সিলেট, ৮ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর গণহত্যার প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘট কর্মসূচি চলাকালে সিলেটের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় পুলিশ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মঙ্গলবার বাসস’কে এই তথ্য জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম। তিনি জানান, নগরের মিরবক্সটুলায় কেএফসি রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনায় রয়েল মার্ক হোটেল ও ভবন কর্তৃপক্ষ একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এসএমপি কমিশনার বলেন, নগরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে গতকাল সোমবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। বাটা’র আউটলেটগুলোতে হামলা করে লুটপাটের ঘটনায় জড়িত কয়েক জনকে লুট করা জুতাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, কেএফসি, ইউনিমার্ট, ডমিনোজ পিজ্জাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলাকারীদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আইনশৃংখা রক্ষাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, কাজীটুলা এলাকার মো. রাজা মিয়ার ছেলে মো. রাজন (১৯), একই এলাকার আরব আলীর ছেলে ইমন (১৯), দ্বীনই ইসলামের ছেলে মো. রাকিব (১৯), লাল সাদ আহমদের ছেলে মিজান আহমদ (৩০), সওদাগরটুলা এলাকার মৃত আবুল বাশার মিয়ার ছেলে মো. আব্দূল মোতালেব (৩৫), গোয়াইটুলা এলাকার লিয়াকত আলীর ছেলে সাব্বির আহমদ (১৯), কোম্পানীগঞ্জের ফরিদ মিয়ার ছেলে জুনাইদ আহমদ (১৯), মিরের ময়দান এলাকার মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে মো. রবিন মিয়া (২০), শাহী ঈদগাহ এলাকার মো. মহছন আহমদের ছেলে মোস্তাকিন আহমদ তুহিন (১৯), দরগাহ গেইট এলাকার আব্দুল ছাত্তারের ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন (৩০), শেখঘাট এলাকার শামীম আহমদের ছেলে মো. রিয়াদ (২৪), বালুচর নতুন বাজার এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে মো. তুহিন (২৪), বটেশ্বর বাজারের সেলিম রেজার ছেলে আল নাফিউ (১৯) এবং নোয়াখালীর চাদমিল থানার পশ্চিম নাহার কিল গ্রামের সৈয়দ আলতাফ মানিকের ছেলে সৈয়দ আল আমিন তুষার (২৯)।
পুলিশ জানায়, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর গণহত্যার প্রতিবাদে সারাবিশ্ব প্রতিবাদ করছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিপরীতে কিছু উশৃঙ্খল যুবক পরিকল্পিতভাবে এসব হামলা-ভাংচুর করছে। এদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী নেতারাও এই বিষয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর গণহত্যার প্রতিবাদে সাধারণ মুসল্লিরা যখন রাস্তায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছেন তখন একদল অতি উৎসাহী ও বিশৃংখলাকারী পরিকল্পিতভাবে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।
আমরা প্রশাসনকে বলেছি, দ্রুত এদের গ্রেপ্তার করতে হবে এবং শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শাহজাহান আলী বলেন, ‘ভাংচুর ও লুটপাট প্রতিবাদের কোনো ভাষা নয়। সিলেটের সংস্কৃতিতে এমন দৃষ্টান্ত নেই। অথচ, কিছু অতি উৎসাহী মানুষ বাটা, কেএফসিসহ বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানে হামলা করে মুসলমানদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাচ্ছে। আমরা এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।’
এদিকে, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহরে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। গতকাল সোমবার রাতে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইজিপি বলেন, ‘আমাদের কাছে হামলাকারীদের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে এবং দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। এ বিষয়ে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।’