// আল-আমিন শাহরিয়ার //
ভোলা, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দেশের মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন দ্বীপ জেলা ভোলা। আবার এ জেলার মূল ভূমি থেকে একেবারেই বিচ্ছিন দ্বীপ মনপুরা উপজেলা। এ উপজেলায় আসা-যাওয়ার একমাত্র নির্ভরযোগ্য বাহনই হচ্ছে সরকারি সি-ট্রাক। রাষ্ট্র পরিচালিত এ সি-ট্রাকটি ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার মেঘনাঘাট থেকে-মনপুরা নৌরুটে চলাচল করে থাকে। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গত ৯ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহি সি-ট্রাক এসটি ইলিশা।
সূত্র অনুযায়ী, প্রতিদিন এ নৌরুট দিয়ে মনপুরায় সহস্রাধিক যাত্রী আসা-যাওয়া করে থাকেন। জেলা শহরের সাথে এই বিচ্ছিন্ন উপজেলার যোগাযোগের একমাত্র নৌপথের নিরাপদ সি-ট্রাকটি গত ৯ দিন ধরে বন্ধ থাকায় দুইপাড়ের মানুষের অবর্ণনীয় দুর্গতি দেখা দিয়েছে। এদিকে সি-ট্রাক বন্ধের সুযোগ নিয়েছে কিছু অসাধু ট্রলার ব্যবসায়ীরা। ফলে অনুমোদনহীন এসব অবৈধ ট্রলারে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন,যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই জনপদের চারপাশে উত্তাল নদী মেঘনা এবং সাগর মোহনার সম্মূখে অবস্থিত দ্বীপ মনপুরা উপজেলা। তাছাড়া বর্ষা মৌসুম বিদ্যমান থাকা এবং এ রুটটি সরকার ঘোষিত মেঘনার ডেঞ্জারজোন হওয়ায় যে কোন মূহুর্তে এখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, মনপুরা উপজেলার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসাই হচ্ছে নৌপথ। তাদের এই নৌপথ পাড়ি দিতে হয় সি-ট্রাকে। নির্ভরযোগ্য সরকারি বাহনটি যান্ত্রিক ক্রটির কারণে বন্ধ থাকায় এখানে ছোট ছোট একতলা লঞ্চ ও অবৈধ ট্রলারের মাধ্যমে মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিসি থেকে মো. নুরুউদ্দিন মিয়া ইয়ানুর এন্টারপ্রাইজ এর নামে ইজারা নিয়ে মনপুরা-তজুমুদ্দিন নৌরুটে সি-ট্রাকটি পরিচালনা করছে। গত মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন, টেন্ডারে পাওয়া সি-ট্রাক কর্তৃপক্ষের নিয়োজিত সুকানি মো. নিরব।
সরেজমিন গিয়ে ভুক্তভোগী তজুমদ্দিনের মেঘনা পাড়ের ঘাটে মনপুরাগামী যাত্রী শহিদ তালুকদার, রমজান মাঝি, উমর ফারুক, নুরজাহান, আমেনা বেগম ও রফিজল মাঝির সাথে কথা হয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, বিআইডব্লিউটিসি থেকে টেন্ডারে পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইয়ানুর এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মো. নুরুউদ্দিন সি-ট্রাকটি মেরামত না করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অনুমোদনহীন অবৈধ ট্রলারে যাত্রী পারাপার করছেন। এতে যে কোন সময় মেঘনার এই ডেঞ্জারজোনে দুর্ঘটনার আশংকা করছেন যাত্রীরা। তারপরও বাধ্য হয়ে দুর্ভোগ সহ্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন উপকূলবাসী।
আরও একাধিক যাত্রী বলেন, আমাদের উপায় নাই, তাই দুর্ভোগ সহ্য করে যাতায়াত করছি। এ নৌরুটটিতে একাধিক নিরাপদ সি-ট্রাক সবসময় চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। এছাড়াও সি-ট্রাক চালু না হওয়ায় অনেক গর্ভবর্তী মা ও রোগী জেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেনা বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সি-ট্রাক টেন্ডারে পাওয়া ঠিকাদার নুরুউদ্দিনের পক্ষে মো. নিরব উদ্দিন জানান, যান্ত্রিক ত্রুটির মেরামতের কাজ চলছে। দুই-একদিনের মধ্যে সি-ট্রাকটি চালু হবে। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অনুমোদনহীন ট্রলারে যাত্রী পারাপারের ব্যাপারে কিছু বলতে নারাজ তিনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিটিসি)’র ভোলা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মো. কাওছার হোসেন বাসস'কে জানান, সি-ট্রাকটি যান্ত্রিক ত্রুটির কাজ শেষ করে ফের চলাচল করবে। যাত্রীদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটি)এর ভোলা অঞ্চলের বন্দর কর্মকর্তা মো. রিয়াদ হোসেন বাসস'কে জানান, ওই এলাকায় অবৈধ নৌযান চলাচল বন্ধে ইতোমধ্যেই যথাযথ টিম পাঠানো হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (বরিশাল অঞ্চল) খন্দকার তানভীর বাসসকে জানান, যান্ত্রিক ত্রুটির কাজ শেষে সি-ট্রাক চলার কথা। ২ দিন আগে টেন্ডারে পাওয়া নুরুউদ্দিনকে অফিসে ডেকে সি-ট্রাক চালুর বিষয়ে বলেছিলাম। ফের তাকে ডেকে দ্রুত চালু করতে বলা হবে। দ্রুত সি-ট্রাক চালু না করলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।