সম্মেলনে মধ্য এশিয়ার ‘অবিশ্বাস্য সম্ভাবনার’ প্রশংসায় ট্রাম্প

বাসস
প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:২৮

ঢাকা, ৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের সি চিনপিংয়ের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করার কয়েক মাস পর বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো মধ্য এশিয়ার পাঁচ নেতাদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শীর্ষ সম্মেলনটিতে মধ্য এশিয়ার ‘অবিশ্বাস্য সম্ভাবনার’ প্রশংসা করেন ট্রাম্প।

দেশগুলোর অবিশ্বাস্য গুরুত্ব ও সম্ভাবনার প্রশংসা করে তথাকথিত ‘সি ৫+১’ সভায় ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের আলোচনার অন্যতম এজেন্ডা হলো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ।’

ওয়াশিংটন থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি জানায়, সম্পদ সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের প্রতি পশ্চিমারা তাদের আগ্রহ বাড়িয়েছে।

ইউক্রেন ওপর রাশিয়ার হামলার পর থেকে মস্কোর ঐতিহ্যবাহী প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখানে চীনও একটি প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

-বিরল মৃত্তিকার ‘অবিশ্বাস্য গুরুত্ব’-

কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে এক নৈশভোজের আগে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আমাদের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব জোরদার করছি, নিরাপত্তা সহযোগিতা উন্নত করছি ও পারস্পরিক সম্পর্ক আরও গভীর করছি।’

সভা শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প জানান, উজবেকিস্তানের সঙ্গে তিনি ‘একটি চমৎকার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চুক্তি’ করেছেন। চুক্তি অনুযায়ী, তাসখন্দ আগামী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান, খনিজ, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার এবং এক দশকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করবে।

চীননির্ভরতা কমাতে এবং বিরল খনিজ সম্পদের নতুন উৎস খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন এই অঞ্চলের বিশাল কিন্তু এখনো প্রায় অব্যবহৃত এমন প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে নজর দিচ্ছে।

কাজাখস্তান বিশ্বের বৃহত্তম ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী, উজবেকিস্তানে বিশাল সোনার মজুত রয়েছে এবং তুর্কমেনিস্তান গ্যাসে সমৃদ্ধ। পাহাড়ি কিরগিজস্তান ও  তাজিকিস্তানেও নতুন খনিজ মজুদ রয়েছে।

কিন্তু কঠোর ও দুর্গম ভূখণ্ড ও দরিদ্র দেশগুলোয় খনিজ সম্পদের এই বিশাল মজুদ থাকলেও তা কাজে লাগানো বেশ জটিল হওয়ায় অকেজো রয়ে গেছে।

প্রায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমান আয়তনের হলেও মাত্র সাড়ে ৭ কোটি মানুষের এই অঞ্চল সম্পূর্ণ স্থলবেষ্টিত এবং মরুভূমি ও পর্বতবেষ্টিত। এর উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে চীন এবং দক্ষিণে ইরান ও আফগানিস্তান রয়েছে। যাদের সঙ্গে পশ্চিমাদের রয়েছে টানাপোড়েন সম্পর্ক।

-‘স্বর্গ থেকে প্রেরিত’-

শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা ট্রাম্পের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ বলেন, আপনি হলেন মহান নেতা, রাষ্ট্রনায়ক। ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ও আমাদের সচেতন করতে আপনাকে স্বর্গ থেকে পাঠানো হয়েছে।’
উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট  শাভকাত মির্জিয়োয়েভ বলেন, ‘এর আগে, কখনো কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট মধ্য এশিয়ার সঙ্গে আপনার মতো আচরণ করেননি।’

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা অর্জনকারী পাঁচটি স্থলবেষ্টিত দেশ কূটনীতির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া চীন বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করে এই অঞ্চলের জন্য নিজেকে একটি প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

এদিকে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো এখনো মস্কোকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখে। তবে তারা ইউক্রেন হামলায় ভীত।

-আব্রাহাম চুক্তি-

দিনের সবচেয়ে বড় ঘোষণাটি ছিল যে কাজাখস্তান আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে। এই চুক্তিটি ইসরাইল ও মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত। এটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রাম্পের উদ্যোগকে উৎসাহিত করার প্রতীকী পদক্ষেপ।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ও সুদান ২০২০ সালে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য স্বাক্ষর করার পর কাজাখস্তানই প্রথম দেশ হবে যারা এই চুক্তিতে যোগ দেবে।

মধ্য এশিয়ার দেশটির সঙ্গে ইতোমধ্যেই কয়েক দশক ধরে ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। তবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, কাজাখস্তানের সিদ্ধান্ত এই চুক্তির ‘গতি’ বাড়াবে।

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ ক’টি রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত চুক্তিটিতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।

-মানবাধিকার লঙ্ঘিত-

কঠোর শাসনব্যবস্থার প্রশংসক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প মধ্য এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অঞ্চলটি পর্যটন ও বিদেশি বিনিয়োগে উন্মুক্ত হলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলো নাগরিক স্বাধীনতা আরও অবনতি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘সম্মেলনটি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন অংশগ্রহণকারী সব সরকারই মতপ্রকাশ দমন, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ এবং সমালোচকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ বাড়িয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
লেবাননে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানালো ইরান
বগুড়ায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত
আইসিসির অক্টোবরের দৌড়ে মুথুসামি-নোমান ও রশিদ
ডি ককের সেঞ্চুরিতে সিরিজে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা
আকবর-মোসাদ্দেকের নৈপুন্যে শ্রীলংকাকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানীতে স্কুলের পাশে বিস্ফোরণে আহত ৫৪
আধুনিক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা ব্যাপক অবদান রাখছেন : প্রধান উপদেষ্টা 
চট্টগ্রামে বাবলা হত্যা মামলা ও গুলির ঘটনায় গ্রেফতার ৬
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা জরুরি : এ্যানি
ঘূর্ণিঝড় কালমায়েগির তাণ্ডবে ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামে ব্যাপক প্রাণহানি
১০