
আব্বাছ হোসেন
লক্ষ্মীপুর, ২৭ অক্টোবর ২০২৫(বাসস): শিগগিরই শুরু হবে মজু চৌধুরীর হাট নৌ-বন্দর নির্মাণের কাজ। এমনটাই জানা গেল নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ মজু চৌধুরীর হাটে নৌ-বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে তৎকালীন সরকার। তারপর ভূমি জরিপ ও অধিগ্রহণের জন্য সার্ভেয়ার নিয়োগ করা হয়। ঘোষণার প্রায় নয় বছর অতিবাহিত হলেও লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরী হাট নৌ-বন্দরের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ নৌ-বন্দর বাস্তবায়িত হলে ২১ জেলার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের নতুন সেতুবন্ধন তৈরি হবে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে বেশ খানিকটা অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক বাসসকে বলেন, প্রকল্পটি নৌ-মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। নৌবন্দর করার জন্য জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।
জেলা নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মজু চৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটের অবস্থান। এই লঞ্চঘাট থেকে বিভিন্ন নৌ রুটে সিলেট ও খুলনা বিভাগের ২১ জেলার মানুষ চলাচল করে আসছে।
এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মজু চৌধুরীর হাটে একটি নৌ-বন্দর নির্মাণ। এই দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ নৌ-বন্দর নির্মাণ প্রকল্পসহ বেশ কিছু কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর আগে একই বছরের ১২ জানুয়ারি নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের টিএ শাখা রাষ্ট্রপ্রতির আদেশক্রমে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু ঘোষণার প্রায় নয় বছর অতিবাহিত হলেও বন্দর নির্মাণে কোন অগ্রগতি হয়নি।
এদিকে বন্দর কার্যক্রম গতিশীল করতে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর টু ঢাকা লঞ্চ সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এর কয়েকদিন পর কোন অজুহাত ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় এই রুটের লঞ্চ সার্ভিস। বন্ধের তিন বছর পার হলেও এখনো চালু হয়নি এ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সড়কপথে ঢাকা থেকে কুমিল্লা হয়ে লক্ষ্মীপুর শহর পর্যন্ত দূরত্ব ২০৪ কিলোমিটার।
অথচ নৌপথে এই দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার। কিন্তু বন্দর নির্মাণ করে বিআইডব্লিউটিএ এবং লক্ষ্মীপুর-ঢাকা লঞ্চ চালু হওয়ার পর দুর্ভোগ কমে আসার স্বপ্ন দেখলেও সেটা আবার বন্ধ হয়ে যায়। নৌপথ চালু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষ।
এই নৌরুট ব্যবহারকারীদের দাবি, যাত্রী অজুহাত দেখিয়ে এই নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। তাদের ধারণা যাত্রী অজুহাত দেখিয়ে অন্য কোনো স্বার্থ হাসিলের জন্য সেসময় এই রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মজু চৌধুরী ঘাটের ব্যবসায়ী মিন্টু, আবুল কালাম ও নেয়ামত উল্যাহসহ আরো অনেকে এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, মজু চৌধুরীর হাটে নৌ-বন্দরটি বাস্তবায়িত হলে বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের ২১ জেলার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের নতুন সেতুবন্ধন তৈরি হবে। তৈরি হবে শিল্প কলকারখানা।
দ্রুত প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করার দাবি জানান তারা।
লক্ষ্মীপুর জেলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার নদী বন্দর নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে এই বন্দর আঞ্চলিক ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে। লাখ লাখ মানুষের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে। স্থানীয় বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে। তাতে সরকারের আয় ও বাড়বে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বাসসকে বলেন, প্রকল্পটি নৌ-মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ইতোমধ্যে নৌ-বন্দরের জন্য ভোলা-মজু চৌধুরী হাট সড়কসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দ্রুত বন্দর কার্যক্রম শুরু করার জন্য কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
জানা যায়, এবছরের শুরুতে ১১ জানুয়ারি চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের আওতাধীন মজু চৌধুরী হাট লঞ্চঘাট নির্মাণের জন্য এলাকা পরিদর্শন করেন নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শ. আ. মাহফুজ উল আলম মোল্লা। তার মতে, এখানে ঘাট প্রতিষ্ঠিত হলে সেখান থেকে বছরে প্রায় দেড়কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে।
সেসময় তার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভূমি নির্ধারণে জনমত গ্রহণ, নদীর গতি পথ, টার্মিনাল সড়ক তৈরিসহ নানা বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লক্ষীপুরের মজু চৌধুরী লঞ্চ ঘাট হয়ে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাটে প্রতিদিন ১২০০-১৫০০ যাত্রী নৌপথে পারাপার করেন। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের দূরত্ব কম হওয়ায় এই নৌপথটি বেশ জনপ্রিয়। প্রতিদিনই এ নৌপথে ছোট ছোট লঞ্চ ও স্টিমার চলাচল করলেও আধুনিক লঞ্চ টার্মিনাল না থাকায় যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহান।
নৌ-সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মজু চৌধুরী হাট লঞ্চ ঘাটসহ চাঁদপুর নৌ অঞ্চলে এই প্রকল্পের আওতায় তিনটি লঞ্চ টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এসব টার্মিনালে যাত্রীদের সুবিধার জন্য থাকছে যাত্রী ছাউনীসহ পন্টুন, গ্যাংওয়ে, নতুন রাস্তা, ওয়েটিং সেড ও পার্কিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থা। তিনটি লঞ্চ টার্মিনালের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য সেসময় চার সদস্য বিশিষ্ট এক কমিটি করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ।