
ঢাকা, ২৩ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'রাজনীতিবিদদের হাতেই রাজনীতি থাকা উচিত।'
আজ রাজধানীর ভাসানী ভবনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সদ্য প্রয়াত সাইফুল ইসলাম পটুর আত্মার মাগফেরাত কামনায় অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত পূর্ব আলোচনা সভায় রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘প্রকৃত রাজনীতিবিদের কাছ থেকে রাজনীতি হারিয়ে যাচ্ছে। যারা খাল ও নদী ধ্বংস করে, সেই ভূমিদস্যুরাই আবার রাজনৈতিক দলের নেতা হয়, অবৈধ উপায়ে বিত্তশালী হয়। শেখ হাসিনার আমলেই এমন ঘটনা বেশি ঘটেছে।'
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ভূমিদস্যুরা ঢাকা শহরের খাল-বিল ও নদী ধ্বংস করেছে। অনুমোদন না নিয়ে যে যেভাবে পারছে, তলার পর তলা উঠিয়ে দালান তৈরি করছে। কিন্তু সেদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কোনো নজর নেই।
তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারের সৃষ্টি মোগল আমলে। এখানে নদী ছিল। এক সময় পাল তোলা নৌকা আসত।
জাহাজ আসত। এই নদী আমরা রক্ষা করিনি, আমরা সেট মনেই করিনি। তাড়াতাড়ি ভরাট কর, জায়গা দখল কর। এখানে কোনো প্লানিং ছাড়াই আমরা বাড়ি বানাবো, ভাড়া দেবো অথবা বিক্রি করে টাকা আয় করবো।
গ্রামের জমি বিক্রি করে ঢাকায় এসে ফ্ল্যাট কিনছে। মানুষ অতি দ্রুত বড় লোক হতে চাচ্ছে। সেই বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, সেই নদী, সেই পুকুর আর রাখতে চাচ্ছে না। টাকাকেই ভাবা হচ্ছে দেবতা। এ কারণেই আজ সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা কেঁপে উঠছি। এ জন্যই আমরা বলছি, যার যে কাজ, রাজনীতিবিদ, যারা রাজনীতি করছে তাদের ওপর রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া। এখানে অন্য কেউ সেটা ঠিকভাবে করতে পারবে না।
রিজভী বলেন, ‘এই ঢাকায় এত বড় বড় নেতা, গবেষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-ধোলাইখাল বন্ধ করে দেওয়া হলো।
এটাকে পুনঃখনন করে, পরিষ্কার করে পানিটা যাতে ক্লিন থাকে, সেই ব্যবস্থাটা আমরা কেন করলাম না? মিরপুরের পাইকপাড়া-এই এলাকায় খাল ছিল, তা গাবতলী গিয়ে মিলত। সেটা এখন আর দেখি না।’
তিনি বলেন, ‘ভূমিদস্যু ও নগর প্ল্যানার-এদের কাছে খাল, পরিবেশ, নির্মল বাতাস শত্রু পক্ষ। শুধু ঢাকা নয়; সারা বাংলাদেশ যেন সমাজের কর্তা, তাদের কাছে শত্রু পক্ষ।
এরা কেউ ভাবেনি ধোলাই খালটা রক্ষা করতে হবে, আমাদের সন্তানদের সুস্থ রাখতে হবে। এদের সবার টাকা দরকার। ’
এক দেড় কাঠা পৈতৃক জায়গার ওপর তলার পর তলা করে করে দশ তলাও করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন? আগে বাড়ির সামনে একটি বাগান থাকতো। সেটা নেই। এখন একটি শিশু ফ্ল্যাটে বন্দি জীবন-যাপন করে। তিনি বলেন, ইংল্যান্ড-আমেরিকাতে তা হয় না। সেখানে তো কোনো খাল বা জলাধার বন্ধ করে দেওয়া হয় না।
ভূমিকম্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিল্ডিং কোড কেউ মানে না উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘যতটুকু বিল্ডিং কোড রয়েছে, তাও মানা হয় না। এই ঢাকা শহরে রাজউকের যে এলাকা সেখানেও ৯৫ শতাংশ অনুমোদনহীন বিল্ডিং তৈরি হয়। এখানে রাজউক বা অন্যদের চোখ বন্ধ।'
রিজভী বলেন, ভূমিকম্পের মধ্যে দিয়ে আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন। আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের সবার উপলব্ধি করার সময় এসেছে। তা যদি করতে না পারি, তাহলে একটা শূন্য গর্তে হারিয়ে যাব। আসুন আমরা বাসযোগ্য বাংলাদেশ এবং বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলি।
সদ্য প্রয়াত সাইফুল ইসলাম পটুর কথা স্মরণ করে রিজভী বলেন, সাইফুল ইসলাম পটু জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা তার কী মূল্যায়ন করেছি? এখানে অনেকে আছেন যাদের জীবন কেটেছে আন্দোলন, সংগ্রামে। যারা রাজনীতিতে জীবন উৎসর্গ করার মতো ভূমিকা রেখেছেন।
এদের অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা নাম করা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থী। তাদের বিষয়গুলো দলের শীর্ষ মহলে আমরা সেভাবে বলি না। তাদের ছাত্র এবং রাজনৈতিক দুটি ক্যারিয়ারই আছে।
তাদের যদি মূল্যায়ন না করি তাহলে চেতনা সম্পন্ন অনেক নেতৃবৃন্দকে হারাবো।
সদ্য প্রয়াত সাইফুল ইসলাম পটুর কথা স্মরণ করে যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেল বলেন, আজকের দিনে যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, কষ্ট করে, তাদের হয়ত অনেকেই বোকা মনে করতে পারেন। কিন্তু এই বোকারাই দলকে টিকিয়ে রাখে এবং ক্ষমতায় নিয়ে যায়।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সাবেক ছাত্রনেতা পটুর ব্যক্তিগত জীবন ও রাজপথে ভূমিকার কথা স্মরণ করে আরও বক্তব্য রাখেন তার সহযোদ্ধা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সরাফত আলী সপু, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, যুব বিষয়ক সহ সম্পাদক নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সাদরেজ জামান প্রমুখ।