী গ্রহণ করে থাকেন।

প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ইফতারিতে আখের গুড়ের শরবত অথবা আখের রস থাকে। এছাড়াও থাকে ফলের রস, খেজুর, তরমুজ, আনারস, মাল্টা, আপেল, জিলাপি, বুন্দিয়া, রুটি, পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, চপ, দই চিড়া, মিষ্টি খাবার, খিচুড়ি, বিরানী ইত্যাদি। উৎসবের আমেজেই ইফতার করেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। 

এ অঞ্চলে আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবও প্রতিবেশীদের নিয়ে ইফতার করার প্রচলনও যুগ যুগ ধরে। যার এখনও ব্যত্যয় ঘটেনি। এক বাড়ির ইফতার আশপাশের বাড়িতেও বিনিময় করার রেওয়াজ আছে দীর্ঘকালের। অনেক পরিবার নিজ মহল্লার প্রতিটি বাড়িতে রোজার মাসে যেকোনো একদিন ইফতারির প্যাকেট সরবরাহ করে। সামর্থবানরা কেউ আবার মসজিদের মুসল্লিদের একদিনের ইফতারির দায়িত্ব নেন ।

ইফতারির  বৈচিত্র্যের সাথে বেড়েছে ইফতারির ব্যবসাও। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগেও বাজারে হাতে গোনা কয়েকটি ইফতারির দোকান বসত। কিন্তু এখন ইফতারির দোকান যেন এক প্রতিযোগিতা। কে কত ধরনের ইফাতারি বিক্রি করবে। মানুষের রুচির সাথে ইফতারির ধরণও বদলেছে। 
এই রমজান মাসজুড়ে বাহারি পসরায় সেজে উঠেছে মেহেরপুরের ইফতার বাজার। মুসলিম অধ্যুষিত  মেহেরপুর জেলা। সর্বত্রই বড় দোকান থেকে শুরু করে মহল্লার ছোট দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলোতেও বাহারি ইফতার নিয়ে বসেন দোকানিরা। দুপুর থেকে তোড়জোড় শুরু হলেও কেনাবেচা শুরু হয় বিকেল থেকে। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসতেই বিক্রেতাদের হাঁকডাক বেড়ে যায়। সাধারণ ইফতারে ফল এবং খেজুর অন্যতম। সবাই তার সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতারে ফল রাখেন। যদিও এক সময় উঠোনের কোনে বেড়ে ওঠা মৌসুমী ফলই ছিলো ইফতারের প্রধান খাদ্য। আমের দিনে আম, কাঁঠালের দিনে কাঁঠাল , কলা, পেঁয়ারা, পেঁপে এসবই ছিলো ইফতারের উপকরণ।  

শহরের ফলের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খেজুর, পেঁপে, তরমুজ ও কলার চাহিদাই বেশি। রোজার দিনগুলোয় ফলের চাহিদা বাড়ে। ইফতারিতে সাধারণত ৫-৬ রকম ফল থাকে। ভাজাপোড়ার দামও মোটামুটি সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে। পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, ডাল বড়া, ডিমের বড়া, ছোলা ভাজা, জিলাপি, বুন্দিয়া - এসবই পাওয়া যায়। 

এসব ইফতারি যেমন আলাদা করে কিনে পরিবার বা অফিসে বসে ইফতার করা যায়। তেমনি সব ধরনের  ইফতারের বক্স বা প্লেটও বিক্রি হয়। এ ধরনের প্লেটও কেনেন সাধারণ ক্রেতারা। তবে এসবের চল বেশি রয়েছে চাকুরিজীবীদের মধ্যে। গত কয়েক বছর ধরে কিছু ধর্মপ্রাণ যুবক রমজান মাসজুড়ে বিনালাভের ইফতারি বাজার খুলে বসেন শ্রমজীবী ও পথের মানুষের জন্য। যেখানে কোন লাভ করা হয় না।

ইফতার ক্রেতা মুকুল হোসেন বাসসকে বলেন, এবছর আলু, পেঁয়াজ, তেলের দাম কমলেও  পেঁয়াজু, চপ, সিঙ্গাড়ার দাম কমেনি। অন্য মাসের চেয়ে রমজান মাসে  প্রতিটি ফলের দাম বেশি। তারপরও অন্য বছরের তুলনায় এবার একটু দাম কম।

মেহেরপুরে ইফতারির বাজারে বেচাকেনায় ভিড় প্রথমদিন থেকেই। ফল বিক্রেতা সেলিম জানান, কি আর করা যাবে। সব জিনিসের দাম বাড়ছে। সাথে সাথে সবধরণের ফলের দামও বেড়েছে। রোজার কয়টা দিন মানিয়ে নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
দুদক নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন করেছে রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড ও ওয়ান ইন্ডিয়া : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
দরিদ্র দেশের শিশুদের জন্য টিকা কিনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রত্যাহারে ‘হতাশ’ গ্যাভি
বরিশাল ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত ভিসি নিয়োগে তৎপর সার্চ কমিটি 
রাবি উপাচার্যের সঙ্গে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ 
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাস্তবতায় প্রস্তুতির বিকল্প নেই : পরিবেশ উপদেষ্টা
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান
গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের নিষ্ঠার প্রশংসা করেছেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
সরকারি হাইস্কুলের ওয়েবসাইট ও বেসরকারি শিক্ষক বদলির সফটওয়্যার চালু হবে আগামী মাসে 
“ঢাকা-বেইজিং-ইসলামাবাদ জোট” গঠনের বিষয়টি নাকচ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
জার্মানিতে দক্ষ বাংলাদেশিদের বৈধ অভিবাসনের সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান ঢাকার 
১০