শিরোনাম
ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ (বাসস): শেখ হাসিনা ‘ফ্যাসিস্ট’ প্রমাণিত হওয়ায় ভারত সরকার অবিলম্বে তাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দেশে এনে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারর্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বেলা ১১টায় যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যান তার পতাকাবাহী গাড়ি নিয়ে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এক ঘন্টা বৈঠক শেষে কার্যালয় থেকে তার গাড়ি বেরিয়ে যায়।
এই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের যে পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্যরা বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং তারা যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন, এ জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।
তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণ কমিটি সঠিকভাবে বলেছেন যে, একজন ব্যক্তি বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই সমস্ত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, গণহত্যা হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধবংস, সমস্ত প্রতিষ্ঠান ধবংস করে দেয়া, সবকিছুই রিপোর্টে এসেছে। প্রমাণ হয়ে গেছে গণহত্যার নির্দেশদাতা স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে হাসিনা একজন ফ্যাসিস্ট। সুতারং আমাদের প্রত্যাশা, শেখ হাসিনাকে অবিলম্বে, ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দেবে। তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এমনকি তার সহযোগী যারা ছিলো তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’
বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশে স্বস্তি প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় আমরা স্বস্তি প্রকাশ করছি যে, সত্য সব ঘটনা এখানে উদঘটন হয়েছে। তবে সমস্যাটা হচ্ছে, জাতিসংঘ যখন বলে তখন আমরা সেগুলো সবাই বিশ্বাস করি, যখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বলি তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না।
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের অনুসন্ধানী দল। বুধবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক ও অন্যরা।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আয়নাঘরে বাংলাদেশের মানুষকে নির্মমভাবে গুম, হত্যা করা হয়েছে। এই কথাগুলো আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। যখন আয়নাঘরের রিপোর্টটা বের হয়; তখন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পুরোপুরি বিষয়টি ডিনাই করেছে। তারা বলেছে যে, এই ধরনের কিছু নাই। অথচ প্রথম থেকেই এই অন্যায় কাজগুলো হচ্ছিলো।
তিনি বলেন, ওই সময় মানুষকে তুলে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে জঙ্গি পরিচয়ে। জঙ্গি সংগঠনের তকমা দিয়ে অনেককে আটক করে নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা বের করার চেষ্টা করেছে। কিছু লোককে তারা রেখে দিয়েছিল যে, বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে দিয়েই জঙ্গি নাটক সাজাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেখানো হয়েছে, একেকটা বাড়িতে জঙ্গির টেনিং হচ্ছে, পড়া-শোনা হচ্ছে, জঙ্গিবাদ তৈরি করা হচ্ছে, বোম তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু আজকে প্রমাণিত হয়ে গেলো যে, আমরা যে কথাগুলো বলেছি সেগুলোই সত্যি। আওয়ামী লীগ তাদের সরকার ওই সময় অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা বিরোধী দলকে ধ্বংস করেছে।
বিএনপি নির্বাহী আদেশে কোনো দল নিষিদ্ধের পক্ষে কি না? জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব বলেন, এই বিষয়টা তো পরিষ্কার করে বলেছি, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা পক্ষে থাকা না থাকা ‘ইম মেটেরিয়াল’। এ ব্যাপারে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের ঘোরবিরোধী, অত্যন্ত জোরালোভাবে বিরোধী। আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থাকে আমরা সমর্থন করবো না। কারণ এখানকার মানুষ এটাতে অভ্যস্ত না।
যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যানের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই বৈঠকটা পূর্বে নির্ধারিত ছিলো। আমাদের মধ্যে রুটিন আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অবস্থা, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন সেগুলো সম্পর্ক এবং কবে নির্বাচন হচ্ছে প্রভৃতি বিষয়গুলো সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছেন।
বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক তারেক রহমানের সঙ্গে মিটিং করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাকতালীয়ভাবে বৃটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের সঙ্গে লন্ডনে দেখা করবেন। কিছুক্ষণ পরেই এই মিটিং হবে।’