তিন দশকেও আলোর মুখ দেখেনি খান জাহান আলী বিমানবন্দর

বাসস
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ২২:০৮
ফাইল ছবি

প্রতিবেদক: আজাদ রুহুল আমিন 

বাগেরহাট, ২১ মে, ২০২৫ (বাসস): জেলার রামপালের ফয়লায় প্রস্তাবিত খান জাহান আলী বিমান বন্দর এখন শুধুই বিরান ভূমি। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একাধিকবার বিমানবন্দরটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা কারণে আজও তা আলোর মুখ দেখেনি।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর মোংলাকে ঘিরে বর্তমানে একলাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সুন্দরবনের খুব কাছে এবং সমুদ্র উপকূলসংলগ্ন এ জেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে । এছাড়াও মংলা ইপিজেড-এর তৈরি পণ্য পরিদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয়ের জন্যও দেশবিদেশের ব্যবসায়ীরা এখানে যাতায়াত করেন। কাজেই এ অঞ্চলে একটি বিমানবন্দর নির্মাণ করা হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে । আরো কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। 

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে প্রথম খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিমানবন্দরটিকে ‘শর্ট টেক অব অ্যান্ড ল্যান্ডিং বন্দর’ হিসেবে গড়ে তুলতে ৪১.৩০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাট করা হয়। সেসময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মোংলা বন্দরের গুরুত্ব অনুভব করে বাগেরহাটের রামপালের ফয়লা নামক এলাকায় বিমানবন্দরের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু সালেহ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগ ও আগ্রহে এ বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। 

তার প্রায় ১৫ বছর পর ২০১১ সালের ৫ মার্চ মহাজোট সরকার খান জাহান আলী বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ করার ঘোষণা দেয়। এ লক্ষ্যে আরও ৬২৬.৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর চার বছর পর ২০১৫ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খান জাহান আলী বিমান বন্দর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। একই বছরের জুলাইয়ে ফের শুরু হয় প্রকল্পটির কাজ। জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট ও সীমানা প্রাচীরের কাজ শুরু হয়। যদিও সীমানা প্রাচীর বলতে কিছু দূরে দূরে পিলার ছাড়া কোনো কাজ হয়নি। এটুকুই এখন পর্যন্ত বিমানবন্দরের দৃশ্যমান অস্তিত্ব।

বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সেসময় এ প্রকল্পের জন্য ৫৩৬ একর জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়। জমির মূল্য ৩১৮ কোটি টাকার মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে অগ্রিম ৪৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণের পর রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় সেসময়কার সরকার খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে। পরবর্তীতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এ কোনো বিনিয়োগকারী না পাওয়ার অজুহাতে বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।   

বিশিষ্টজনদের মতে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মংলা বন্দরে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং কয়লা-বিদ্যুৎ কেন্দ্র দ্রুত গড়ে তোলার জন্য এ অঞ্চলে বিমানবন্দরের কোনো বিকল্প নেই। কারণ, বিমানবন্দর ছাড়া আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিল্প এলাকা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। 

তাদের মতে, মোংলা বন্দর, ইপিজেড, চিংড়ি শিল্প ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে খুলনা, বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে দ্রুত যোগাযোগের জন্যও এ বিমানবন্দরটি দরকার।

উল্লেখ্য, খান জাহান আলী বিমানবন্দর থেকে খুলনা শহর ও মোংলা সমুদ্রবন্দর উভয়েরই দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। এই এলাকায় বিমানবন্দর হলে সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও খান জাহান আলীর মাজারকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প প্রসারিত হবে। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় অঞ্চলে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ ও দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও এ বিমান বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

মোংলাবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত সাড়ে ১০ মাসে মোংলাবন্দরে ৭২৫টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। এর ফলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। 

বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মাকরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৩ মে পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে ১ লাখ টনেরও বেশি পণ্য পরিবহন করা হয়েছে। এছাড়াও ১০ হাজার ৩৭৪ টি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, খান জাহান আলী বিমানবন্দর নির্মিত হলে বিদেশিরা যেমন এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক বিনিয়োগে আগ্রহী হবে, অন্যদিকে স্থানীয় অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে। 

বাগেরহাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার এটি এম আকরাম হোসেন তালিম অবিলম্বে বাগেরহাট খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, এটিকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পরিণত করতে পারলে মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে। যা এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মোচন করবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামিমুর রহমান শামীম বাসসকে বলেন, মোংলাবন্দর তার গতিশীলতা ফিরে পেয়েছে। খানজাহান আলি বিমানবন্দর অবিলম্বে চালু অপরিহার্য। এটি চালু হলে আন্তর্জাতিক যোগাযোগসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে গতিশীলতা ফিরে আসবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
দুর্ঘটনার শিকার বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে : বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বাড়লো ১০ দিন
পাকুন্দিয়ায় দুই ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ
ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে সর্বসাধারণের কাছে টিসিবির পণ্য বিক্রয় শুরু বৃহস্পতিবার
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন
কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে সহায়তা দেবে সরকার: বাণিজ্য উপদেষ্টা
‘সুস্থ হয়ে উঠেছেন’ আসাঞ্জ, গাজা-শার্ট পরে কানসে প্রামাণ্যচিত্র প্রচার
বাংলাদেশের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের
ভূমিকম্প মোকাবিলায় জনসচেতনতার বিকল্প নেই: দুর্যোগ উপদেষ্টা
আর্কটিক দূষণ নিয়ে আলোকপাত করবে মেরু ভালুকের বায়োপসি
১০