ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিশেষজ্ঞরা এক সেমিনারে বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘দ্য পাওয়ার অব লোকাল : হাউ গ্রাসরুটস কমিউনিটিজ ড্রাইভ এসডিজি অ্যাচিভমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিআইআইএসএস ও ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর প্রজেক্ট সার্ভিসেস (ইউএনওপিএস) যৌথভাবে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এতে জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, তরুণ প্রতিনিধি ও তৃণমূল নেতারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় উদ্ভাবন ও শাসন ব্যবস্থার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় নরওয়ে দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন উদ্বোধনী অধিবেশন সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিআইআইএসএস-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস, ইউএনওপিএস বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরালিধরন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মারুফুল ইসলাম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান ড. মাইকেল ক্রেজা ও ‘নিজেরা করি’ সংগঠনের সমন্বয়ক খুশি কবির।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ অসাধারণ উন্নয়ন অগ্রগতি দেখিয়েছে। স্থানীয় শাসনব্যবস্থায় বিনিয়োগ কোনো বিকল্প নয়, এটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতের জন্য অপরিহার্য।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মারুফুল ইসলাম স্থানীয় পর্যায়ে তথ্য ও শাসন ব্যবস্থায় ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের দৃষ্টি আছে, কিন্তু সেটি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় অংশীদারদের ক্ষমতায়ন করতে হবে, তাদের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং তথ্য ও প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়।
বিআইআইএসএস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস বলেন, বাস্তব উন্নয়ন আমাদের স্থানীয় সম্প্রদায়ের হাতে। তাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা ও সমাধান আমাদের নীতিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে অপরিহার্য।
ইউএনওপিএস বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সুধীর মুরালিধরন বলেন, বিআইআইএসএস-এর সঙ্গে একযোগে আমরা স্থানীয় কণ্ঠস্বর ও প্রচেষ্টাকে আরো জোরালো করছি। টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত পরিবর্তন তখনই সম্ভব, যখন তা অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনার ভিত্তিতে এবং কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগে পরিচালিত হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হলো স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে ক্ষমতায়ন করা, যাতে তারা এসডিজি বাস্তবায়নের নেতৃত্ব দিতে পারে। তাদের সাফল্যই জাতির সাফল্য।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান ড. মাইকেল ক্রেজা বলেন, এসডিজি শুধু ঊর্ধ্বমুখী পদ্ধতিতে সফল হতে পারবে না। স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। নারীদের কেন্দ্রে রেখে ইইউ ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে এসডিজির স্থানীয়করণকে সমর্থন দিয়ে আসছে।
‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির বলেন, যখন কমিউনিটিগুলো নিজেরা উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করে এবং নেতৃত্ব দেয়, তখন ফলাফল হয় আরো টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত। এই গোলটেবিল বৈঠক সেই শক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি পদক্ষেপ।
স্থানীয় তথ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, অর্থায়নের পদ্ধতি উন্নত করা এবং সরকার, উন্নয়ন সহযোগী ও সিভিল সোসাইটির মধ্যে গভীর সহযোগিতা বাড়িয়ে এসডিজি অর্জনের গতি ত্বরান্বিত করার আহ্বানের মাধ্যমে আলোচনা শেষ হয়।
বিআইআইএসএস একটি আন্তর্জাতিক ও কৌশলগত বিষয়ক নীতি-গবেষণায় শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং ইউএনওপিএস বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা, মানবিক সহায়তা ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অবকাঠামো, ক্রয়, মানবসম্পদ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় বিশেষজ্ঞ সহায়তা প্রদান করে থাকে।