লোহাগাড়া ট্র্যাজেডি, মেহেদি রাঙা হাতে চলে গেল প্রেমাও

বাসস
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৪১

চট্টগ্রাম, ৪ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতির জাঙ্গালিয়া এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাসনীম ইসলাম প্রেমা (১৮) মারা গেছে। প্রেমা’র হাতে মেহেদির রঙ এখনো শুকায়নি। নকশা করা দাগগুলো এখনো উজ্জ্বল, যেন ঈদের আনন্দের স্মৃতি ধরে রাখতে চায়। এর আগে এই দূর্ঘটনায় প্রেমা’র বাবা-মা ও দুই বোন মারা যায়। প্রেমা’র মৃত্যুতে পরিবারটির আর কেউ বেঁচে রইলো না।

চমেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ধীমান চৌধুরী জানান, আজ শুক্রবার সকালে ‘গুরুতর আহত’ প্রেমার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। আমাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় আজ সকালে। আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) প্রেমার মৃত্যু হয়।’

গত বুধবার সকালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া চুনতি বন রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামমুখী রিলাক্স পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে কক্সবাজারগামী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের ১০ আরোহী নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন প্রেমার বাবা শামীম ফকির (৪০), মা সুমি আক্তার (৩৪), দুই বোন আনিসা (১৪) ও মাত্র চার মাস বয়সী ছোট বোন, এবং খালা তানিফা ইয়াসমিন (৩৫)। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন প্রেমা।

চমেক হাসপাতালে প্রেমার চাচা আসলাম ফকির বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত দশটায় ভাইয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়  ভিডিও কলে। ঢাকার মিরপুরে পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করা শামীম ফকির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ঈদের ছুটিতে কিছুটা আনন্দ ও শান্তি খুঁজে বের করতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যাবার পথে এই দূর্ঘটনা ঘটে। কক্সবাজার থেকে ফিরে স্ত্রী-মেয়েদের নিয়ে পিরোজপুরের কদমতলায় গ্রামের বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন, আমরা অপেক্ষা করছিলাম, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করব। কে জানত, সেটাই শেষ কথা ছিল! কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা, যা চিরতরে ছিনিয়ে নিলো তার সুখ-স্মৃতি।

প্রেমার স্বজন নাদিরা আক্তার বললেন, দুর্ঘটনার পর পরিবারটির অন্যান্য সদস্যদের মরদেহ ফিরোজপুরের কদমতলায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন প্রেমার মরদেহও সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এক পরিবারের সবার কবর একসাথে হবে! যেন একটি পরিবার চিরতরে এক সঙ্গে চলে গেছে। এমন দুঃখজনক দৃশ্য চিরকাল  এলাকাবাসীর মনে রয়ে যাবে।

এদিকে লোহাগাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবাকে হারিয়ে আহত শিশু আরাধ্যা বিশ্বাসকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে আজ তাকে  ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়।

চমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. ধীমান চৌধুরী জানান, শিশুটির মাথায় আঘাত লেগেছে, শরীরের অন্যান্য স্থানেও জখম হয়েছে। দুই পায়ে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে।

দুর্ঘটনায় আহত শিশু আরাধ্যা বিশ্বাসের বাবা দিলীপ বিশ্বাস, মা সাধনা মণ্ডলও মারা গেছেন একই দুর্ঘটনায়। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
শ্রীলংকার ২ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সফররত ঢাকা চেম্বারের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মৌসুমি ফল উৎসব 
সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নেই : আব্দুস সালাম
আচরণবিধির খসড়া অনুমোদন : সংসদ নির্বাচনে পোস্টারের ব্যবহার বন্ধ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে ১ জুলাই থেকে বিশেষ কর্মসূচি পালিত হবে
পটুয়াখালীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে 
রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাব পরিচয়ে কোটি টাকা ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার ৫
জ্বালানি নিরাপত্তা ও বায়ুমান উন্নয়নে বাংলাদেশকে ৬৪০ মিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক
‘বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার’র জন্য ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মনোনীত
ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল প্রবাসীর 
১০