বাসস
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:২০

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে: মাহমুদুর রহমান

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। ছবি: উইকিপিডিয়া

ঢাকা, ৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। সব গুম, হত্যা ও খুনের জন্য তাকে আইনানুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে জেলখানায় হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন- নাসির উদ্দিন পিন্টু, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম প্রমুখ।

মাহমুদুর রহমান আজ সোমবার রাজধানীর তোপখানা রোডের জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বরেণ্য সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, নাসির উদ্দিন পিন্টু হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া দরকার। এই তদন্তে ডাক্তারদেরও সামিল করতে হবে। ডাক্তার ছাড়া এ তদন্ত হবে না। তখন যেসব ডাক্তাররা ছিল তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। দ্বিতীয়জন দেলোয়ার হোসেন সাঈদী; তার মৃত্যুরও তদন্ত হওয়া উচিত। তৃতীয়জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম। প্রচণ্ড দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী এবং বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তিনি। তাকে আইসিইউ’তে অক্সিজেন নাজাল বন্ধ করে হত্যা করা হয়েছে; তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।

সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর কথা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, সাংবাদিকদের অবিসংবাদিত নেতা রুহুল আমিন গাজী ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। এমন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষকে বিনা অপরাধে ভূয়া মামলা দেখিয়ে জেলখানায় পাঠানো হয়। দেড় বছর আটকে রাখা হয়, এ সময় তাকে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এর ফলে পরবর্তীতে ধুকে-ধুকে তাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়।

তিনি বলেন, ‘রুহুল আমিন গাজীর হত্যাকাণ্ডের জন্যও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে চাই। এ জন্য বর্তমান সরকারের কাছে আমি বিচারও দাবি করছি। এই সরকার যদি বিচার না করে, তবে পরবর্তীতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে যে সরকার আসবে সেই সরকারের কাছে এসব হত্যার বিচার চাইবো। যতগুলো হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিচার হবে, সে রকম রুহুল আমিন গাজীকে হত্যা করার অপরাধেও তার বিচার করতে হবে।

শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করতে হবে এ কথা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘তিতাস নদীকে হত্যা করে ভারতীয় প্রভুদের খুশি করার জন্য শেখ হাসিনা সেখানে রাস্তা তৈরি করেছিল। এর প্রতিবাদে আমরা শেরাটন পর্যন্ত লংমার্চ করেছিলাম। সেই লংমার্চে কোদাল নিয়ে প্রতীকীভাবে বাঁধ কেটে দিয়েছিলাম। এটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলাম, বেঁচে থাকতে ইন্ডিয়া ভ্যাটেনরিকে বাংলাদেশে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে দেবো না। আলহামদুলিল্লাহ আজকে ইয়াং জেনারেশন আমাদের স্বপ্ন সফল করেছে। তারা জীবন দিয়ে ফ্যাসিস্টকে পরাভূত করেছে এবং ভারতীয় এজেন্টদের পরাজিত করেছে। এর সুফল কার্যকর রাখার জন্যই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ্য থাকতে হবে।’

রুহুল আমিন গাজীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘গাজী ভাই আমার সঙ্গে দু’টি লংমার্চে অংশ নিয়েছিল। একটি লংমার্চের সঙ্গে দুঃখজনক স্মৃতি আছে। সঙ্গে ইলিয়াস আলীও ছিলেন। সেদিন তার ভূমিকা ছিল অনেক। পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট দানব শেখ হাসিনা নিজে নির্দেশ দিয়ে কীভাবে ইলিয়াসকে গুম করিয়েছেন এবং সম্ভবত তাকে হত্যা করেছে। সম্ভবত বলছি এ কারণে যে, আমি তো সেদিন উপস্থিত ছিলাম না। যে সমস্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পেয়েছি তার ভিত্তিতে আমরা লিড নিউজ করেছি। সেদিন ফ্যাসিস্ট দানব শেখ হাসিনা ইলিয়াস আলীর পরিবারের সঙ্গে শোকের নাটক করেছিল। এমন ঘৃণ্য আচরণ শুধুমাত্র একজন পিশাচের পক্ষেই করা সম্ভব।’

বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহীদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশন’র সম্পাদক মোকাররম হোসেন প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

বক্তারা বলেন, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। তিনি একাধারে সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাংবাদিকদের রুটি, রুজি ও অধিকার আদায়ে ছিলেন আপোষহীন। এরই পরিপ্রেক্ষিত্রে ফ্যাসিস্ট সরকার তাকে নানাভাবে হয়রানি, জুলুম ও নির্যাতন করে।

তারা বলেন, রুহুল আমিন গাজীকে দেড়বছর জেলখানায় বন্দি করে নির্যাতন চালানো হয়, ক্যান্সারে আক্রান্ত এই সাংবাদিক নেতাকে প্রয়োজনীয় ওষুধসহ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।