ঢাকা, ১৪ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শেয়ার বাজারে আরও ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনদের একসঙ্গে ‘হাতে হাত রেখে’ কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং পরিবর্তন আনার জন্য একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ বড় বড় কোম্পানিগুলো যদি দেখে যে, সমন্বিতভাবে পুঁজিবাজারে পরিবর্তন হচ্ছে, তখনই তারা বাজারে আসবে।’
রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং ইআরএফ যৌথভাবে আয়োজিত ‘পুঁজিবাজারের পুনর্গঠন ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।
ইআরএফ সভাপতি দৌলত আখতার মালার সভাপতিত্বে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি গোলাম সামদানি ভূঁইয়া বক্তব্য রাখেন।
আমির খসরু বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বিএসইসির মতো পুঁজিবাজার সম্পর্কিত সকল প্রতিষ্ঠানকে ‘হাতে হাত মিলিয়ে’ এবং সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে যাতে শেয়ার বাজারের সুষ্ঠু কার্যক্রম নিশ্চিত করা যায়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিগত সরকারের ভুল নীতির কারণে দেশের পুঁজিবাজার বছরের পর বছর ধরে সকল স্তরে একটি ‘দুষ্টচক্রে’ পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এটিকে ‘সু-চক্রে’ রূপান্তর করতে হবে এবং পুঁজিবাজারে বৃহৎ পরিসরে সংস্কার ও পরিবর্তন আনতে হবে।’
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আমীর খসরু বলেন, বিএসইসিকে একটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ আনার কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ এ দেশে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি রয়েছে।
পুঁজিবাজারে ‘আস্থা সংকট’ দূর করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘যা যা প্রয়োজন, তা হল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘ফেয়ার প্র্যাকটিস’ বা ন্যায্য কার্যক্রমের সাথে নিজেদের মানিয়ে নেওয়া, যা ইতোমধ্যেই বিদ্যমান।’
তিনি বলেন, বিএনপির শাসনামলে পুঁজিবাজার কিংবা ব্যাংকিং খাতে কোনো ধস হয়নি, কারণ সে সময় এই খাতে কোনো রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে খসরু বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
তিনি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর করতে হবে।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজার পুনর্গঠন করে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে সকলেরই প্রচেষ্টা দরকার।
তিনি বলেন, আইপিও প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজ করার কাজ চলছে। পাশাপাশি আগামী এক বছরের মধ্যে অন্তত ১০টি বড় মূলধনি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং আর্থিক প্রকাশের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন, যাতে দেশি-বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, গত ১৬ বছরে দেশের শেয়ার বাজার ধ্বংস হয়ে গেছে কারণ সেই সময়কালে কোনও বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি।
ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারে কোনো প্রকার বাজার কারসাজি দেখতে চাই না। এ জন্য সবারই সতর্ক থাকা প্রয়োজন।