শিরোনাম
ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস): স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত জনবল, স্বাস্থ্য খাত সংষ্কারের প্রয়োজনীয়তা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতের সংষ্কারে পরিচালিত সমীক্ষার ফল তুলে ধরে বিশেষ সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ৫ ফেব্রুয়ারি হস্তান্তর করা হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
মোট ১৭ অধ্যায়ের প্রস্তাবের ত্রয়োদশ অধ্যায়ে রয়েছে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস সংষ্কারে বিশেষ সুপারিশমালা’ অংশটি।
সুপারিশমালায় বিসিএস ক্যাডারের পরিবর্তে প্রত্যেক সার্ভিসের বৈশিষ্ট অনুযায়ী নামকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামকরণ করা হবে। ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস-এ’ জনবল নিয়োগ, পদোন্নতি পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজ সম্পাদনের জন্য আলাদা একটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন করার সুপারিশ করা হয়। স্বাস্থ্য সার্ভিসের জনবল কাঠামো পুননির্ধারণসহ বিভিন্ন দিক বিশেষ করে বৃহদাকার জনবলের বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করে সার্ভিসের জনবল কাঠামোর প্রস্তাব তৈরির সুপারিশ করা হয়। স্বাস্থ্য সার্ভিসের জনবল কাঠামো পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরে স্বীকৃত বলে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়। ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’র সর্বস্তরের জনবলের জন্য একটি ক্যারিয়ার প্লানিং প্রণয়ন করা যেতে পারে বলে সুপারিশে বলা হয়। স্বাস্থ্য সেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-এরূপ তিনটি বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য লাইন প্রমোশন দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পদসোপান তৈরির সুপারিশ করা হয়।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশকৃত ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’-এ প্রবেশের জন্য অন্যান্য সার্ভিসের মতো স্বাস্থ্য সার্ভিসের কর্মকর্তারাও প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’-এ প্রাথমিক নিয়োগের বয়সসীমা দুই বছর বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার বিবেচনা করে দেখতে পারেন। দেশের জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক মধ্য সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় রেখে মেডিকেল কলেজ ও শিক্ষার্থী সংখ্যা সম্পদ প্রাপ্তি সাপেক্ষে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা, স্বাস্থ্য শিক্ষায় শিক্ষকের ঘাটতি পূরণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগকে পরিপূর্ণভাবে বিভাজন করে দেশের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একাডেমিক ও সার্ভিস হাসপাতাল-এরূপ দু’ভাবে ভাগ করে তাদের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ স্ব-স্ব বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করতে সুপারিশে বলা হয়। কোনো নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বেই প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করা, উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ডিজিটাল হাজিরার পাশাপাশি সরেজমিনে তদারকি বাড়ানো ও বিধিবহির্ভূতভাবে কেউ অনুপস্থিত থাকলে বিধি মোতাবেক শাস্তি নিশ্চিত করতে সুপারিশ করা হয়।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যার পরিবর্তে চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা অনুপাতে বাজেট বরাদ্দ, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্য অবসানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের স্বার্থে ভারসাম্য রেখে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ল্যাবরেটরিগুলোর মান গ্রহণের জন্য একটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টি, স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় সুপারিশ করা হয়েছে। দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, আই, এইচ, টি এবং সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সদর জেনারেল হাসপাতালসমূহে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং ফিজিওথেরাপিস্ট পদ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়। গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য খাতে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব প্রদান এবং সরকার সুনির্দিষ্ট শর্তে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কেন্দ্রগুলো পরিচালনা আউটসোর্স করবে। উপজেলা নিবার্হী অফিসার, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও অভিজ্ঞ বেসরকারি সদস্য নিয়ে একটি কমিটি এনজিওগুলোর কাজ তদারকি করতে পারেন বলে সুপারিশ করা হয়।