পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সামনে ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ 

বাসস
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৯:১৪
আজ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সামনে ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ । ছবি : বাসস

 আবু নাঈম

পঞ্চগড়, ৩০ জুলাই ২০২৫ (বাসস): কোটাবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশের মতই সরব ছিল উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের শিক্ষার্থীরা। ১৯ জুলাই পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। মামলা ও ধরপাকড়ে আন্দোলনে ছন্দপতন ঘটে । 

আন্দোলনকে প্রতিহত করতে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নানামুখী চাপে পঞ্চগড়ের আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসলেও ৩০ জুলাই আন্দোলনে যোগ হয় নতুন মাত্রা। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে পঞ্চগড় আধুনিক 
সদর হাসপাতালের সামনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী তার জেলায় জুলাই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা 
বর্ণনা করে বলেন, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ জুলাই শিক্ষার্থীরা পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়। সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।  ফলে ধীরে ধীরে কমছিলো শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে মাত্র ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়েই সেদিন কর্মসূচি সফল হয়। পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের হালুয়াপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেনের পুত্র ফজলে রাব্বী জেলার মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের সম্মান শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। 

ফজলে রাব্বী জানান, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ যখন পুলিশের গুলিতে নিহত হন, তখন পঞ্চগড়েও ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরাট জমায়েত। আবু সাঈদের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দেখে সারাদেশের মত এখানকার শিক্ষার্থীরাও ফুঁসে ওঠে। আন্দোলন আরও বেগবান হয় ১৭ জুলাই। ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এসে হুমকি প্রদর্শন করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাঈমুজ্জামান ভূঁইয়া মুক্তা। এরপর ১৯ জুলাই তার প্রত্যক্ষ নির্দেশে আন্দোলনে হামলা করে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। আন্দোলন পণ্ড হলে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগও করে তারা। এ ঘটনায় দুইটি মামলা হয়, শুরু হয় ধরপাকড়। 

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনমুখী করা ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে বন্ধ ছিল ইন্টারনেট ব্যবস্থা। শহরে অবস্থান করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। সেসময় মাঝে মধ্যে সীমান্ত এলাকায় গিয়ে ভারতীয় নেটওয়ার্কে অনলাইনে খবরাখবর দেখতাম। এভাবে দিনগুলো পার হচ্ছিলো, ঢাকায় কর্মসূচি  জোরালো হচ্ছিল। তখনও পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন কমিটি ছিলোনা। নিজেদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে পরামর্শ করে ৩০ জুলাই পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সামনে থেকে বিক্ষোভ শুরু করার ঘোষণা দেই।  

তিনি আরো বলেন, সেদিন সকাল থেকেই শহরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে আমাদের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। কিন্তু পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতায় কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ি। এক পর্যায়ে হাসপাতালের ভেতর থেকে আমাকে এবং আমার সহযোদ্ধা খোরশেদ, মাসুদ ও আশিককে আটক করে পুলিশ। এই দৃশ্য দেখে অনেক শিক্ষার্থী হতাশ হয়ে ফিরে যায়। পুলিশ সড়কের পাশে দাঁড়িয়েই দীর্ঘক্ষণ আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং কোন কর্মসূচি না করার শর্তে আমাদের ছেড়ে দেয়।

ফজলে রাব্বী পুলিশের কাছে কর্মসূচি না করার অঙ্গীকার করলেও ভেতরে ভেতরে কর্মসূচি করার ব্যাপারে অটল ছিলেন। পুলিশের উপস্থিতি দেখে অনেকেই তখন চলে যায়। তবে কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থীসহ ৩০-৪০ জন তখনও কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রত্যয় নিয়ে উপস্থিত ছিল। 

রাব্বী বলেন, ৩০ জুলাইয়ের এই বিক্ষোভ সমাবেশেই আমরা ৯ দফা দাবি উত্থাপন করি। কিছুদূর যেতেই গতিরোধ করে পুলিশ। ছিনিয়ে নেয় ব্যানার। 

পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেখানেই দাঁড়িয়েই বক্তব্য দেন ফজলে রাব্বী। তিনি ঘোষণা দেন, ‘একাত্তরে সর্বপ্রথম মুক্ত হয়েছিল পঞ্চগড় জেলা, এ আন্দোলনেও সবার আগে পঞ্চগড় মুক্ত হবে।’ 

পঞ্চগড়ের এই কর্মসূচি ব্যাপক সাড়া ফেলে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেদিনই ফজলে রাব্বীকে সমন্বয়ক করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের  পঞ্চগড় জেলা কমিটি গঠন করে। 

ফজলে রাব্বী নিজের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যের কথা তুলে ধরে বাসসকে বলেন, ছাত্রজনতার এই আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন ৫ আগস্টে হলেও পঞ্চগড় থেকে আওয়ামী লীগ বিতাড়িত হয় ৪ আগস্টেই। সেই দিক থেকে তো বলতেই পারি, ‘২৪ এর আন্দোলনেও পঞ্চগড় সবার আগে স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩০ জুলাইয়ের পর থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতন পর্যন্ত সারাদেশের মতোই পঞ্চগড়ের আন্দোলনকারীরাও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ছিল। প্রতিনিয়ত হুমকি আসতো। রাতে শহরে থাকতে পারতেন না। একেক রাতে একেক জায়গায় ঘুমাতে হতো। তবে ৩০ জুলাইয়ের পর পঞ্চগড়ের আন্দোলন গতি ফিরে পায়। এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবক এবং রাজনৈতিক দলগুলোও একাত্মতা ঘোষণা করে। অনেক নেতাকর্মী শুরু থেকেই সাথে থাকলেও এসময়ে তাদের উপস্থিতি বাড়ে। ৪ আগস্ট আন্দোলন প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রস্তুতি নেয় সন্ত্রাসীরা। এসবের তোয়াক্কা না করে পঞ্চগড় আদালতের সামনে থেকে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রজনতা। সেদিন ছাত্রজনতার কাছে পরাজিত হয়ে পঞ্চগড় ছেড়ে পালিয়ে যায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। সেদিনই আমরা বিজয়ের স্বাদ পেয়েছিলাম। তবে চূড়ান্ত বিজয়ের অপেক্ষা তখনও সবার মধ্যে। 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
হেনরির বোলিং তোপে প্রথম দিনই অলআউট জিম্বাবুয়ে
চাঁদপুরে মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট পাওয়ায় হাসপাতাল মালিকের জরিমানা
জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে সুনামগঞ্জে গ্রাফিতি প্রদর্শনী
মাদারীপুরে শিক্ষার্থীদের উপর বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণ করে পুলিশ ও ছাত্রলীগ
ঝিনাইদহে চোরাই মোবাইল ও টাকা উদ্ধার
কেরানীগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের আগানগরে উন্মুক্ত ওয়ার্ড সভায় শুনানি অনুষ্ঠিত
নাটোরে শিশু শহীদদের স্মরণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা
মাঠ পর্যায়ে ভূমি কর্মকর্তাদের পদবী পরিবর্তনের উদ্যোগ
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় : বগা ফেরিঘাটের ইজারা বাতিল করলো সওজ
সিলেট সীমান্তে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চোরাই পণ্য জব্দ
১০