বাসস
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:৫৬

কৃষকদের সুরক্ষাসহ আলুর দাম ক্রেতার নাগালে রাখতে সরকারের নীতি সহায়তার দাবি

ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): কৃষকদের সুরক্ষাসহ আলুর দাম ক্রেতার নাগালে রাখতে সরকারের নীতি সহায়তার দাবিতে রাজধানীতে আজ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন।

সংগঠনটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে আনার মাধ্যমে আলু চাষকারী কৃষকদেরকে সুরক্ষা প্রদানসহ বাজারে আলুর দাম ক্রেতার নাগালে রাখতে সরকারের নীতি সহায়তার দাবি জানান এসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি প্রচলিত দণ্ডসুদসহ ব্যাংক ঋণের সুদ শতকরা ১৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে শতকরা সাত শতাংশ করার এবং বিদ্যুৎ বিলের ইউনিট প্রতি রেটপিক আওয়ারে ১৩ টাকা ৬২ পয়সা ও অফপিক আওয়ারে নয় টাকা ৬২ পয়সার পরিবর্তে ৫ টাকা করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি ভ্যাট ও উৎসে করকর্তন (টিডিএস) প্রত্যাহার চান সংগঠনটি।

তিনি বলেন, বিগত ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে আলুর বাজারে স্মরণকালের ভয়াবহ মূল্যহ্রাস ঘটে। ফলে হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগারে সংরক্ষিত আলু খালাস না করায় হিমাগার মালিকগণ ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েন। ফলশ্রুতিতে ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের কিস্তি নিয়ম মাফিক পরিশোধ করতে না পারায় বিভিন্ন আর্থিক চাপ ও সমস্যা নিয়ে হিমাগার পরিচালনা করছেন যা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ৩ মাস পর-পর ব্যাংক ঋণের কিস্তি প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেছে। কিন্তু হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয় মার্চ মাসে এবং খালাস হওয়া শুরু হয় জুলাই মাসে। যার ফলে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ঋণের কিস্তি প্রদান করতে না পারায় ঋণখেলাপিতে পরিণত হচ্ছে হিমাগার মালিকগণ। ফলে ১৫ শতাংশ ব্যাংক সুদের সঙ্গে আরও ২ শতাংশ সুদ যোগ হয়ে তা ১৭ শতাংশে দাড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় ব্যাংক ঋণের সুদ এবং বিদ্যুৎ বিলের খরচ কমিয়ে আনা এবং ব্যাংক ঋণের কিস্তি ত্রৈমাসিকের পরিবর্তে বাৎসরিক ভিত্তিতে পরিশোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান সংগঠনটির সভাপতি বাবু।

তিনি জানান, ২০২৪ সালে এসোসিয়েশন নির্ধারিত হিমাগারে আলু সংরক্ষণ ভাড়া ছিল কেজি প্রতি ৭ টাকা। সে হিসাবে ৫০ কেজির বস্তার আলু ভাড়া ৩৫০ টাকা। আলু সংরক্ষণকারীগণ ৭০ থেকে ৭২ কেজি ওজনের বস্তার ভাড়া ৩৫০ টাকা প্রদান করেই হিমাগার থেকে আলু খালাস করেছেন। ফলে হিমাগার মালিকগণ প্রতি বস্তায় ১৫ থেকে ২২ কেজি আলুর ভাড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে হিমাগারের আলু ধারণক্ষমতা প্রায় ২০-২৫ শতাংশ কমে গিয়েছে এবং গড়ে ১০ হাজার টনের একটি হিমাগার প্রায় ১ দশমিক ৫ কোটি থেকে ২ কোটি টাকার মত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে দেশের ৪০০ হিমাগারের মধ্যে প্রায় ৩০০ হিমাগার সময়মত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এবং অন্যান্য পরিচালনা ব্যয় সংকুলান করতে না পেরে রূগ্ন হিমাগারে পরিণত হয়েছে এবং বেশ কিছু হিমাগার ঋনখেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

এসময় তিনি জাানান, ২০২৫ সালে হিমাগারসমূহে কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপরে বর্নিত খরচগুলি বিবেচনায় নিয়ে কেজি প্রতি ভাড়া আট টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হিমাগারে আলু সংরক্ষণে যুক্তিসংগতভাবে নির্ধারিত কেজি প্রতি আট টাকা ভাড়ায় হিমাগার পরিচালনায় সহায়তা করার মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের  পাশাপাশি হিমাগার শিল্পকে রক্ষার্থে সবার প্রতি আহ্বান জানান বাবু।

এ বছর আলুর যথেষ্ট উৎপাদন হয়েছে উল্লেখ করে আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে কোনোভাবেই গত বছরের মতো হবেনা বলে আশ্বাস দেন সভাপতি বাবু।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস- প্রেসিডেন্ট ইশতিয়াক আহমেদ, পরিচালক হাসেন আলী, কাজী মেহাম্মদ ইদ্রিস, চন্দন কুমার সাহা, মো. তারিকুল ইসলাম খান, গোলাম সরোয়ার রবিন, মাইনুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম বাবু, ফরহাদ হোসেন আকন্দ, মো. কামরুল ইসলাম ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুসান্ত কুমার প্রামনিক।