ঢাকা, ৭ আগস্ট, ২০২৫ ( বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে সকল রাজনৈতিক দল যেন এক জায়গায় বসতে পারে সে রকম পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করছে বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি দক্ষিণ বা উত্তরপন্থি নয় বাংলাদেশ পন্থি। বিএনপি গণমানুষের দল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শিক পার্থক্য থাকলেও জাতীয় স্বার্থে সবাই যেন এক জায়গায় বসতে পারে সেরকম পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করছে বিএনপি। এজন্য সব পন্থার সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় আগামী নির্বাচনে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে কতটা আশাবাদী সাংবাদিকদের এরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল-শক্তি এবং সব জনগণের প্রতিনিধিত্বকে নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের সঙ্গে কথা বলছি। কারণ আমরা একটা গণমানুষের দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে মনে করি এবং সেই হিসেবে সব দলের নেতাদের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা করতে চাই।’
সামনের দিনে জনগণ ইতিহাস সৃষ্টি করবে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন ‘জনগণ এবং সেনাবাহিনীই’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, পুলিশের বর্তমান কাঠামো অনুসারে ওভারনাইট পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ এ মুহূর্তে আমাদের নেই। কিন্তু তাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে একটা জায়গা রাখতে হবে। তার সঙ্গে থাকবে অন্য বাহিনী। বিজিবি, আনসারসহ যাদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে সেনাবাহিনী। তারা খুব সম্ভবত এক লাখ সদস্য নিয়োজিত করার জন্য একটা পরিকল্পনা করছে সরকারের অনুমতি নিয়ে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জনগণই এবার সবচেয়ে স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে চায়, এটা তাদের প্রত্যাশা। সুতরাং যখন জনগণের প্রত্যাশা এরকম হবে যে, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, সুন্দর, একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করা নিজেদের ভোটাধিকার উৎসবের মতো করে প্রদান করা সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে। এখানে প্রার্থীর মানসিকতা ও ভোটারদের মানসিকতাই মুখ্য হবে। আমরা আশা করি, সামনের দিনে জনগণ এই ইতিহাস সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, সবাই মিলে যদি আমরা নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ ও বিশ্বব্যাপী যাতে গ্রহণযোগ্যতা পায় সেরকম নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি, সেই জায়গায় আমার মনে হয় না অন্য কোনো শঙ্কা থাকবে। তা ছাড়া এখন সার্ভিলেন্স হিসেবে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবে এবং সাংবাদিকদের যে ভূমিকা থাকবে, সেটা প্রণিধানযোগ্য।
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল ঐক্যবদ্ধভাবে, সবার মতামতের ভিত্তিতে। নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত ১২টি আইন, বিধি, বিভিন্ন রকমের নীতিমালা আছে।
তিনি বলেন, পর্যবেক্ষক নিয়োগসহ মোট ১৭টি, আরপিও, ভোটার তালিকা প্রণয়ন আইন। এখানে ২৪১টি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এর বাইরে আমরা দলের পক্ষ থেকে অনেক সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। এগুলো কিছু আইনের খুঁটিনাটি পরিবর্তন, কোথাও কয়েকটি শব্দ, কোথাও কয়েকটি লাইন পরিবর্তন হয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই দেশের রাজনীতিতে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যাতে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে আদর্শিক ফিলোসফিক মতপার্থক্য থাকলেও সবাই জাতীয় স্বার্থে এক জায়গায় বসতে পারি। যার লক্ষ্যে আমরা সকল পন্থার সঙ্গে আলোচনা করতে চাই। এখন ইসলামপন্থি দল হিসেবে আপনারা যাদের অভিহিত করছেন তারা তো বাংলাদেশের রাজনীতির একটা অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। আরও বেশি করে বলব, যে দেশের জনগণের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি ইসলাম ধর্মাবলম্বী তাদের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন না থাকলেও মানসিক সমর্থন আছে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অনেক সময় জাতীয় সংসদে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে অনেক বিষয়ে একটা সমঝোতার পথে আলোচনা করতে হয়। সব মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে আইন প্রণীত হলে সেই আইন টেকে, সেই আইন বাস্তবায়ন করা যায়।