
ঢাকা, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): লালদিয়া টার্মিনালে বিদেশি বিনিয়োগকে সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন বক্তারা। চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা নিয়ে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সংক্রান্ত এক গোলটেবিল আলোচনায় তাঁরা এ মন্তব্য করেন। ভয়েস ফর রিফর্ম ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (বিআরএআইএন) যৌথ উদ্যোগে শনিবার অনুষ্ঠিত এ সভায় পোর্ট ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী, মেরিন বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদরা অংশগ্রহণ করেন।
সভায় অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুবাইল বিন আলম তার মূল প্রবন্ধে লালদিয়ায় বিনিয়োগের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে আমদানি-রপ্তানিতে এর সম্ভাব্য সুবিধা বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, বন্দর ব্যবস্থাপনা আধুনিক না করলে রপ্তানি বৃদ্ধি সম্ভব নয়।
ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অধিকাংশ বক্তা লালদিয়া টার্মিনালে বিদেশি বিনিয়োগকে সময়োপযোগী ও সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেন।
বাণিজ্যিক অংশগ্রহণকারীরা বলেন, বর্তমান সময়ে বিদেশি পরীক্ষিত পোর্ট অপারেটর ছাড়া বিদ্যমান বন্দর ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা দূর করা সম্ভব নয়। অতীতে দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ব্যবহারকারীদের খারাপ সেবা দিতে বাধ্য করত এবং হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ খেলাপি ছিল।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও থাই-বাংলা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, “যতদিন পর্যন্ত কাস্টমস কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি দূর করা যাবে না, ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বিদেশি বিনিয়োগের সুবিধা নিতে পারবে না।”
সভায় উপস্থিত বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানান। তাঁরা বলেন, অতীতে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে বিদেশি বিনিয়োগে বাধা দিয়েছে। তবে নির্বাচন-পরবর্তী যে কোনো সরকারই সুষ্ঠু বন্দর ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ নেবে, এমন আস্থা এখনো তৈরি হয়নি।
কিছু বক্তা উল্লেখ করেন, সরকারের উচিত ছিল রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা। চুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশ্য তথ্য না দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের ফিরোজ আহমেদ বলেন, “উন্মুক্ত দরপত্র না দিয়ে বিশেষ কোম্পানিকে পোর্ট ব্যবস্থাপনার সুযোগ দেওয়া সরকারের স্বচ্ছতার অভাব প্রকাশ করছে।”
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী, লজিস্টিকস ও ফ্রেইট অপারেটর সিকো গ্রুপের কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, এনসিপি’র আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, এবি পার্টির নাসরিন সুলতানা মিলি, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ, আপ বাংলাদেশের রাফি সালমান রিফাত, সেন্ট্রিস্ট ন্যাশনের শাফকাত রাব্বি অনিক এবং অর্থনীতিবিদ ও কাউন্টার-পয়েন্টের নির্বাহী সম্পাদক জ্যোতি রহমান।
সভা সমাপনী বক্তব্যে ভয়েস ফর রিফর্ম থেকে বলা হয়, চুক্তিতে কিছু ব্যবসায়িক স্পর্শকাতর অংশ থাকায় তা নাগরিকদের কাছে উন্মুক্ত করা যায় না। তবে দেশের মানুষের জানার অধিকার রয়েছে—যেমন চুক্তি থেকে দেশের সম্ভাব্য লাভ। এছাড়া দেশীয় পেশাজীবীদের দক্ষতা বাড়াতে কোম্পানির সকল স্তরে দেশীয় পেশাদারদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেবার মান নিশ্চিত করতে চুক্তিতে প্রয়োজনীয় কেপিআই সংযোজন করতে হবে।