
ঢাকা, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতা বা আসন-সমঝোতার জন্য এনসিপি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আপস করবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছি। ক্ষমতা বা আসনের জন্য কারো সঙ্গে দর-কষাকষি করব না। একটি আসনে না জিতলেও আমরা আমাদের আদর্শ, নীতি ও লক্ষ্য থেকে সরে আসব না।’
আজ রোববার সকালে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এনসিপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ৬ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রির পর এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
ব্রিফিংয়ের পর দলটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী ১ হাজার ৪৮৪ জন প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করে।
নাহিদ অভিযোগ করেন, এনসিপিকে নিয়ে বিভিন্ন গুজব ও মনগড়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।
তিনি বলেন, ‘এনসিপিকে একটি নির্দিষ্ট দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু, আমরা স্পষ্ট করে দিয়েছি— আমাদের রাজনীতি জনগণের জন্য এবং আমরা জনগণের কাছে স্বাধীনভাবে পৌঁছাতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, অন্য কোনো রাজনৈতিক দল যদি এনসিপির ঘোষণাপত্র, নীতি ও অবস্থানের সঙ্গে একমত হয়, তাহলে শুধু সে ক্ষেত্রেই আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক সমঝোতা যদি হয়, তা আদর্শিক ভিত্তিতেই হবে, ক্ষমতা বা পদ বণ্টনের ভিত্তিতে নয়।’
মিডিয়ার বিভ্রান্তিকর কিছু প্রতিবেদনের বিষয়ে নাহিদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ভিন্নমতের দলগুলো আলোচনায় বসছে, অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে, অনানুষ্ঠানিক সংলাপে যুক্ত হচ্ছে— এগুলো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিরই অংশ। এসব কার্যক্রমকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা উচিত নয়।’
জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে বর্তমান রাজনৈতিক বিভাজন প্রসঙ্গে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কিছু দল এখন ‘সমঝোতাকৃত, সাজানো নির্বাচন’ আয়োজনের চেষ্টা করছে, যাতে ক্ষমতা ভাগাভাগি করা যায়।
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাকে ব্যাহত করবে। এনসিপি কখনোই এমন ব্যবস্থাকে সমর্থন করবে না, আমরা প্রতিরোধ করব।’
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি দাবি করে নাহিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের নির্বাচন সংস্কৃতি প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, পেশিশক্তি ও অবৈধ অর্থের ব্যবহার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সময়ে মানুষ ভোটকেন্দ্রেও যেতে পারত না। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও প্রশাসনের শক্ত, নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রয়োজন, যা এখনো স্পষ্ট নয়।’
তিনি সরকার ও স্বৈরাচারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে নির্বাচনকালে প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
এনসিপি আজ থেকেই প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু করেছে এবং সোমবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলবে।
নাহিদ বলেন, ‘আমরা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের স্বপ্ন, দক্ষতা ও প্রেরণা জানতে চাই। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা ৩০০ প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চাই।’ প্রাথমিক স্কিনিংয়ের পর দলের কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, এনসিপি এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮৪টি মনোনয়ন ফরম বিতরণ করেছে, ৭৬১টি অফলাইনে এবং ৭২৩টি অনলাইনে। প্রতি আসনে গড়ে পাঁচজন প্রার্থী।
১০টি প্রশাসনিক বিভাগভিত্তিক ১০টি সাক্ষাৎকার বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন— এনসিপির উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা, জ্যেষ্ঠ নেতা মুজাহিদুল ইসলাম, আতিক মুজাহিদ, আবদুল্লাহ আল আমিন ও মো. আতাউল্লাহ।