কিশোরগঞ্জের হাওরে মাছ কমছে, অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত

বাসস
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৪১ আপডেট: : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৪
ছবি: সংগৃহীত

\ সাইফুল মালেক চৌধুরী \

কিশোরগঞ্জ, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): মাছে ভাতে বাঙালি প্রবাদের মাছ ও ভাত (ধান) উৎপাদনের অন্যতম জনপদ হাওরাঞ্চল। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওরকে মিঠাপানির মৎস্য সম্পদের আড়ত বলা হয়। কিন্তু এই অঞ্চল থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। 

নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাস, খাল-বিল ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে হাওরে মাছের সংখ্যা কমছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য সংশ্লিষ্টরা।

কিশোরগঞ্জ মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, উওর পূর্বাঞ্চলীয় ৭ জেলার ২৫ উপজেলায় ছোট-বড় ৪২৩টি হাওর, জলাশয়, ২৮হাজার জলমহাল, ৬ হাজার ৩০০ বিল নিয়ে হাওরের আয়তন প্রায় ৮লাখ ৫৮হাজার ৪৬০ হেক্টর। 
এক সময় হাওরে প্রায় ৩শ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ ছিল। হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত মাছ এখনও নিজেদের চাহিদা মিঠিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও মানব সৃষ্ট কারণে বিস্তীর্ণ মৎস্য ভাণ্ডার এখন হুমকির মুখে।

সূত্র আরও জানায়, হাওরে বর্তমানে ৮০ থেকে ১২০ প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। হাওরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলেদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। হাওরে ক্ষতিকর চায়না জালের ব্যবহার, পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন, সেচ দিয়ে মাছ শিকার ও জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। এগুলো ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

মৎস অধিদপ্তর সূত্র ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাওরাঞ্চলে এক সময় প্রায় ২শত ৬০ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ ও ২৪ প্রজাতির সুস্বাদু চিংড়ির আবাসস্থল ছিল। কিন্তু জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব, মানব সৃষ্ট দুর্যোগ, নাব্যতা কমে যাওয়া ও নিষিদ্ধ উপায়ে ধরার কারণে এসব মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। সংকটাপন্ন মাছের সংখ্যাও বহু। তাই দেশি প্রজাতির মাছ নিয়ে উদ্বিগ্ন হাওর এলাকার বাসিন্দারা।

তারা জানান, বিরল প্রজাতির মিঠাপানির মাছ রক্ষায় মৎস্যজীবী ও মৎস্য অধিদপ্তর যৌথ পরিকল্পনা করে উদ্যোগ নিতে হবে। গেল দু দশকে ২০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

জেলে আবু সাঈদ বলেন, বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস এই তিন মাস প্রতিবছর মাছ ধরা বন্ধ রাখতে পারলে অনেকাংশে মাছের বংশবিস্তার বৃদ্ধি পাবে। কারণ এ সময় মাছ ডিম ছাড়ে। মৎস্য আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই, এটিরও বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে হাওরের মাছ বাড়বে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ, জলাশয়ে পানি সংকট, মৎস্য অভয়াশ্রম কম থাকা, মৎস্য আবাস ভূমির চ্যানেল বন্ধ হওয়া, অবৈধ জাল ও কিটনাশক ব্যবহারে নির্বিচারে মাছ ধরায় হাওরে মাছের সংখ্যা দিন দিন কমছে। 

তবে কারেন্ট জাল ও চায়না জালের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। যারা বিল ইজারা নেন তারা যেন বিল সেচে মাছ না ধরে সেই প্রচারণা চালাচ্ছি। প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মৎস্য আইন বাস্তবায়নে কাজ করছি। বিলুপ্ত মাছ পুনরুদ্ধারে কাজ করছে মৎস্য অধিদপ্তর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
জবিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতা
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সাথে ধর্ম উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
বেগম খালেদা জিয়াকে মৌসুমি ফল পাঠিয়েছেন ভুটানের রাষ্ট্রদূত
ঢাকাসহ তিন জেলায় দুদকের অভিযান : অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
জুলাই আন্দোলনের যুবা ও জেন্ডার ডাইভার্সদের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
জামায়াত আমীরের সঙ্গে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির মানবাধিকার উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
শেখ হাসিনার ও পরিবারের নামের স্থাপনার নাম পরিবর্তন করেছে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়
কুস্তিতে পুরুষ-নারী উভয় বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন আনসার
ওয়ানডে ফরম্যাটে এনসিএল চালুর কথা ভাবছে বিসিবি
১০