চলনবিলে মাছ উৎপাদন বাড়ছে

বাসস
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:০৬
ছবি: বাসস

ফারাজি আহমেদ রফিক বাবন

নাটোর, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : দেশের অন্যতম প্রধান মৎস্য ভাণ্ডার চলনবিলে মাছ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মৎস্যসম্পদ রক্ষায় গৃহীত কার্যকর পদক্ষেপ এবং এ মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে প্লাবনভূমির স্থায়িত্ব বেড়ে যাওয়ায় এ বছর উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চলনবিল প্রতিবছর প্রায় ৬৫ হাজার টন মাছ উৎপাদন করে দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১৪ শতাংশ সরবরাহ করে। এর মধ্যে নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিল এলাকা থেকে ৮ হাজার টন মাছ পাওয়া যায়, যা চলনবিলের হৃদয় হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মোট মাছ উৎপাদন হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৮০ লাখ টন।

দেশের বৃহত্তম বিল চলনবিল নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার নয়টি উপজেলায় বিস্তৃত হলেও বর্তমানে এর আয়তন মাত্র ৩৬০ বর্গকিলোমিটার। মোট ৪০টি নদী, ৫০টি বড় খাল, ৩০০টি ছোট খাল, ২০ হাজার সরকারি পুকুর এবং ৭০ হাজার ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর চলনবিলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে বড়াল ও আত্রাই নদীও রয়েছে।

এসব জলাধারের প্রবাহ চলনবিলে প্রাণ সঞ্চার করে। তবে পদ্মা ও যমুনা নদীর পানির সংকট চলনবিলে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে পদ্মা নদীর চারঘাট রেগুলেটর বড়াল নদীর প্রবাহে চলনবিলে পানির সংকট তৈরি করেছে।

পানির সংকট ছাড়াও, বিভিন্ন অবকাঠামোর অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ এবং কৃষিজমি, পুকুর ও হাওরে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার মাছ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

এর পাশাপাশি, হাজারো ধানকল, শিল্পকারখানা, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগির খামারের বর্জ্য চলনবিলকে দূষিত করছে।

কৃষিজমিতে সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যাপক হারে উত্তোলন করায় মাছের ভাণ্ডারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

একসময় চলনবিল ছিল ১৫১ প্রজাতির দেশি মাছের আবাসভূমি। কই, শিং, বাচা, পাবদা, আইড়, গুচি-বাইম মাছের খ্যাতি ছিল সারা দেশে। বিলুপ্ত প্রায় শিলন মাছের দেখা পাওয়া যায় চলনবিলে।

চলনবিলের বিস্তীর্ণ জলাভূমি কাঁকড়া, শামুক ও ঝিনুকের জন্যও প্রসিদ্ধ। তবে চিতল, ফলি, ভেদা,  বৌমাছ, বাইম, গুড়পই প্রজাতির মাছ এখন আর দেখা যায় না। চলনবিলের ১১ প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

তবুও আশার কথা হচ্ছে- চলনবিলের মৎস্যসম্পদ ও জলজ প্রাণী রক্ষায় কাজ শুরু হয়েছে। জনসচেতনতার মাধ্যমে জনমত গড়ে তোলা হচ্ছে।

চলনবিল জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা কমিটি বিলে মাছ, কাঁকড়া, শামুক ও ঝিনুক রক্ষায় সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এক দশক ধরে চলনবিলে অবৈধ মাছ শিকার ও অন্যান্য জলজ প্রাণী রক্ষায় নিয়মিত প্রচারণা চালাচ্ছি।’

তিনি জানান, এসব অভিযানে মাছ, কাঁকড়া ও সাপ উদ্ধার করা হচ্ছে, কচ্ছপ ছাড়া হচ্ছে, অভিযুক্তদের প্রশাসন শাস্তি দিচ্ছে। মৎস্য অধিদফতর ও প্রশাসনের অভিযানে অবৈধ জালও অপসারণ করা হচ্ছে।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার গোডাউন পাড়া-দহ এলাকার জেলে জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর চলনবিলে পানি বেশি, মাছও বেশি। নিয়মিত মাছ পাচ্ছি। পানি কমে গেলে আরও বেশি মাছ পাওয়া যাবে।’

চলনবিল পয়েন্টের সৌখিন মৎস্য শিকারী শামীম আহমেদ বলেন, ‘এ বছর চলনবিল থেকে প্রচুর মাছ ধরা যাচ্ছে। প্রশাসন ও মৎস্য অধিদফতরের কার্যক্রমের কারণে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরা অনেক কমেছে। তাই মাছ উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।’

সিংড়া উপজেলা মৎস্য দপ্তরের সূত্র মতে, সিংড়া উপজেলার চলনবিলের মাছ সাত হাজারেরও বেশি জেলের জীবিকা।

এদের মধ্যে ৬ হাজার ৬০৩ জনকে স্মার্ট আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে। মৎস্য দপ্তর তাদের ক্ষতিকর পদ্ধতি এড়িয়ে নিরাপদে মাছ ধরার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য দপ্তর মাছের সম্পদ রক্ষায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।

গত এক বছরে উপজেলায় ২৫০টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে, চারটি নৌকা জব্দ, ৬ হাজার ৫০০টি অবৈধ চায়না ডাবল নেট জব্দ ও ধ্বংস, দুই লাখ মিটার ফাঁদ অপসারণ, এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এ বছর দীর্ঘস্থায়ী বর্ষাকাল দেশি মাছ উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘মৌসুম শেষে আমরা আশা করছি গত বছরের তুলনায় উৎপাদন ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে’।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মজহারুল ইসলাম বাসসকে বলেন, ‘প্রশাসন চলন বিলের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় বদ্ধপরিকর। আমরা শুধু মৎস্যসম্পদ রক্ষাই নয়, জেলেদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের জন্যও কাজ করছি।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
বিশেষজ্ঞ মতামত পর্যালোচনায় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক
জবিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি প্রতিযোগিতা
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সাথে ধর্ম উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
বেগম খালেদা জিয়াকে মৌসুমি ফল পাঠিয়েছেন ভুটানের রাষ্ট্রদূত
ঢাকাসহ তিন জেলায় দুদকের অভিযান : অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে
জুলাই আন্দোলনের যুবা ও জেন্ডার ডাইভার্সদের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি উদ্বোধন
জামায়াত আমীরের সঙ্গে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির মানবাধিকার উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
শেখ হাসিনার ও পরিবারের নামের স্থাপনার নাম পরিবর্তন করেছে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়
কুস্তিতে পুরুষ-নারী উভয় বিভাগেই চ্যাম্পিয়ন আনসার
১০