বাসস
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩৬
আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:০১

‘চোখ বন্ধ করলেই দেখি, আনাস দাঁড়ায়া আছে’-এ কথা পিতা সাহরিয়া খান পলাশের

শহিদ শাহরিয়ার খান আনাস। ছবি : বাসস

প্রতিবেদন : ইসমাঈল আহসান

ঢাকা, ০৫ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : ‘স্বপ্নে দেখি, চোখ বন্ধ করলেই দেখি, আনাস দাঁড়ায়া আছে। ঘুমাতে পারি না। আজকে পাঁচটা মাস হতে চললো, আমরা চোখের পাতা এক করতে পারি না...মনে হয় এইতো আমার যাদু মণি’।

এ কথাগুলো শহিদ আনাসের পিতা সাহরিয়া খান পলাশের। তিনি ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিষণ্ন কণ্ঠে এসব বলছিলেন।

‘দুয়ার ভেঙে যে ছেলেটি মিছিলে গেছে,
 তারে তুমি ফিরায়ো না আর।
মাগো তারে তুমি পেছন হতে ডাকিও না আর।’

কবির এই কবিতাটির সাক্ষাৎ উপমা দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া আলোচিত শহিদ আনাস। পুরো নাম শাহারিয়ার খান আনাস। বয়স ১৭ বছর।  

এই কিশোরকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করেছিল পরিবার। তাই কাউকে কিছু না বলে গোপনে বাবা-মা’কে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখে রেখে মিছিলে চলে গিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে শহীদি মিছিলে নাম লেখান।

রেখে যাওয়া চিঠিতে আনাস লিখেছিলেন, ‘মা আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য কোরে বের হোলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বোসে থাকতে পারলাম না।

আমাদের ভাইরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম কোরে যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিচ্ছে। একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, ৭ বছরের বাচ্চা, ল্যাংরা মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেনো বোসে থাকবো ঘরে...।’ বাবা-মায়ের হাত থেকে সেই চিঠি এখন ১৮ কোটি মানুষের হাতে হাতে। যে চিঠিটা কাঁদিয়েছে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানবিক মানুষকে।

চিঠির শেষে তিনি লেখেন, ‘একদিন তো মরতে হবেই। তাই মৃত্যুর ভয় কোরে স্বার্থপরের মতো ঘরে বোসে না থেকে সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃত্যুও অধিক শ্রেয়। যে অন্যের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেয়, সেই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেচে না ফিরি তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।-আনাস।’

আনাসের গায়ে ছিল সাদা শার্ট এবং কালো জিন্সের প্যান্ট। ঘাতক পুলিশের বুলেট যখন বুক দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয় তখন তার শার্টটি রক্তে পুরো লাল হয়ে যায়। ছবি দেখে বোঝার উপায় নেই তার শার্টটি ছিল সাদা। শার্ট দেখে এই প্রতিবেদক নিজেও বিভ্রান্ত হন। পরে খেয়াল করে দেখা গেল, তাঁর পুরো শার্টটি রক্তে ভিজে লাল হয়ে গেছে। তারপর সেই রক্তমাখা শহিদকে এলাকাবাসী জাতীয় পতাকা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল। আর তাঁকে ইসলাম ধর্ম মতে শহিদ হিসেবে গোসল না দিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় দাফন করা হয়। তাঁর হাতে একটি ব্রেসলেট ছিল। সেই রক্তাক্ত জামা এবং ব্রেসলেটটি তাঁর মা খুলে রেখে দিয়েছিলেন। যেগুলো দেখে দেখে এখনো কাঁদেন তিনি।

সানজিদা খান দীপ্তি (৩৬) এবং সাহরিয়া খান পলাশ (৪২) দম্পতির বড় ছেলে শহিদ আনাস। ছোট ছোট দুইটা ভাই তার। সাফওয়ান (৫) প্লে গ্রুপে এবং সুফিয়ান (২) মায়ের কোলে। সাফওয়ান খেলার সাথী বড় ভাইকে খুব মিস করে। আর সুফিয়ান আনাসকে ‘আনা’ বলে ডাকতো। তাই এলাকার দেওয়ালের ছবিগুলো যখন দেখে, তখন ‘আনা আনা’ বলে ডেকে ওঠে।

গেণ্ডারিয়া আদর্শ একাডেমির বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন আনাস। শাহারিয়ার খান নামটি ছিল মূলত তাঁর বাবার। কিন্তু ভুলক্রমে তাঁর বাবার নাম সাহরিয়া খান লেখা হয়ে যায় এবং নাম চেঞ্জ করা অনেক ঝামেলা বলে বাবা তার ছেলের নাম রেখে দেন নিজের নামে ‘শাহরিয়ার খান’।

আন্দোলনে স্বৈরাচারের নৃশংসতার কারণে বাবা-মা কোনভাবেই তাঁকে বের হতে দিতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আর তাকে ধরেও রাখতে পারলেন না। গত ৫ আগস্ট সকালে আনাস সবার অগোচরে তুলা, ব্যান্ডেজ, স্যাভলন, ক্লোফেনেল জেল, পভিসেপ, ট্রাউজার-গেঞ্জি ইত্যাদি ব্যাগে ভরে প্রস্তুতি নিয়েই বের হয়েছিলেন।

সেই ভয়াল দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আনাসের পিতা পলাশ বলেন, ‘আমার মামাতো ভাই মেহেরুফ সাড়ে নয়টার দিকে ওকে কোতোয়ালি থানা থেকে বের হতে দেখে। চাচাকে দেখে ও দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে যায়। তাঁতিবাজারে ওর সাথে দেখা হয় মুন্সিগঞ্জ জেলা শিবিরের সভাপতি মুজাহিদ ও আ. রহমানের সঙ্গে। তখন সে মুজাহিদকে প্রশ্ন করে, ‘ভাইয়া তোমরা কি আন্দোলনে যাচ্ছো? আমাকেও তোমাদের সাথে নাও না।’

তিনি আরো বলেন, এভাবে দলের সাথে হাঁটতে হাঁটতে আনাস চাঁনখারপুল পর্যন্ত চলে যায়। গেণ্ডারিয়া থেকে চানখাঁরপুল প্রায় ছয়-সাত কিলোমিটার, পুরো রাস্তা সে হেঁটে হেঁটে গেছে। তারপরে চানখাঁরপুলের বার্ন হাসপাতালের ঠিক উল্টো পাশে ওদের সাথে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। প্রথমে ওর গায়ে ছররা গুলি লাগে।

তারপরে ওরা গলির ভেতরে ঢুকে যায়। ওই যে ভিডিও দেখেছেন না, শুয়ে-বসে এপিবিএন সদস্যরা গুলি করছিল। যাদেরকে তখন অফিসাররা বাহবা দিচ্ছিল, তাদেরই একটি গুলি এসে ওর গায়ে লাগে।’

আশেপাশের বিল্ডিংয়ের বেশ কয়েকজন শহিদ আনাসের শেষ সময়ের ভিডিও করেন। একটা ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁর নিথর দেহ গলির মধ্যে পড়ে আছে। সেই ভিডিও ধারণের সময় ঠিক ১২:৪২ মিনিট। এই ভিডিওটি ঘটনার একমাস ২৯ দিন পরে ফায়জে রাব্বি নামক পাশের বিল্ডিংয়ের একজন আনাসের পিতাকে সরবরাহ করেন।

আন্দোলনে যাওয়ার সময়ে আনাসের পকেটে তিনশ’ টাকা ছিল। আরবিতে ‘আল্লাহু’ লেখা একটি নেমপ্লেট সবসময় বুকে রাখতেন তিনি। যেটা শাহাদাতের পরেও তার বুক পকেটে পাওয়া গেছে। ছোট্ট একটা নোকিয়া ফোন ছিল পকেটে। সিম ছিল না বিধায় সে মোবাইল দিয়ে কল করা যেত না। খেলনা হিসেবে মোবাইলটা কাছে রাখতেন আনাস। মোবাইলের কন্ট্যাক্টে বাবা-মাসহ তিন-চারজনের নম্বর ছিল। সেখান থেকে নম্বর নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৌরভ সর্বপ্রথম একটা পনেরো মিনিটে শহিদের মাকে ফোন দেয়। তাড়াতাড়ি স্যার সলিমুল্লাহ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে যেতে বলে।

শহিদের পিতা বলেন, ছেলের চিঠি দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। ভাবলাম, আমার সন্তান এভাবে বের হয়ে গেলো! আমি কীভাবে কাপুরুষের মতো ঘরে বসে থাকি? সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিলাম কবরস্থানে গিয়ে মা’র কবরে শেষ বিদায় নিয়ে আমিও বের হবো। আর ঠিক ওই সময়ে দেখি ওর মায়ের ফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসছে। কয়েকবার ফোন আসল ওই নম্বর থেকে। প্রথমে ভেবেছিলাম, আনাসের হয়তো শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে।

কারণ ছোটবেলা থেকেই শ্বাসকষ্টের রোগ ছিল ওর। তাই আমরা মনে করেছি দৌড়াদৌড়ির মধ্যে শ্বাসকষ্ট হয়েছে। ওর মাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি আমরা একটা অটো রিকশা নিয়ে হাসপাতালে যাই।

হাসপাতালে ওর লাশ গুম করার জন্য বা বেওয়ারিশ হিসেবে নিয়ে যাওয়ার জন্য আনসাররা অনেকবার চেষ্টা করে। কিন্তু সৌরভরা সবাই মিলে বলে, ‘এই তো তারা চলে এসেছে। তার গার্ডিয়ান চলে আসছে। ও বেওয়ারিশ না।’ এগুলো বলে অনেক কষ্টে ওর লাশটা রেখে দেয়, নিতে দেয়নি।

কান্না জড়ানো কন্ঠে তিনি বলতে থাকেন, প্রথমে হাসপাতালের সামনে আহতদের মধ্যে একজনকে ঠিক আনাসের মতো মনে হচ্ছিল। আমি তাকে জড়িয়ে ধরি। তখন ওর সঙ্গীরা বলে, ‘এইখানে না। ওই যে ভেতরে কেচি গেটের পাশে।’ আমি যখনই শুনি কেচি গেট, তখনই একপ্রকার বেহুঁশ হয়ে যাই। কারণ আমি তো জানি, কেচি গেটের পরেই হল মর্গ। তারপর গিয়ে দেখি আমার আদরের দুলালটার নিথর দেহ পড়ে আছে। পুলিশ মাত্র এক মিনিট সময় দেয় আমাদের। বলেছে এ সময়ের মধ্যেই মরদেহ বের করে নিয়ে আসতে হবে। ওর লাশটা আমরা কোলে করে নিয়ে বের হয়ে যাই। কোন সিএনজি/রিকশা কিচ্ছু পাইনি, চারিদিকে দেখি শুধু আতঙ্ক। কোনমতে একটা রিকশা পেয়ে ওর রক্তাক্ত দেহটা কোলে নিয়েই রওনা হলাম। অনেক ভয়ে ভয়ে আসতেছি। দেখি বংশাল থানা জনতা ভাঙচুর করেছে। পথে সাংবাদিকরা আমাদেরকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করেছে। আমরা কথা বলতেছি, তখন এক রিকশাওয়ালা মামা বলতেছে ‘এই ছেলেটাকে চাঁনখারপুলে আমার সামনে গুলি করেছে।’

শহিদ আনাসের পিতার সাথে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস’র এই প্রতিনিধির কথা হয় গত ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে। সাথে ছিলেন শহিদের মামা আফিয়াত হোসেন ইফতি (২১)। যিনি ছিলেন শহিদ আনাসের সর্বক্ষণের এবং সব কাজের সঙ্গী। কিন্তু ঐদিন সে বাসা থেকে না বলে যাওয়াতে মামাকেও বলে যায়নি, যদি মামা না করে।

তিনি বলতে থাকেন, ‘আমাদের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরে। সেখান থেকে আমরা স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসি আমার দাদার সময়ে। আহসান মঞ্জিলের পাশে নবাবদের যে রংমহল ছিল, সেখানে আমার জন্ম। ৩৫ বছর আগে ছয়/সাত বছর বয়সে আমার বাবা নূর মিয়া খান মারা যান। তারপর আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাদেরকে বড় করেন। মা গত বছর এই আগস্টের ৩০ তারিখেই মারা গেছেন। মায়ের কবরে অর্থাৎ আনাসের দাদির কবরেই ওকে আমরা দাফন করি। বাদ আছর ধূপখোলা মাঠে জানাজা শেষে জুরাইন কবরস্থানে তার শেষ শয্যা হয়।’

শোকে কাতর আনাসের মা বলেন, ওকে কখনো বকা দিলে ও মাথা নিচু করে রাখতো। এত ভদ্র ছিল আমার ছেলেটা। কোন কারণে অপরাধ করলেও কখনো মিথ্যা কথা বলে নাই। জানে মাইর খাবে, তারপরও বলে নাই।

ছোটবেলায় মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলাম। কান্নাকাটি করতো। তাই এক বছর পরে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। খুব দায়িত্ববান ছিল। সকালে নাস্তা এনে সবাইকে খাওয়াইতো। আমি রুটি বানাতে পারতাম না। তাই সকালে হোটেল থেকে রুটি কিনে আনাতাম। টিফিনের জন্য ২০ টাকা দিতাম। সে ওইখান থেকে টাকা বাঁচিয়ে মাত্র একটা বিস্কুট আর পানি খেয়ে থাকতো। সন্ধ্যা থেকে অনেক রাত পর্যন্ত পড়তো। কখনো মুখ ফুটে বলতো না যে, আমার ক্ষুধা লেগেছে। খুব বেশি ক্ষুধা লাগলে শুধু বলতো, ‘তোমরা খাবা না?’ খাওয়ার পরে থাল বাসনগুলো পর্যন্ত নিজে ধুয়ে রাখতো, যাতে আমার কষ্ট কমে।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন,  ‘আমার যাদুটা নিয়মিত নামাজ পড়তো এবং নামাজ শেষে আমাদের সাথে নিয়ে একসাথে দোয়া করতো। মাঝে মাঝে এত লম্বা দোয়া করতো, আমরা পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে যেতাম।’

যে ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক কাপ চা পর্যন্ত কোনদিন খায়নি, সেই ছেলের এরকম মৃত্যুতে এলাকাবাসীও কেঁদেছে।

ওর লাশ নিয়ে এলাকার মানুষ মিছিল করেছে। মহল্লায় স্বৈরাচারের দোসরদের একটি ক্লাব ঘর ছিল। ক্ষুদ্ধ মানুষ ক্লাব ঘরটি ভেঙে ফেলেছে।

পলাশ বলেন, আমাদের নিকেতনের সড়কটির নাম ছিল ‘দিননাথ সড়ক’। সবাই মিলে ভালোবেসে তাদের ছোট আনাসের জন্য সড়কটির নাম পাল্টিয়ে রেখেছে ‘শহীদ আনাস সড়ক’। নিকেতনের সভাপতি জনাব আলতাফ হোসেন হজ্জ থেকে এহরামের কাপড় নিয়ে এসেছিলেন। সেই কাপড় তিনি আনাসের জন্য দিয়ে দেন এবং এহরামের কাপড় দিয়ে তাঁকে দাফন করা হয়।’

আনাসের পিতা বলেন, ‘জুরাইন কবরস্থানে আমরা যখন ওকে দাফন করতে যাই, তখন ফরম ফিলাপ করতে বলা হয়। সে ফরমে মৃত্যুর কারণ লিখতে হয়। কবরস্থান কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই পুলিশের গুলিতে মৃত্যু, এটা লিখবে না। তারা বলে, লেখেন এক্সিডেন্টে বা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। আমরা বললাম, ‘কেন আমরা এটা লিখবো’? এই হল ফ্যাসিবাদের অবস্থা! তারা কবরস্থান কর্তৃপক্ষকে পর্যন্ত বলে দিয়েছে, কোনভাবেই যেন পুলিশের গুলিতে মৃত্যু লেখা না হয়। ঘটনার দিন তো আর ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় পাইনি। ছেলের লাশ দেখে কি আর মাথা ঠিক ছিল? তারপরে সাত তারিখে আমরা ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে যাই। কিন্তু কেউ দিতে চায় না।

সবাই ভয় পায় পুলিশী ঝামেলার। পরে একজন সিনিয়র ডাক্তার নিজে দায়িত্ব নিয়ে সার্টিফিকেট দেয়।’

তিনি বলেন, ভাই, আমার জীবনে সোমবার দিনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের ঈদের দিন সোমবার ওর জন্ম। ওর শাহাদাতের দিন ৫ আগস্ট ছিল সোমবার। ওর চলে যাওয়ার পর আমি প্রথম বেতন পেয়েছিলাম, সেটাও গ্রহণ করেছি সোমবার। আজকে ১৬ই ডিসেম্বর আপনাদের সাথে কথা বলতেছি, আজকেও সোমবার।’

ছোটখাটো ব্যবসা করতেন শহিদের পিতা। লকডাউনের পরে ব্যবসার মন্দায় এক প্রকার বেকার ছিলেন। এই ঘটনার পরে ফ্রান্স প্রবাসী অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য সরাসরি তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং তাদের পরিবারের দায়িত্ব নেন। তিনি পরে তার এক বন্ধুর গুলশানের হেড অফিসে আনাসের পিতাকে পাঠান। পিনাকীর সুপারিশে একটা বেসরকারি গ্রুপ অব কোম্পানিতে আনাসের পিতার চাকরি হয়। ওখান থেকে ২০ হাজার টাকা মাসে পান। তা দিয়েই তাদের দিন চলে যাচ্ছে বলে জানালেন তিনি।

মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওর নানা বাদী হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নামে মামলা করেছেন। এর মধ্যে চারজন আছেন একদম প্রত্যক্ষদর্শী।

সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকে টাকা দিতে চেয়েছে। কিন্তু আমি কারো টাকা গ্রহণ করিনি। আমি শুধু জামায়াতে ইসলামের এক লক্ষ, খোকা ফাউন্ডেশনের এক লক্ষ এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছি।