ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫ (বাসস/এএফপি): লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বুধবার বেইরুতে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সব ধরনের অস্ত্র লেবানন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রাখার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন।
এ সময় তারা লেবানের ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরগুলোতে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্রীকরণের উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন।
বৈরুত থেকে এএফপি জানায়, লেবাননের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, দুই নেতা এই বিশ্বাসে একমত যে ‘লেবানন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে অস্ত্র রাখার যুগ শেষ হয়ে গেছে’ এবং অস্ত্র রাখার একচ্ছত্র অধিকার কেবল রাষ্ট্রেরই থাকা উচিত।
২০১৭ সালের পর এই প্রথমবারের মতো লেবানে সফরে গেছেন আব্বাস। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লেবাননে প্রায় ২ লাখ ২২ হাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থী অবস্থান করছেন। অধিকাংশই ঠাসাঠাসি করে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণহীন অবহেলিত শিবিরে বাস করছেন।
লেবানন সরকারের একটি সূত্র জানায়, আব্বাসের এই সফরের উদ্দেশ্য হলো শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে অস্ত্র প্রত্যাহারের জন্য একটি যৌথ কাঠামো গঠন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অনুমতি না থাকায় তিনি পরিচয় গোপন রাখছেন।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, উভয় পক্ষ ফিলিস্তিনি শিবিরগুলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও শরণার্থীদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করার জন্য একটি যৌথ লেবানিজ-ফিলিস্তিনি কমিটি গঠন করতে একমত হয়েছে।
তবে এই প্রক্রিয়ায় লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
দীর্ঘদিনের প্রথা অনুযায়ী লেবানিজ সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি শিবিরগুলোতে প্রবেশ করে না। এসব শিবিরে আব্বাসের ফাতাহ, তার প্রতিদ্বন্দ্বী হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী নিজেরাই নিরাপত্তা দেখভাল করে থাকে।
গাজা যুদ্ধ ঘিরে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে লেবাননে অবস্থানরত হামাস ও তাদের মিত্র হিজবুল্লাহ ইসরাইলের ওপর হামলার দাবি করে। তবে গত নভেম্বরে যুদ্ধবিরতির পর এসব সংঘাত অনেকটাই থেমে এসেছে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট আউন মিশরের ওএন টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অস্ত্রের একচ্ছত্র মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে থাকা উচিত।’
তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে ছয়টি ফিলিস্তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে—যার মধ্যে তিনটি বেকায়া অঞ্চলে, একটি বেইরুতের দক্ষিণে এবং দুটি উত্তর লেবাননে।
নভেম্বরের অস্ত্রবিরতির অংশ হিসেবে লেবাননের দক্ষিণে হিজবুল্লাহর সামরিক অবকাঠামোও ধ্বংস করছে সেনাবাহিনী।
‘একটি নতুন যুগ’
আব্বাসের সফরসঙ্গী এবং পিএলও-র জ্যেষ্ঠ নেতা আহমাদ মাজদালানি বলেন, লেবানন এখন ‘একটি নতুন যুগে’ প্রবেশ করছে, যেখানে দেশটি আরব ও মার্কিন সমর্থন পাচ্ছে।
তিনি বলেন, "আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো—আমরা যেন লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ না হয়ে যাই এবং ফিলিস্তিনি ইস্যু যেন কোনো পক্ষের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উপকরণ না হয়।"
লেবাননের হামাস নেতা আলি বারাকাহ জানান, আব্বাসের আলোচনা যেন কেবল অস্ত্র ও নিরাপত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, তারা সে প্রত্যাশা করেন।
তিনি বলেন, 'আমরা লেবানের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। একইসঙ্গে আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য নাগরিক ও মানবাধিকার দাবি করি।'
লেবানে অবস্থানরত অধিকাংশ ফিলিস্তিনি শরণার্থী ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত বা পালিয়ে আসা লোকদের বংশধর। তারা এখনও কর্মসংস্থানের মতো নানা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।