ঢাকা,৮ জুলাই ২০২৫ : (বাসস) : পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পানি আইন ২০১৩ এর আওতায় হাওরে ট্যুরিজম নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই সুরক্ষা আদেশ চূড়ান্ত করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, প্রকৃতিকে দেখার জন্যই তো ট্যুরিজম। প্রাকৃতিক নিসর্গকে আপনাকে উপলব্ধি করতে হবে। আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যে হাওরের ট্যুরিজমকে একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হবো।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে 'হাওরের সংকট ও সম্ভাবনা' শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সুরক্ষা আদেশের খসড়াটা আমরা প্রস্তুত করেছি এবং এটি চূড়ান্ত করে দিয়ে যাবো যেখানে থাকবে হাওরে পর্যটক গেলে তারা কি করতে পারবেন আর কি করতে পারবেন না।
তিনি আরো বলেন, হাওরে হাউজবোটগুলো কোথায় যাবে আর কোথায় যেতে পারবেনা, কি কি আদেশ মেনে হাউজবোট চালাতে হবে সেটা সুরক্ষা আদেশে পরিষ্কার বলা থাকবে।
নিজেকে হাওরের আর হবিগঞ্জের মানুষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাওর হচ্ছে মিঠা পানির সমুদ্র। এ মিঠা পানির সমুদ্রে যখন বর্ষার আগে দেখা যায় যে সবুজ বরো ধান হচ্ছে, বোরো ধান কাটার এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা যায় যে হাওরে পানি এসে গেছে, পানি আসার পরে দেখা যাবে আবার এখানে ধান রোপণ করা হচ্ছে। এ রকম অনন্য ইকো সিস্টেম আসলে পৃথিবীতে বিরল।
উপদেষ্টা বলেন, হাওর মাস্টারপ্ল্যানটা শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে। সাম্প্রতিক সময়ে এই মাস্টার প্ল্যান হালনাগাদকরণের খসড়াটা সরকারের তরফ থেকে চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই মাস্টারপ্ল্যানটা আপডেট করার ক্ষেত্রে আমার একটা স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল যে হাওর এলাকার স্থানীয় মানুষজনের মতামত নিয়ে এটি হালনাগাদ করতে হবে।
এ ছাড়াও সেই নিরিখে দিনব্যাপী একটি কর্মশালা হয়েছে হাওরের উপর এবং ওখানে যে অভিমত গুলো পাওয়া গেছে সেটি মাস্টার প্ল্যান হালনাগাদকরণে সন্নিবেশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
হালনাগাদ করণের খসড়াটা আমরা ওয়েব সাইটে দিয়ে দেবো। এ ছাড়া হাওর নিয়ে আরো যারা কাজ করেন তাদের মতামত নিয়ে হাওর মাস্টারপ্ল্যান হালনাগাদকরণ চূড়ান্ত করা হবে তিনি জানান।
উপদেষ্টা বলেন, কোন্ কোন্ হাওরে গাছ লাগানো উচিত তার একটা তালিকা আমরা মোটামুটি প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছি। হাওরে গাছ লাগাতে হয় সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে যখন পানি নেমে যায়। প্রাথমিকভাবে ৫টা হাওরে বনায়নের কাজ শুরু করা হবে বলে উপদেষ্টা উল্লেখ করেন।
উপদেষ্টা বলেন, হাওরগুলোর সীমানা চিহ্নিত করার একটা নির্দেশনা দিয়েছি। কারণ হাওর বলে কিছু আছে এটা খুব কম জায়গাতেই ল্যান্ড রেকর্ড আছে। হাওর এলাকায় কিছু খাল,কিছু পুকুর, কিছু নদী আছে, আর ধানী জমি যেগুলো মানুষের নামেই রেকর্ড করা আছে। অনেক মানুষ হাওরের মালিকানায় যুক্ত, সেজন্য হাওর ব্যবস্থাপনাটা একটু কঠিন হয়ে পড়ে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতা করেন নেত্রকোনা সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা'র সভাপতি রফিক মুহাম্মদ। এ ছাড়া বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ হাবীবুর রহমান, আরটিভির বার্তা সম্পাদক ও সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন, গ্রিন কনসার্ন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক তাহমিনা খানম এবং সাংবাদিক এরফানুল হক নাহিদ।
অনুষ্ঠানে 'হাওরের সংকট ও সম্ভাবনা' শীর্ষক কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মুহম্মদ মোফাজ্জল।