/বিপুল ইসলাম/
লালমনিরহাট, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল। এ সময় আকাশ কখনো মেঘে ঢাকা, কখনো আবার উজ্জ্বল নীলিমায় ভরপুর। এরই মধ্যে নামে হালকা বৃষ্টি। রোদ, মেঘ আর বৃষ্টির এই খেলা যেন ঋতুবদলের সুরেলা আয়োজন করে প্রকৃতিতে। তাই ভোরে কুয়াশার নরম চাদর আর হালকা হিমেল হাওয়ায় প্রকৃতি জানিয়ে দিচ্ছে—শীতের বার্তা।
গত কয়েকদিন ধরে উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা পড়ছে। শিশিরভেজা ঘাসের ডগায় মুক্তোর মতো ঝলমল করা বিন্দু, গাছের পাতায় কুয়াশার আবরণ আর ধানের ক্ষেতে শিশিরের ঝিলিক—সব মিলিয়ে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে স্নিগ্ধ ও শান্ত।
আজ সোমবার ভোর থেকে সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে। জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গাছের পাতা ও সবুজ ধানের ক্ষেত শিশির বিন্দুতে ভিজে রয়েছে। দিনমজুর ও কৃষকরা মাঠে কাজ করতে গিয়ে টের পেয়েছেন শীতের আগাম স্পর্শ।
জেলা সদরের বড়বাড়ী এলাকায় সকালে দেখা হয় স্থানীয় কলেজ শিক্ষক বিপ্লব পালের সঙ্গে। তিনি বাসস’কে বলেন, আমি প্রায়ই সকালে হাঁটতে বের হই। কয়েকদিন ধরে ভোর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কুয়াশা দেখছি। তবে আজকে একটু বেশি মনে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে শীত দরজায় কড়া নাড়ছে।
আর এক পথচারী আনিসুল হক জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে রাতের গরম অনেকটাই কমেছে। এ জন্য সন্ধ্যার পর মধ্য রাত থেকেই কুয়াশা নেমে আসছে। আজ ভোরে পুরো এলাকা কুয়াশায় ঢেকে ছিল, যদিও সকাল সাড়ে ৭টার পর সূর্যের দেখা মিলেছে।
একই বিষয়ে কৃষক আবু সালাম আলী বলেন, সকালে কুয়াশা দেখা গেলেও এখনো শীত শুরু হয়নি। তবে রাতের শেষ ভাগে ফ্যানের স্পিড কমিয়ে দেই। এবার আগেভাগেই কুয়াশা দেখে মনে হচ্ছে, শীত ভালোভাবেই পড়বে।
স্থানীয়রা বলছেন, প্রকৃতি যেন আগেভাগেই শীতকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। কাশফুল, শিশিরবিন্দু এবং মৃদু কুয়াশার মিলন শরতের সৌন্দর্যকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
পাশাপাশি প্রকৃতির এই পরিবর্তন শুধুই দৃশ্যমান সৌন্দর্য নয়, বরং আসন্ন শীতের আগমনের প্রাকৃতিক বার্তাও বয়ে এনেছে।
আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়ে চিকিৎসকেরা সতর্ক করেছেন সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে। তাদের মতে, এই সময়ে ঠান্ডা-গরমের ওঠানামার কারণে সর্দি-কাশি ও শীতজনিত রোগ বাড়তে পারে।
লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল মোকাদ্দেম জানান, শরৎকালে দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে। এর সঙ্গে কুয়াশা দেখা দিলে ঠান্ডা-গরমের প্রভাবে মানুষের শরীরে অভিযোজন সমস্যা দেখা দেয়। ফলে সর্দি-কাশিসহ মৌসুমি রোগের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরী। পাশাপাশি ধুলাবালি ও কুয়াশা থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, কয়েকদিন ধরে এ এলাকায় মাঝেমধ্যেই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর পাশাপাশি দেখা দিচ্ছে ভ্যাপসা গরম। অন্যদিকে হিমেল বাতাস বইতে থাকায় রাত ও ভোরে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে, যা মূলত শীতের আগাম সংকেত।
তিনি আরও জানান, আজ সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।